বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • মানিকছড়িতে প্রভাব বিস্তারে তিন শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা

মানিকছড়িতে প্রভাব বিস্তারে তিন শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা

মানিকছড়িতে প্রভাব বিস্তারে তিন শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তা

খাগড়াছড়ি, ২৬ জানুয়ারি, এবিনিউজ : খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলার মানিকছড়ি উপজেলায় জন প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার মাঝে প্রভাব বিন্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ সুস্পষ্ট হয়ে উঠেছে। ফলে বিভিন্ন ঘটনা ঘটছে এবং পরিস্থিতি থমথমে হয়ে উঠছে। যেকোন মুহর্তে আইন শৃংখলার ও অবনতির আশংকা করছে এলাকাবাসী। মানিকছড়ি থানার ওসিকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছে পুলিশ কর্র্র্তৃপক্ষ। বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি ও চট্রগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি সীমান্তবর্তী নয়াবাজার এলাকায় ফরেনার্স চেকপোষ্ট এর উদ্ধোধন করা হয়। ফরেনার্স চেকপোষ্ট এর একটি অংশে পুলিশ থাকবে এবং অন্য আরেকটি অংশে প্রশাসনের লোক থাকার কথা। কিন্তু কিছুদিন যাবার পর মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাইনুদ্দিন খান প্রশাসনের লোকজন থাকার অংশের চাবী চাইলে মানিকছড়ির ইউএনও আহসান উদ্দিন মুরাদ তা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানান।

বিরোধের সুত্রপাত এখান হতেই। পরবর্তীতে বিগত ১৬ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বক্তৃতা না দিয়ে মাইক সরিয়ে দেন মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মাইনুদ্দিন খান। এই ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উদ্দিন মুরাদ বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করালেও সমাধান আসেনি। এছাড়া গত ১০জানুয়ারী রাতে ওসি মাইনুদ্দিন খানের হাতে মানিকছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলাম নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই বিষয়টিও এখন মানিকছড়ি উপজেলার সবচেয়ে আলোচিত বিষয়। প্রশাসনের শীর্ষ তিন কর্মকর্তার প্রকাশ্যে বিরোধে জড়িয়ে পড়াকে অনেকে দেখছেন অশনি-সংকেত হিসেবে।

ফলশ্রুতিতে গত শনিবার মানিকছড়ি রানী নীহার দেবী সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করে। তারা প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল আহম্মদকে ইউএনও লাঞ্চিত করার অভিযোগে ৪৮ঘন্টার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উদ্দিন মুরাদের অপসারণ দাবী করে। তবে নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক রাজনৈতিক ব্যক্তি, শিক্ষক, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অভিযোগ করে বলেছেন এই ঘটনার পিছনেও রয়েছে ওসি মাইনুদ্দিনের রাজনীতি। নানাভাবে একটি গ্রুফকে সংঘবদ্ধ করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ইউএনওর বিরূদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করানো হয়েছে। তাছাড়া ওসি মাইনুদ্দিন খানের সাথে সহকারী পুলিশ সুপারের বিরোধের বিষয়টিও এখন স্পষ্ট। সহকারী পুলিশ সুপার যখন-তখন থানায় যাওয়া, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে খোঁজ-খবর নেওয়া ও হস্তক্ষেপ করার কারনে ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপারের মাঝে বিরোধের সুত্রপাত। বিষয়টি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে জন প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের দুরত্ব কমানোর দাবী করেন তারা।

মানিকছড়ি উপজেলা পরিষদে’র চেয়ারম্যান ম্রাগ্য মারমা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মো: মাইনুদ্দিন, পার্বত্য জেলা পরিষদ সদস্য এম এ জব্বার বলেন মানিকছড়িতে তিন শীর্ষ সরকারী কর্মকর্তাদের আভ্যন্তরিণ দ্বন্ধের কারণে পরিস্থিতি থমমমে। যেকোন মুহর্তে অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটতে পারে। তারা উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন এবং সুষ্ঠ’ভাবে সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান। এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তারা আরো বলেন ওসি-ইউএনও দ্দন্ধের পাশাপাশি এখন ওসি-সহকারী পুলিশ সুপারের মাঝে দ্বন্ধ শুরু আরো প্রকট হয়েছে। এই বিষয়ে মানিকছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তৌীফকুল ইসলাম আইজিপির নিকট লিখিতভাবে অভিযোগও করেছেন। এই বিষয়ে মানিকছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলাম জানান গত ১০ই জানুয়ারী মানিকছড়ি সার্কেলের একটি অনুষ্ঠান থেকে ফেরার পথে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা তাকে চট্রগ্রাম রেফার করেন। ১২জানুয়ারী তার বডিগার্ড তাকে জানায় তার অস্ত্র ওসি মাইনুদ্দিন খান নিয়ে গেছে। বিষয়টি জানতে থানায় গেলে ওসি মাইনুদ্দিন তার সাথে খারাপ আচরন করেন।

চেইন অব কমান্ড মানেননি।এই কারনে তিনি প্রতিকার চেয়ে আইজিপির নিকট দরখাস্ত করেছেন, তবে এখনো কোন প্রতিকার পাননি। একই বিষয়ে ভিন্ন কথা বলেন ওসি মাইনুদ্দিন খান। তিনি বলেন সহকারী পুলিশ সুপারের নিকট কোন অস্ত্র থাকেনা। অস্ত্র থাকে বডিগাডের নিকট। সহকারী পুলিশ সুপার কর্মস্থলে না থাকলে বডিগার্ড সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারেনা বিধায় তা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে জমা রাখা হয়েছে। সহকারী পুলিশ সুপারের সাথে কোন বিরোধ নেই উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন ১০ তারিখে তিনি (সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল) রাতে একজনের ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যক্তিগত আক্রোশের জেরে ভাংচুর করেছেন। সেই বিষয়ে পুলিশ সুপারের নিকট দরখাস্তও করেছে ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে দ্বন্ধের বিষয়ে তিনি আরো বলেন আইন অনুযায়ী ফরেনার্স চেকপোষ্ট এর দায়িত্ব পুলিশের, সেখানে ইউএনও সাহেব কেন হস্তক্ষেপ করছেন, নিজেই বিরোধের সৃষ্টি করছেন-তা তিনিই ভালো বলতে পারবেন। দ্বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে মানিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান উদ্দিন মুরাদ বলেন ওসি সাহেব নিজেকে সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তি মনে করেন। তিনি তার দপ্তরেইতো চেইন অব কমান্ড মানেন না। আমরাতো ওনার কাছে কিছুই না। তিনি গতকাল আমাকে হেয় করার জন্য ছাত্রছাত্রীদের আমার বিরূদ্ধে দাঁড় করিয়েছেন। শিক্ষকদের সাথে আমার অসদাচরণ করার কোন কারন নেই। বিগত ৩০শে ডিসেম্বর, ভর্তি পরীক্ষার দিন সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা সম্পন্নের জন্য আমি কড়াকড়ি করেছি। তাছাড়া যদি আমি সেদিন অসদাচরণ করি, তাহলে ২২দিন পরে প্রতিবাদ হবে কেন?

জেলা প্রশাসক মো: রাশেদুল ইসলাম বলেন ওসি ও ইউএনওর বিরোধ তদন্তে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে খাগড়াছড়ি পার্বত্য জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক আছেন। তারা তদন্ত প্রতিবেদন দিলে আমরা পরবর্তী কার্যক্রমে যাবো। পুলিশ সুপার আলী আহমেদ খান বলেন ওসি ও সহকারী পুলিশ সুপারের দ্বন্ধ বিষয়ে দরখাস্ত-পাল্টা দরখাস্ত পাওয়া গেছে। আমরা তদন্ত করে, উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ আলোচনা করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

এদিকে খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি থানার অফিসার্স ইনচার্জ(ওসি) মো: মাইনুদ্দিন খানকে বান্দরবান জেলায় স্ট্যান্ড রিলিজ করা হয়েছে। গত ২২ জানুয়ারি(সোমবার) বিকেলে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি এসএম মনিরুজ্জামান এর আদেশে তাকে বদলি করা হয়। মানিকছড়ি থানার পরিদর্শক (তদন্ত)তালাত মাহমুদকে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। ঘটনার বিবরনে জানা যায়, মানিকছড়ি উপজেলায় জনপ্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের তিন শীর্ষ কর্মকর্তার মাঝে প্রভাব বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিরোধ চরম আকার ধারন করে। একের পর এক ঘটনা ঘটতে থাকে। অবনতি হয় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির। সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১৯ নভেম্বর খাগড়াছড়ি জেলার মানিকছড়ি ও চট্রগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি সীমান্তবর্তী নয়াবাজার এলাকায় ফরেনার্স চেকপোস্ট এর উদ্বোধন করা হয়। ফরেনার্স চেকপোস্ট এর একটি অংশে পুলিশ থাকবে এবং অন্য আরেকটি অংশে প্রশাসনের লোক থাকার কথা। কিন্তু কিছুদিন যাবার পর মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মো: মাইনুদ্দিন খান প্রশাসনের লোকজন থাকার অংশের চাবি চাইলে দিতে অস্বীকৃতি জানান মানিকছড়ির ইউএনও আহসান উদ্দিন মুরাদ। বিরোধ সৃষ্ট এখান থেকেই।

এর পর ১৬ডিসেম্বর বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানেও উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে বক্তব্য না দিতে দিয়ে মাইক সরিয়ে দেন মানিকছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ মাইনুদ্দিন খান। এ ঘটনার পর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উদ্দিন মুরাদ বিষয়টি জেলা প্রশাসক ও জেলা পুলিশ সুপারকে অবগত করেন। গত ১০ জানুয়ারি রাতে ওসি মাইনুদ্দিন খানের হাতে মানিকছড়ি সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তৌফিকুল ইসলাম নাজেহাল হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়টিও এখন মানিকছড়ি উপজেলার সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা। গত শনিবার(২০জানুয়ারি) মানিকছড়ি রানী নীহার দেবী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা রাস্তায় বিক্ষোভ করে।

তারা প্রধান শিক্ষক তোফাজ্জল আহম্মদকে ইউএনও লাঞ্চিত করার অভিযোগে ৪৮ঘন্টার মধ্যে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আহসান উদ্দিন মুরাদের অপসারণ দাবি করে। অভিযোগ ওঠে এ ঘটনার পিছনেও রয়েছে ওসি মাইনুদ্দিনের হাত। নানাভাবে একটি গ্রুপকে সংঘবদ্ধ করে ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে ইউএনও’র বিরুদ্ধে বিক্ষোভ সমাবেশ করানো হয়েছে। তাছাড়া ওসি মাইনুদ্দিন খানের সাথে সহকারী পুলিশ সুপারের বিরোধের বিষয়টিও স্পষ্ট হয়ে ওঠে। শুরু হয় তদন্ত।

এবিএন/চাইথোয়াই মারমা/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত