শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

অবশেষে নাসিরনগরের দুর্নীতির বর পুত্রের বদলি

অবশেষে নাসিরনগরের দুর্নীতির বর পুত্রের বদলি

নাসিরনগর (ব্রাহ্মণবাড়িয়া), ২৪ জানুয়ারি, এবিনিউজ : অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। অবশেষে দূর্নীতির বর পুত্রের বদলি হয়েছে। নাসিরনগরের জনমনে স্বস্তি ফিরে এসেছে। জেলার নাসিরনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসে কর্মরত সার্ভেয়ার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কানুনগো মোঃ ইব্রাহিম খাঁনের বিরুদ্ধে ব্যাপক অনিয়ম, ঘুষ দুর্নীতির অভিযোগ দীর্ঘদিনের। উপজেলার দাঁতমন্ডল গ্রামের ওবায়দুল হক,সদরের মনোরঞ্জন গোপ, ফুলপুর গ্রামের মোঃ কবির চৌধুরী,নাসিরপুর গ্রামের হাজী মোঃ আব্দুল খালেক, সদরের মোঃ ছুর রহমান, মোঃ রুক্কু মিয়া সহ আরো বহু লোকজন এ প্রতিনিধিকে জানান সার্ভেয়ার মোঃ ইব্রাহিম খাঁন বিভিন্ন ইউনিয়নের স্থানীয় দালাল, নাসিরনগর সদরের দলিল লেখক হাজী নূর মিয়ার ছেলে মোঃ সালাহ উদ্দিন, হাফেজ হুজায়ফা,নারায়ণ চক্রবর্তী, ধরমন্ডল গ্রামের সাহেদ মিয়া, কুন্ডা গ্রামের আবুল খায়ের, বালিখোলা গ্রামের দলিল লেখক জসীম উদ্দিন ও কাউছার মিয়ার মাধ্যমে দীর্ঘদিন যাবৎ মোটা অংকের উৎকোচ নিয়ে বিভিন্ন খাস জমি সহ এক জনের জমি অন্য জনের নামে নামজারী ও জমা খারিজ করে দিচ্ছে। এতে করে উভয় পক্ষের মাঝে বাড়ছে সংঘর্ষ। মামলা মোকদ্দমা গড়াচ্ছে থানা ও আদালতে।

জানা গেছে নাসিরনগর সদরের ছুর রহমানের আনুমানিক ৪০ লক্ষ টাকা মূল্যের ৩০শতাংশ ভিটা ভূমি ১ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে তার ভাগিনী ফেরদৌসা বেগমের নামে নামজারি ও জমাখারিজ করে দেয়। পরে ছুর রহমান সার্ভেয়ারের কাছে গেলে খারিজটি বাতিল করে দিবে বলে ১ লক্ষ টাকা উৎকোচ দাবী করে। নিরুপায় হয়ে ছুর রহমান তখন সার্ভেয়ারকে ২০ হাজার টাকা উৎকোচ দিয়ে বাকী টাকা ২দিন পর দিবে বলে চলে যায়। ভাগিনী ফেরদৌসার নামে খারিজ হওয়ার পর হাফেজ হুজায়ফা ও আবুল খায়ের নামক ২ দালাল মিলে ২ লক্ষ টাকা মূল্যের জায়গাটি ক্রয় করে একটি বায়না পত্র সৃজন করে।পরবর্তীতে আবুল খায়ের ও হুজায়ফা উক্ত জায়গাটি নূরপুর গ্রামের প্রভাবশালী মোঃ জুনায়েদ আহমেদ জলফু ও আন্দ্রাবহ গ্রামের মোঃ ফরিদ মিয়া নামক দুই ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেয়। এই নিয়ে ছুর রহমান বাদী হয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজ্ঞ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে ৬ জনের নামে দেওয়ানী ১১৮/১৭ মামলা দায়ের করে। আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত এক অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করে। দলিল গ্রহিতারা আদালতের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ১০ অক্টোবর উক্ত জায়গাটি দলিল সম্পাদন করে।

এ সময়ে ছুর রহমান এসে বাধা দিলে পুলিশ এসে তাকে থানায় নিয়ে কিছুক্ষণ আটক করে রাখে। কিছুক্ষণ পর ছাড়া পেয়ে ছুর রহমান সাব রেজিষ্ট্রী অফিসে এসে জানতে পারে দলিল সম্পাদন হয়ে গেছে। অপর দিকে ধরমন্ডল ইউনিয়নের ধরমন্ডল গ্রামের হরিপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক মোঃকামরুজ্জামান জানান ধরমন্ডল ইউনিয়নের ধরমন্ডল মৌজার ১নং খাস খতিয়ানভূক্ত ৪১১৫ নং দাগের ২৯০ শতাংশ গোবাম সম্পত্তি নামজারি ও জমাখারিজ মোকদ্দমা নং ১৮৪/১৭-১৮ উক্ত গ্রামের দালাল ফজল করিমের ছেলে সাহেদ মিয়ার মাধ্যমে ২ লক্ষ টাকা উৎকোচ নিয়ে গ্রামের মৃত ছায়েব আলীর পুত্র শের আলী, আফছর উদ্দিনের ছেলে আবুল বাশার,আলফু মিয়ার ছেলে আলকাছ মিয়া ও জলিল মিয়ার নামে নামজারি ও জমাখারিজ করে দেয়। তিনি আরো জানান, শের আলী এলাকার একজন কুখ্যাত মাদক ব্যবসায়ী,খুনী, সন্ত্রাসী,অপহরনকারী তার বিরুদ্ধে থানা ও আদালতে একাধিক মামলা চলমান রয়েছে।

অভিযোগকারীরা আরো জানান, সার্ভেয়ার মোঃ ইব্রাহিম খাঁন তার দালাল বন্ধু দলিল লেখক মোঃ সালাহ উদ্দিনকে নিয়া প্রায়ই রাত ৮/৯ টার দিকে অফিস করে। কিছুদিন পূর্বে সে তার ওই দালাল বন্ধুকে সাথে নিয়ে চিকিৎসার নামে ছুটি নিয়ে ভারতের চেন্নাই ভ্রমণে চলে যায়। তাছাড়াও সার্ভেয়ার মোঃ ইব্রাহিম খাঁন সিএক্সএক্স সিআর ঢাকা মেট্টো ল-৩২-৭৯৪০ আকাশী রংঙের মোটর সাইকেলটি কোন একটি দামী সরকারী জায়গা নামজারি ও জমাখারিজ করে দিলে উপহার হিসাবে পায় বলে যায়। আনসার সদস্য মোঃ রক্কু মিয়া নাসিরনগরকলেজ মোড়ে তার পৈত্রিক ১১ শতাংশ জায়গা খারিজের জন্য জমা দিলে সার্ভেয়ার তাকে বলে সার্ভেয়ারের নামে ২ শতাংশ জায়গা সাফ দলিল করে দিলে তার নামে ১১ শতকের নামে আরো সরকারী ৪ শতক সহ মোট ১৫ শতাংশ জায়গা নামজারি ও জমাখারিজ করে দিবে। ২ শতাংশ জায়গা দলিল করে দিতে অস্বীকার করলে সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খাঁন তার ১৫ শতকের খারিজটি বাতিল করে পরবর্তীতে ১১ শতকের একটি খারিজ করে দেয়।যা মোবাইল রেকর্ড পর্যালোচনা করে জানা গেছে।

এ বিষয়ে সার্ভেয়ার মোঃ ইব্রাহিম খাঁনের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তার বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ মিথ্যা বলে দাবী করে। সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খানের ঘুষ দুর্নীতির বিষয়ে ২৯ অক্টোবর ধরমন্ডল গ্রামের প্রাইমারী শিক্ষক মো. কামরুজ্জামান সহ ২৮জন ও নাসিরনগর সদরের মোঃ আব্দুল খালেক সহ মোট ৪৩ জন মিলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ দাখিল করে। তদন্ত্রে সত্যপ্রমানিত হলে কর্তৃপক্ষ তাকে বাঞ্চারামপুরে বদলি করে। বাঞ্চারামপুরের লোকজন তার সকল অপকর্মের কথা জানতে পেরে তাকে রিসিভ করেনি। পরে ২৩ জানুয়ারি রোজ মঙ্গলবার সার্ভেয়ার ইব্রাহিম খান সরাইল সহকারি কমিশনার ভূমি অফিসে যোগদান করে।

এবিএন/আব্দুল হান্নান/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত