![সড়ক দুর্ঘটনায় ৬ মুসল্লির নিহত হওয়ার ঘটনায় সুনামগঞ্জে শোকের ছায়া](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/23/sunamgong@abnews_122092.jpg)
সুনামগঞ্জ, ২৩ জানুয়ারি, এবিনিউজ : বিশ্বইজতেমা ঢাকা থেকে ছেড়ে বাস যোগে বাড়ি ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় ছয় মুসল্লি নিহত হওয়ার ঘটনায় সুনামগঞ্জের শোকের মাতম চলছে। বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন তাবলীগ জামাতের সংগীরা। গত সোমবার দুপুর ১টার দিকে একের পর এক লাশবাহী গাড়ি সদর উপজেলার কাঠইর এলাকায় পৌঁছালে এক হৃদয় বিদারক দৃশ্যের অবতারনা হয়।
শেষ বারের মতো দেখতে নিহতদের বাড়িতে হাজার হাজার মানুষের ভীড় করে এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান। লাশের এ দীর্ঘ মিছিলে আত্মীয় স্বজন, পরিবার পরিজন ও এলাকার মানুষের কান্না আকাশ বাতাস ভাড়ী হয়ে উঠে। হাজারো জনতার চোখের অশ্রু ঝড়তে ঝড়তে একই সাথে ৪টি লাশের দাফন সম্পন্ন হয়। লাশ দাফনের পরেই একই এলাকার কলাইয়া গ্রামের দেলোয়ার নামে আরেক মুসল্লির হাসপাতাল থেকে আসে মৃতের খবর। তখনই বিরহের দৃশ্যের অবতারণা হয়।
এদিকে একই দিনে ইজতেমা বড়ি ফেরার পথে অপর একটি গাড়ি থেকে নামার সময় দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আস্তমায় গাড়ির চাপায় সুরুজ মিয়া (৬৫) নিহত হন । এভাবেই মৃতের সংখ্য দাঁড়ালো ৬ জনে। নিহত আবু বক্করের বড় ভাই নোয়াগাঁও গ্রামের জয়নালম আবেদীন বলেন, তার ভাই কাঠইর ইউনিয়ন তাবলীগ জামায়াতের আমির ছিলেন। তার নেতৃত্বে এলাকার মুসুল্লিরা টঙ্গীর দ্বিতীয় দফা বিশ্ব ইজতেমার আখেরি মোনাজাত শেষে রবিবার বাসে করে বাড়ি ফিরছিলেন। সিলেট সড়ক দুর্ঘটনায় তিনিসহ চারজন মারা যান। আবু বক্কর তিন সন্তানের জনক ছিলেন। নুরপুর গ্রামের আলম বাদশা বলেন, বাসটি ৩০ জন যাত্রী নিয়ে সুনামগঞ্জে আসছিল।
ভোরে কুয়াশা বেশি থাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় পড়ে তারা মারা যান। চান্দেরনগর গ্রামের মো. লোকমান হোসেন বলেন, এঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ট্রাক ও বাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে কাঠইর ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের একজন ইউপি সদস্য আব্দুল খালিক মারা যান। ইউপি চেয়ারম্যান মুফতি শামছুল ইসলাম বলেন, আব্দুল খালেক একজন সজ্জন ও ধর্শপরায়ন জনপ্রতিনিধি ছিলেন। তাঁকে হারিয়ে আজ আমি নি:স্ব। এবং অপর চারজন ব্যক্তিও আমার ইউনিয়নের। তারা সকলেই মহানবীর পথ দেখানো পথেই চলতেন এবং অন্যকেও সৎ কাজের আদেশ দিতেন। আল্লাহ তাদের সবাইকে শাহাদতের মর্যাদা দান করুন। বিশিষ্ট মাওলানা আনোয়ার হোসেন বলেন, বাসের যাত্রীরা সবাই ইজতেমার আখেরি মোনাতাজ শেষে বাড়ি ফিরছিলেন। সড়ক দুর্ঘটনায় তারা মারা যান। নিহতরা সবাই ধর্মপ্রাণ মুসুল্লি ছিলেন।
শাখাইতি গ্রামের নয়ন তালুকদার বলেন, গত সোমবার আসর এর আজানের পর গোলগাও গ্রামে চারজনের জানাজার শেষে তাদের নিজ নিজ গ্রামের গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। প্রসঙ্গত: ঢাকায় দ্বিতীয় পর্বে বিশ্ব ইজতেমা থেকে ফেরার পথে সোমবার সকালে সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রশিদপুর সাত মাইল এলাকায় বাস-ট্রাক সংঘর্ষে সুনামগঞ্জের ইজতেমাগামী চারজন মুসল্লী নিহত হন। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন। আহতদের মধ্যে ঐ দিন বিকেলে হাসপাতালে একই ইউনিয়নের কলাইয়া গ্রামের দেলোয়ার হোসেনও মারা গেছেন।
এবং ইজতেমা থেকে অপর একটি গাড়ি করে আসা দক্ষিণ সুনামগঞ্জের আস্তমা গ্রামের সুরুজ মিয়া গাড়ি ধক্কায় মারা যান। সিলেটের রশিদপুরের দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার নোয়াগাঁও গ্রামের আবু বক্কর (৫০), তিনি নোয়াগাঁও গ্রামের তাবলিগ জমাতের আমীর। ২ ছেলে ও ১ মেয়ের জনক তিনি। গোলেরগাঁও গ্রামের আকবর আলী (৫০), ৫ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক তিনি। কাঠইর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য উলুতুলু গ্রামের আব্দুল খালিক (৫০), ৪ মেয়ে ও ১ ছেলের জনক তিনি এবং কলাইয়া গ্রামের আব্দুল জহুর (৫০), তিনি ২ ছেলে ও ৩ মেয়ের জনক। তাবলিগ জমাতের এই কাফেলায় ৪৮ জন ইজতেমা ফেরত যাত্রী ছিলেন।
এবিএন/অরুন চক্রবর্তী/জসিম/নির্ঝর