চকরিয়া (কক্সবাজার), ১৯ জানুয়ারি, এবিনিউজ : কক্সবাজারে গরুচোরের উপদ্রব থামছেইনা। প্রতিদিনই জেলার আট উপজেলার কোথাও না কোথাও গরু মহিষ চুরি হচ্ছে। গরুর সালিক সজাগ থাকলে চোর সিন্ডিকেট সশস্ত্র হামলা চালিয়ে ডাকাতি করছে গরু। পুলিশ ও জনতা মাঝে মধ্যে গরু উদ্ধার ও চোর পাকড়াও করলেও গরু চোরের দাপট থামছেইনা।
এমনকি জনতার সহায়তায় জনপ্রতিনিধিরা গরু চোর পাকড়াও করে পুলিশে সোপর্দ করলে ওই চোরদের তথ্য সংবাদকর্মীদের দিতে অনিহা প্রকাশ করে পুলিশ। আবার ছিচকে চোর ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় তাদের গড়ফাদাররা।
চকরিয়ার ডুলাহাজারা ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বলেছেন, বুধবার রাতে আমার এলাকা থেকে চারটি গরু চুরি হয়। চুরি হওয়া গরুর মধ্যে একটি পাওয়া গেলেও তিনটির খদিস মেলেনি। ওই গরু খোঁজতে গিয়ে গরু গুলো না পেলেও গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে জনতার সহায়তায় চিহ্নিত দুই জন গরুচোর পাকড়াও করে চোরাই ৫টি মোবাইলসেটসহ চকরিয়া থানার পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়। ওই দুই চোর থানা হাজতে রয়েছে।
তাদের নাম পরিচয় জানতে ধানার উপপরিদর্শক এনামুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি প্রতিবেদককে বলেন যে দুইজনকে পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে তাদের সাথে গরু ছিলনা। তাই তাদের চোর বলা যাচ্ছেনা।
সম্প্রতি ফাঁশিয়াখালী থেকে চোরাই ৪টি গরুসহ দুই চোরকে ধরে গণধোলাই দিয়ে পুরিশে সোপর্দ করা হয়েছিল ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে। আটক ওই চোররা জিজ্ঞাসাবাদে চেয়ারম্যানের কাছে স্বীকার করে জনৈক নবী হোছন প্রকাশ নইব্ব্যা চোরার কাছে গরু গুলো নিয়ে যাচ্ছিল। ওই স্বীকারোক্তিসহ লিখিত এজাহার সহকারে চোর ও গরু থানায় সোপর্দ কালে চোরের গড়ফাদার নইব্ব্যা চোরা তৎকালীন ওসি জহিরুল ইসলাম খানের বাসায় খাওয়া-দাওয়ায় মত্ত ছিল।
সুরাজপুর-মানিকপুর থেকে কয়েক রাউন্ড গুলি করে গরু ডাকাতির ঘটনা ঘটে বলে চেয়ারম্যান আজিমুল হক আজিম নিশ্চিত করেন।
কাকারা থেকে পৃথক তিনটি চোরাই গরু উদ্ধার হলেও আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। বদরখালী, পশ্চিম বড় ভেওলা, বিএমচর, পূর্ব বড় ভেওলা, সাহারবিল, কোনাখালী, চিরিঙ্গা, কৈয়ারবিল থেকে এক বছর পূর্বে অর্ধশতাধিক গরু-মহিষ চুরি হলেও বেশীরভাগ পাওয়া যায়নি। এই সময়ে পেকুয়া উপজেলার ৭ইউনিয়ন থেকে চুরি হয় ১১টি গরু মহিষ। রামু ও সদর উপজেলার ঈদগাঁও থেকে চুরি হয় ৪০টি বেশী গরু। উখিয়া-টেকনাফ-মহেশখালী থেকে চুরি হয় শতাধিক গরু মহিষ।
একাধিক সুত্র জানায়, জেলায় ছোট-বড় আটার-বিশটি গরু-মহিষ চোর সিন্ডিকেট রয়েছে। ওই চোর সিন্ডিকেটের গড়ফাদারের বাড়ি চকরিয়ায়। এই গড়ফাদারের নিকটাত্মীয় জনৈক ব্যক্তি প্রভাশালী চাকরীজীবী হওয়ায় বিভিন্ন তরফ থেকে তদবীরের মাধ্যমে পার পেয়ে যায় আলোচিত এই গড়ফাদার। অথচ তার বাড়ীর থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে চোরাই গরু মহিষ ও পশু জবাইয়ের সরঞ্জাম ছাড়াও তার কাছ থেকে এক সাথে ৮০টি চোরাই ছাগল উদ্ধার হয়েছিল।
এমনকি মাইক্রোবাসে চোরাই গরু তোলে নিয়ে যাওয়ার সময়ও ধরা পড়েছিল। এরপরও এই গড়ফাদার রহস্যজনক কারনে আইনের কাটগড়া থেকে রক্ষা পেয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে দাপটের সাথে। এছাড়া চকরিয়ার গরুচোর সিন্ডিকেট চট্টগ্রাম ও বান্দরবানের আরো বেশক’জন চোরকে দলে ভিড়িয়ে চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, বাঁশখালী, বান্দবানের লামা, আলিকদম ও নাইক্ষ্যংছড়ি থেকেও গরু চুরি করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে।
সূত্রমতে, গত তিন বছরে চুরি হওয়া অসংখ্য গরুর মধ্যে চকরিয়া পুলিশ কর্র্তৃক উদ্ধার করা গরু মহিষের মধ্যে বেশিরভাগ মালিকের কাছে হস্তান্তর করলেও ১১টি গরুসহ হেফাজতকারীদের মোবাইলে ছবি তুলে রেখে সাবেক এসআই কল্লোল চৌধুরী বিভিন্ন ব্যক্তির জিন্মায় দেন। ওই গরুর খদিস মিলছেনা এখন।
চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. বখতিয়ার উদ্দিন চৌধুরী বলেন, আমি চকরিয়া থানায় যোগদানের পর গরু চুরি তেমন হয়নি। গরু চুরির সংবাদ পাওয়া মাত্রই পুলিশ অভিযান চালিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে। ডুলাহাজারা থেকে পাকড়াও করে হস্তান্তর করা দুই ব্যক্তি গরুচোর কিনা জানিনা, তবে দুইজনই পেশাদার চোর বলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা জানায়। তাছাড়া তাদের কাছ থেকে চোরাই মোবাইলও উদ্ধার হয়।
এবিএন/মুকুল কান্তি দাশ/জসিম/এমসি