![বুড়িমারীতে পাথর গুড়ো করা অর্ধ শতাধিক কারখানা বন্ধের চেষ্টা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/21/lalmonirhat-pathor_121724.jpg)
লালমনিরহাট , ২১ জানুয়ারি, এবিনিউজ : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী স্থল বন্দর এলাকায় গড়ে উঠেছে অর্ধ শতাধিক পাথর গুড়ো করা ছোট-বড় কারখানা। কাঁচামাল সহজলভ্য হওয়ায় ওই কারখানা গুলোর ব্যবসা বেশ লাভ জনক হয়ে উঠেছে। কারখানা গুলোতে কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে ওই এলাকার অন্তত ৮ হাজার শ্রমিক। কিন্তু পরিবেশ দূষনের নামে ওই সব কারখানা বন্ধ করে হাজার হাজার শ্রমিককে বেকার করার পায়তারা করছে একটি মহল। শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা তৈরীর পর পাথর গুড়ো করা কারখানা গুলো বন্ধ বা সড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার দাবী তুলেছেন স্থানীয় শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা।
এ ছাড়া গত ১৬ জানুয়ারি পরিবেশ দূষণের অযুহাতে অভিযান চালিয়ে ৬ টি পাথর ভাঙ্গা মেশিন আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। ওই সময় ৪ মালিককে ৮৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। পাটগ্রাম উপজেলা ইউএনও নূর কুতুবুল আলম ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন। ফলে পাথর গুড়ো করা কারখানা মালিক গুলোর মাঝে এক আতংক বিরাজ করছে।
বুড়িমারী স্থল বন্দর এলাকার একাধিক ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রতিবেশী দেশ ভারত ও ভূটান থেকে ১৯৮৮ সাল থেকে শুল্কমুক্ত হয়ে দেশে আমদানি হচ্ছে জিপসাম স্টোন ও লাইম স্টোনসহ ১৮টি পাথরজাত পণ্য। জিপসাম ও লাইম স্টোন গুড়ো করে তৈরি হয় জিপ সার, প্রসাধনী সামগ্রীর কাঁচামাল, পোল্ট্রি ও ফিস ফিড। ভূটানী এসব পাথর ভারত হয়ে দেশে আসছে বুড়িমারী স্থলবন্দর দিয়ে। এসব পাথর গুড়ো করতে স্থানীয় ব্যবসায়ী বুড়িমারীতে ধীরে ধীরে গড়ে তোলেন অর্ধ শতাধিক কারখানা। প্রতিটি কারখানা প্রতিষ্ঠায় কোটি টাকার উপরে মূলধন ব্যয় করতে হয়েছে মালিকপক্ষকে। যেখানে কর্মরত রয়েছেন অন্তত ৮ হাজার শ্রমিক। কাক ডাকা ভোরে শ্রমিকের ঢল নামে বুড়িমারী এলাকায়। এসব শ্রমিকের ঘামে প্রস্তুত গুড়ো পাথর রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের সার, প্রসাধনী সামগ্রী, পোল্ট্রি ও ফিস ফিড কারখানায় চলে যাচ্ছে।
এদিকে ভূটানের ব্যবসায়ীরা পাথর গুড়ো করার কৌশল আয়ত্ব করে তারাও গড়ে তুলেছেন এসব পাথর গুড়ো করার কারখানা। বিগত ২০১৩ সালে ভূটানের ব্যবসায়ীরা বড় পাথর না দিয়ে গুড়ো করা কাঁচামাল পাঠাতে শুরু করে। আগে দৈনিক গড়ে শতাধিক ট্রাক কাঁচামাল আসত। পরবর্তীতে বাংলাদেশের ব্যবসায়ী ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চাপে তা কমে আসে। তবে এখনও দৈনিক ১৫-২০ ট্রাক ভূটানী কাঁচামাল আসছে। ফলে বুড়িমারী স্থলবন্দরে প্রতিষ্ঠিত কারখানাগুলো বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
এছাড়া বুড়িমারী স্থল বন্দর এলাকার বালু উড়ে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে এই অযুহাতে একটি মহল পাথর গুড়ো করা কারখানা গুলো বন্ধের অপচেষ্টা করে আসছে। কারখানা গুলো বন্ধ হলে ওই এলাকার অন্তত ৮ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে। বিষয়টি নিয়ে রাজধানী ঢাকায় গত বছরের ৫ নভেম্বর এনবিআর ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ সম্মেলন হয়েছে। যেখানে দেশি কারখানা ধ্বংস করার পাঁয়তারা চালায় একটি কুচক্রী মহল। মহলটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয় ও এনবিআর কর্তৃপক্ষকে ভুল বুঝিয়ে ভূটানের গুড়ো করা কাঁচামাল আমদানির পাঁয়তারা চালাচ্ছে বলে বুড়িমারী শিল্প মালিক সমিতির নেতাদের দাবি।
বুড়িমারী শ্রমিক আব্দুল হাই ও সাদেকুল ইসলাম জানান, বুড়িমারী স্থল বন্দর এলাকায় হাজার হাজার শ্রমিক কারখানায় নিয়মিত কাজ করে দৈনিক প্রায় ৪-৬শ’ টাকা আয় হয়। যা দিয়ে সংসার ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ যোগানো সম্ভব হচ্ছে। কারখানা বন্ধ হলে তাদের কর্মহীন হতে হবে। দেশি কারখানা ধ্বংস না করতে সরকারের নীতি নির্ধারকদের প্রতি আহবান জানান তারা। যদি কারখানা গুলো বন্ধ করতে হয় তাহলে শ্রমিকদের জন্য বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
[
এসপি মিনারেল কারখানার মালিক আশিকুর রহমান পরাগ জানান, গুণগত মান যাচাই বাচাই করে দেশি কাঁচামাল সংগ্রহ করতে পারছেন পণ্য উৎপাদনকারী কারখানাগুলো। সেক্ষেত্রে পণ্যের গুণগত মানও ঠিক থাকছে। কিন্তু দেশের কারখানা ধ্বংস করে বিদেশের কম মানের কাঁচামালে প্রস্তুত পণ্যের গুণগত মান কতটা ঠিক থাকবে তা ভেবে দেখা দরকার। এছাড়াও হাজার হাজার দেশি শ্রমিককে বেকার করে বিদেশি কাঁচামাল আমদানি করলে দেশে বেকারত্ব বেড়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
বুড়িমারী শিল্প মালিক সমিতির সভাপতি হাবিবুর রহমান পবন জানান, কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে প্রতিষ্ঠিত কারখানা ধ্বংস করে বিদেশি কাঁচামাল আমদানি করলে দেশের অর্থনীতিতে আঘাত হানবে। বেকার হয়ে পড়বে দেশের কয়েক হাজার শ্রমিক। দেশের শিল্প কারখানা রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নূর কুতুবুল আলম বলেন, বুড়িমারী স্থলবন্দর মহাসড়কের পাশে মেশিনের মাধ্যমে পাথর ভাঙ্গা হয়। এতে পাথরের গুড়া বাতাসে মিশে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। পাথর ভাঙ্গার সময় পাথর ও আশপাশের এলাকায় পানি ব্যবহার করার নির্দেশ দেয়া হলেও অনেক ব্যবসায়ী তা অমান্য করছেন। আমরা তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিচ্ছি। পাথর গুড়ো করা কারখানা গুলো বন্ধের কোন পরিকল্পনা এখনো নেয়া হয়নি। তবে সেগুলো জনবসতি নয়, এমন এলাকায় সড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এবিএন/আসাদুজ্জামান সাজু/জসিম/নির্ঝর