শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • কিশোরগঞ্জের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা গ্রেফতার
অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

কিশোরগঞ্জের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জের সাবেক ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা গ্রেফতার

কিশোরগঞ্জ, ১৮ জানুয়ারি, এবিনিউজ : সরকারের উন্নয়নমুলক কাজের জন্যে ভুমি অধিগ্রহণের নামে জালজালিয়াতি ও প্রতারণার মাধ্যমে সরকারের পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাত করেছেন কিশোরগঞ্জ থেকে বদলী হওয়া ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা মো. সেতাফুল ইসলাম। আত্মসাতের এ বিষয়টি নজরে আসায় দুর্নীতি দমন কমিশনের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহের সহকারী পরিচালক রাম প্রসাদ ম-ল কিশোরগঞ্জ মডেল থানায় গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় একটি মামলা দায়ের করেন।

পিরোজপুর জেলা সদর থেকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যার দিকে দুদকের একটি টিম তাকে গ্রেফতার করে। এদিকে সেতাফুল ইসলাম দায়িত্বে থাকাকালীন কিশোরগঞ্জের ভুমি মালিকরা নানানভাবে প্রতারিত হয়েছেন। অনেক ভূমি মালিক ভুমির টাকা পাননি। এতে কিশোরগঞ্জের ভুমি মালিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

বর্তমান সরকার কিশোরগঞ্জের দুর্গম হাওর এলাকাসহ পুরো জেলার বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য জমি অধিগ্রহণ করে উন্নয়ন কার্যক্রম করে যাচ্ছে। জমি অধিগ্রহণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। এ জন্যে জেলা প্রশাসনের কার্যালয়ে অগ্রিম চেক পাঠাতে হয়। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলাম ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকদের ক্ষতিপূরণ না দিয়ে তা আত্মসাত করেন। আবার কিছু ভুমি মালিকদেরকে টাকা দিতে মোটা অংকের ঘুষ নিয়েছেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে আরও জানা গেছে, গত ৫ ডিসেম্বর জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার স্বাক্ষরে ক্ষতিপূরণের পাঁচ কোটি টাকার একটি চেক ভূমি অধিগ্রহণ শাখার কর্মচারীদের বেতন-ভাতা বাবদ জমা দেওয়া হয়। এরপর গত ৬ ও ৭ ডিসেম্বর দুই দফায় ৪ কোটি ৯৪ লাখ টাকা উত্তোলন করেন সেতাফুল ইসলাম। বাকি ৬ লাখ টাকা অনলাইনের মাধ্যমে বাজিতপুর সোনালী ব্যাংক থেকে তুলে নেন। অপরদিকে জেলা হিসাব রক্ষণ অফিস থেকে ১০ কোটি টাকার অপর একটি চেক সই করে তা ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তার কাছে পাঠানোর অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু পাঁচ কোটি টাকা আত্মসাতের জালিয়াতি ধরা পড়ায় ওই চেকটি জেলা প্রশাসনের হেফাজতে নেওয়া হয়।

গ্রেফতারকৃত ভুমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা সেতাফুল ইসলামকে কিশোরগঞ্জ থেকে সম্প্রতি পিরোজপুর জেলায় বদলী করা হয়। পরে পিরোজপুর থেকে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেবে ভোলা জেলায় বদলী করলেও তিনি ভোলায় যোগদান করেননি। টাকা আত্মসাতের ঘটনাটি সংশ্লিষ্টদের নজরে আসার পর তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে ওএসডি করা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ময়মনসিংহের উপ পরিচালক মো. জাহাঙ্গীর আলমের নেতৃত্বে তদন্ত দল প্রাথমিক তদন্তে পাঁচ কোটি টাকা তুলে নেয়ার প্রমাণ পেয়েছে। আত্মসাতের টাকা পরিমাণ আরও বেশি হতে পারে।

এদিকে ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিকরা অভিযোগ করেছেন, সেতাফুল ইসলাম কিশোরগঞ্জের ভুমি অধিগ্রহন অফিসটি দুর্নীতির স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছিলেন। জমি অধিগ্রহণের প্রতি লাখে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়ে টাকা আনতে হয়েছে। অনেকেই জমির মূল্য এখনো পায়নি। এতে ভুমি মালিকদের মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে।

দুর্নীতির এ বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসকসহ প্রশাসনের উর্ধবতন কর্মকর্তারা ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি। এত বিপুল পরিমাণ অংকের চেক দেওয়ার আগে জেলা প্রশাসক বা সংশ্লিষ্ট কাউকে কেন অবহিত করলেন না, এমন প্রশ্নের জবাবে জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো, সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপরের নির্দেশ ছাড়া ক্যামেরার সামনে কথা বলা যাবে না।

কিশোরগঞ্জ সোনালী ব্যাংকের সহকারী জেনারেল ম্যানেজার মো. মাহবুবুল ইসলাম খান এ বিষয়ে বলেন, একজন উর্ধ্বতন সরকারি কর্মকর্তা পুলিশ এস্কর্টসহ তার নিজ হিসাবের টাকা তুলেছেন, তাই যাচাই বাছাইয়ের প্রয়োজন মনে করিনি। যদি বিয়ারার চেক হতো, তাহলে আমরা খোঁজখবর নিতেন।

জেলা প্রশাসক মো. আজিমুদ্দিন বিশ্বাস এ প্রসঙ্গে বলেন, জেলা প্রশাসক হিসেবে আমি নিজেই কার্যালয়ের সকল বিষয় তদারকি করি। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণের চেকের বিষয়টি সংশ্লিষ্ট ভূমি অধিগ্রহণ কর্মকর্তা নিজেই দেখেন বলে তিনি জানান। এ ব্যাপারে তিনি ক্যামেরার সামনে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ মডেল থানার ওসি জানান, এ ঘটনায় সাবেক ভ’মি কর্মকর্তাকে আসামী করে দুদুক থানায় মামলা করেছে। মামলাটি দুদকের তদন্ত টিম তদন্ত করবেন।

এবিএন/শাফায়েতুল ইসলাম/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত