![সাভার অাশুলিয়ায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সোর্সরা বেপরোয়া](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/26/gazipur-map@abnews (3)_122638.jpg)
সাভার, ২৬ জানুয়ারি, এবিনিউজ : ঢাকা জেলার সাভার, ধামরাই ও আশুলিয়া থানা এলাকায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কথিত সোর্সরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তাদের অপকর্ম ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে এলাকার লোকজন অতিষ্ঠ। অভিযোগ রয়েছে, কথিত এ সোর্সরা কখনো কখনো নিজেরাই ডিবি পুলিশ কিংবা পুলিশের সিভিল টিমের ন্যায় কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে।
তারা পুলিশের অসাধু সদস্যদের সাথে মিলে জিম্মি বাণিজ্য, মাদক ব্যবসা ও মামলার হুমকি দিয়ে লোকজনকে হয়রানি করছে প্রতিনিয়ত। অনেক সোর্সের বিরুদ্ধে স্কুল , কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও গৃহবধূদের প্রতারণার ফাঁদে ফেলে ধর্ষণেরও অভিযোগ রয়েছে। এমনকি তারা বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণীদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ডেকে এনে রাতভর আটকে রেখে ধর্ষণের মতো কাণ্ড ঘটাচ্ছে।
গত সোমবার রাতে সাভার উপজেলার আশুলিয়ায় এক ব্যক্তিকে আটক করে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা আদায়ের সময় রাসেল নামে এক সোর্সকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আশুলিয়ার বারইপাড়া এলাকা থেকে গার্মেন্টস কর্মকর্তা মোক্তার হোসেন বাসা থেকে বের হওয়ার পরপরই তার কাছে ইয়াবা আছে এমন অভিযোগ তুলে ডিবি পুলিশ পরিচয়ে রাসেল তাকে আটক করে। পরে মোক্তারকে একটি মাইক্রোবাস তুলে টাকা দাবি করা হয়। এ কাজে তার সহযোগী ছিল আশুলিয়া থানায় কর্মরত দুই এএসআই। পরে আটক ব্যক্তির স্ত্রী বিষয়টি আশুলিয়া থানায় অবহিত করলে পুলিশের একটি দল ওই দুই এএসআইসহ সোর্স রাসেলকে থানায় নিয়ে আসে। প্রাথমিকভাবে বিষয়টি প্রমাণিত হলে দুই সহকারী উপপরিদর্শককে ক্লোজড করা হয় এবং সোর্স রাসেলের বিরুদ্ধে আশুলিয়া থানায় মামলা করা হয়। তারা দীর্ঘদিন ধরে একসাথে দলবদ্ধ হয়ে সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে চাঁদাবাজি করে আসছিল বলে জানা গেছে।
ইতিপূর্বে সাভারে অভিনয়ের সুযোগ করে দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে দুই তরুণীকে ধর্ষণ করে ডিবি পুলিশের সোর্স লিটন মন্ডল। ফেসবুকের মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র ধরে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সোর্স পরিচয়দানকারী লিটন মন্ডল অভিনয়ের সুযোগ করে দেয়ার কথা বলে গাজীপুর থেকে সাভার এনে ঐ দুই তরুণীকে রাতভর আটকে রেখে ধর্ষণ করে। এ ঘটনায় ধর্ষণের শিকার ওই দুই তরুণী ডিবির সোর্স লিটনকে প্রধান আসামি করে সাভার মডেল থানায় মামলা করে। এ ঘটনায় ডিবির সোর্স লিটন মন্ডল গ্রেফতার হয়েছিল।
জানা যায়, বিভিন্ন অপরাধে জড়িত ব্যক্তিদের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অন্য অপরাধীদের গ্রেফতার করতে কিংবা অবৈধ মালামাল উদ্ধারে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। কথিত সোর্সরা সন্ত্রাসীদের অবস্থান কিংবা অবৈধ মালামালের বিষয়ে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরকে সঠিক তথ্য দিয়ে সহায়তা করবে এটা বলা হলেও বাস্তবে এর উল্টো চিত্র দেখা যায়। সোর্সরা আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছাকাছি থাকার সুবাদে নিজেরাই বিভিন্ন অপকর্মে জড়িয়ে জনসাধারণকে প্রতারিত ও হয়রানি করছে। তারা তথ্য দিয়ে নামেমাত্র কিছু ছিঁচকে সন্ত্রাসী বা মাদক ধরিয়ে দিলেও নিজেরাই অপরাধীদের সাথে মিশে এমন কোনো অপকর্ম নেই যা তারা করে না। এসব সোর্স সাধারণ মানুষকে ধরিয়ে দেয়ার হুমকি বা মামলার ভয় দেখিয়ে তাদের কাছ থেকে আদায় করে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এ সোর্সরা নিজেরাই তাদের টার্গেটকৃত ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে মাদক বা নিষিদ্ধ বস্তু রেখে তাদের গ্রেফতার কিংবা গ্রেফতারের ভয় দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা আদায় করে। এ সকল কথিত সোর্সের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ও নারী ব্যবসাসহ সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। পুলিশের কতিপয় অসাধু সদস্যদের সাথে সোর্সদের রয়েছে অবাধ মেলামেশা। তারা একত্রে বসে গল্পগুজব করে। এসব দেখে সাধারণ মানুষ অপরাধীদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ করতে ভয় পায়।
সংঘবদ্ধ এ সোর্সরা রাতে মাইক্রোবাসে এলাকার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে বেড়ায়। নিজেরাই ডিবি পুলিশ এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সদস্য পরিচয় দিয়ে পথচারী কিংবা সাধারণ মানুষকে গাড়িতে তুলে নিয়ে তাদের সর্বস্ব লুট করে নির্জন স্থানে নামিয়ে চম্পট দেয়। তাদের কাছে হ্যান্ডকাফ, ওয়াকিটকি ও পিস্তলও থাকে বলে ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন। এ সোর্সদের ভয়ে জনসাধারণ বিশেষ করে এ অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অতিষ্ঠ ও ভীতসন্ত্রস্ত। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে বিভিন্ন মামলা জড়িয়ে হয়রানির করা হয়। সোর্সদের অধিকাংশই নেশাগ্রস্ত ও অবৈধ অস্ত্রধারী।
এ ব্যাপারে সাভার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মহসিনুল কাদির বলেন, সোর্স পরিচয়দানকারীদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। যারাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নাম ভাঙ্গিয়ে বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হবে, তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
এবিএন/মো: সোহেল রানা খান/জসিম/নির্ঝর