বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • বিলাইছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল

বিলাইছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল

বিলাইছড়িতে হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল

খাগড়াছড়ি, ২৪ জানুয়ারি, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলায় মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের প্রতিবাদে তাৎক্ষনিক হিল উইমেন্স ফেডারেশনের বিক্ষোভ মিছিল করেছে। রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ফারুয়ায় সেনাসদস্য কর্তৃক এক কিশোরী ধর্ষিত, ২ জনকে গ্রেফতার, ৫ জনকে মারধর, ৪০টি ঘরবাড়ি তল্লাসী করেছে বলে ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট(ইউপিডিএফ) সমর্থিত হিল উইমেন্স ফেডারেশন(এইচডব্লিউএফ) ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) দুইটি সংগঠন’র অভিযোগ।

রাঙামাটির বিলাইছড়িতে ফারুয়া সেনা সদস্য কর্তৃক এক মারমা কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণের প্রতিবাদে খাগড়াছড়িতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছে হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখা। মঙ্গলবার(২৩ জানুয়ারি ২০১৮) বেলা ২.৩০টার সময় খাগড়াছড়ি সদর উপজেলা কার্যালয়ের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। মিছিলটি স্বনির্ভরে শহীদ অমর বিকাশ সড়কে গিয়ে সেখানে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর খাগড়াছড়ি মহিলা কলেজ শাখার সাধারণ সম্পাদক এন্টি চাকমার সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বৃহত্তর পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ(পিসিপি)-এর খাগড়াছড়ি জেলা শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি তপন চাকমা ও হিল উইমেন্স ফেডারেশন-এর খাগড়াছড়ি জেলা সভাপতি দ্বিতীয়া চাকমা।

সমাবেশে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রামে অঘোষিত সেনাশাসন পাহাড়িদের জীবনকে অতিষ্ট করে তুলেছে। এখানে নিয়োজিত সেনাবাহিনীর একটি চক্র পাহাড়িদের ভূমি বেদখলের জন্য সেটলারদের সাহায্য করছে, অন্যদিকে পাহাড়ি নারীদের ধর্ষণ-খুন-গুম করছে। তথাকথিত “শান্তি-সম্প্রীতি-উন্নয়নের” কথা বলে পাহাড়িদের ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র চলছে বলে বক্তারা অভিযোগ করেন।

বক্তারা অবিলম্বে মারমা কিশোরীকে ধর্ষণের সাথে জড়িত সেনা সদস্যদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। হিল উইমেন্স ফেডারেশন খাগড়াছড়ি জেলা শাখা দপ্তর সম্পাদক জ্ুঁই চাকমা স্বাক্ষরিত প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।

ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত সোমবার(২২জানুয়ারি) ২০১৮খ্রি: দিবাগত রাত আনুমানিক ১:৩০ টায় রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের ৩নং ওয়ার্ডের অরাছড়ি গ্রামে এক মারমা কিশোরী(১৭) ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের সেনাসদস্য কর্তৃক নিজ বাড়িতে ধর্ষণের শিকার হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি(পিসিজেএসএস) সহ তথ্য ও প্রচার সম্পাদক সজীব চাকমা’র ফারুয়া সেনা সদস্য কর্তৃক কিশোরী ধর্ষন, অন্যায় আটক ও মারধরে তীব্র নিন্দা ও ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করার দাবি জানিয়েছে।

এলাকাবাসী ও পরিবার সূত্রে জানা গেছে, সুবেদার মো: মিজান এর নেতৃত্বে ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনাসদস্য ঐ সময় উক্ত অরাছড়ি গ্রামে আসে। এসময় সেনাদলের দুই সদস্য তল্লাশীর কথা বলে উক্ত ধর্ষিতা কিশোরীর বাড়িতে প্রবেশ করে কিশোরীর বাবা-মাকে বাড়ির বাইরে আসতে বাধ্য করে। এরপর সেনাসদস্যদের মধ্যে একজন দরজায় অস্ত্র নিয়ে থাকে, অপরজন উক্ত মারমা কিশোরীকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। ধর্ষণের সময় কিশোরী চিৎকার করলেও অস্ত্রের মুখে বাবা-মা এগিয়ে আসতে পারেনি।

এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে ধর্ষণের ঘটনাটি সেনাদলের কম্যান্ডার সুবেদার মো: মিজানকে জানানো হলেও সুবেদার মিজান এব্যাপারে নিজে তদন্ত করে শান্তি দেবেন বলে জানান। তবে তিনি এব্যাপারে কাউকে না জানানোর নির্দেশ দেন। আর যাওয়ার সময় পরদিন সকালে এলাকার মেম্বার, কার্বারী ও হেডম্যানকে হুমকি স্বরুপ ফারুয়া সেনা ক্যাম্পে গিয়ে দেখা করার নির্দেশ দেন।

বিকেল পর্যন্ত জানা গেছে, সোমবার(২২ জানুয়ারি) সকালে স্থানীয় মেম্বার, কার্বারী ও হেডম্যানগণ ফারুয়া সেনা ক্যাম্পে গেছেন এবং এখনও পর্যন্ত ফিরে আসেননি। অপরদিকে এলাকাটি দুর্গম হওয়ায় এবং সেনাবাহিনীর ভয়ে ধর্ষিতার বাবা-মা ও আত্মীয় স্বজনরা এখনও চিকিৎসার জন্য ধর্ষিতাকে কোন হাসপাতালে নিয়ে যেতে পারেননি।

অপরদিকে ফারুয়ার তক্তানালায় অন্যায় ভাবে সেনাবাহিনী কর্তৃক ২৪টি ঘরবাড়ি তল্লাসী, ৫ জনকে আটক করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত সোমবার(২২ জানুয়ারি) ২০১৮ রাত আনুমানিক ১২:০০ টা থেকে ১:০০টায় তক্তানালা ক্যাম্পের একদল সেনা কর্তৃক বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নের তক্তানালা দক্ষিণ পাড়ায় তল্লাসী অভিযান চালানো হয়। এতে সেনা সদস্যরা আদিবাসী(জুম্ম)দের ২৪টি ঘরবাড়িতে অন্যায় ও অযথা ভাবে ব্যাপক তল্লাসী চালায়। তল্লাসী চলাকালে ঘরের জিনিষপত্র তছনছ করে দেয় সেনা সদস্যরা।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির সদস্যরা কোথায়, তারা কোথায় থাকে দেখিয়ে দিতে হবে ইত্যাদি জিজ্ঞাসাবাদ করে হুমকি প্রদান করে। সেনা সদস্যরা যাদের ঘরবাড়ি ব্যাপক তল্লাসী করেছে, তাদের ৮জন গ্রামবাসীর মধ্যে সাপ্যা মারমা ছেলে বাতোয়াই মারমা(৪৮),তজন মারমা(১৮), জ্যোতিবাবু তঞ্চঙ্গ্যা(২০), অনুজ কুমার তঞ্চঙ্গ্যা ছেলে দয়াল তঞ্চঙ্গ্যা(১৮), ফুলসে মারমা ছেলে পুলক মারমা (২৪), শুন্য চক্র তঞ্চঙ্গ্যা ছেলে অনিল তঞ্চঙ্গ্যা(৩০), কেগেচ্চা তঞ্চঙ্গ্যা ছেলে ভরত চন্দ্র তঞ্চঙ্গ্যা(৩৫), ভবমোহন তঞ্চঙ্গ্যা ছেলে বেল কুমার তঞ্চঙ্গ্যা(৩৩)।

উল্লেখিত গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রথম ৫জনকে, যথাক্রমে বাতোয়াই মারমা, তজন মারমা, জ্যোতিবাবু তঞ্চঙ্গ্যা, দয়াল তঞ্চঙ্গ্যা ও পুলক মারমা প্রমুখ গ্রামবাসীদেরকে আটক করে ক্যাম্পে নিয়ে যায়। অহেতুক জিজ্ঞাসাবাদ ও হয়রানি করার পর সকালে তাদেরকে ছেড়ে দেয় বলে জানা যায়।

অন্যদিকে ফারুয়ায় পিসিজেএসএস দুই যুব সমিতির সদস্য সেনাবাহিনীর নির্যাতন ও মিথ্যা মামলার শিকার হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে। গত রোববার(২১ জানুয়ারি) ২০১৮ দিবাগত রাত আনুমানিক ৩টায় রাঙ্গামাটি জেলাধীন বিলাইছড়ি উপজেলার ফারুয়া ইউনিয়নে ফারুয়া সেনা ক্যাম্পের একদল সেনাসদস্য পার্বত্য চট্টগ্রাম যুব সমিতির এগোজ্যাছড়ি গ্রাম কমিটির সদস্য নতুন বাবু তঞ্চঙ্গ্যা(৩৪) পীং গন্ধরাজ তঞ্চঙ্গ্যা ও ভন্দ তঞ্চঙ্গ্যা(৩৩) পীং ফুলশমনি তঞ্চঙ্গ্যাকে নিজ বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে ক্যাম্পে আটক করে রাখে।

সেনাসদস্যরা ফারুয়া সেনা ক্যাম্পে আটকাধীন অবস্থায় নতুন বাবু তঞ্চঙ্গ্যা ও ভন্দ তঞ্চঙ্গ্যাকে ব্যাপক মারধর করে এবং নানা ভিত্তিহীন প্রশ্ন করে মানসিক নির্যাতন চালায়। এরপর ঐদিন দুপুরের দিকে সেনা সদস্যরা আটককৃত উক্ত দুই ব্যক্তিকে মিথ্যা মামলায় জড়িত করে বিলাইছড়ি থানা পুলিশের নিকট সোপর্দ করে। জানা গেছে, সোমবার(২২ জানুয়ারি) ২০১৮ সকালের দিকে আটককৃতদের রাঙ্গামাটি জেলা জজ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত