![চিতলমারীতে লাইসেন্সবিহীন ওষুধের দোকান ও ডাক্তারখানা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/27/bagerhat---news-27.01.18-(4_122905.jpg)
বাগেরহাট, ২৭ জানুয়ারি, এবিনিউজ : বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের হাট-বাজারে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে লাইসেন্স বিহীন ওষুধের দোকান ও ডাক্তারখানা। এসব ডাক্তারখানায় সেবা নিতে এসে প্রতারিত হচ্ছে সাধারণ রোগীরা। ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধের দোকানে হরহামেশা বিক্রি হচ্ছে যৌন উত্তেজক ও ঘুমের ওষুধসহ নানা ধরণের ওষুধ। এসব নেশাজাতীয় ওষুধে আকৃষ্ট হয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী ও যুব সমাজ।
প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে নজরদারি ও হস্তক্ষেপ না নেয়ার ফলে দিনদিন সমাজের অবক্ষয় হচ্ছে বলে বিজ্ঞজনেরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
জানা গেছে, উপজেলার কলাতলা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখছিলেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। কাননচক বাকেরকান্দি বাজারে তাদের চোখে পড়ে একটি দোকানে ঝুলতে থাকা সাইনবোর্ডে। রঙিন সাইনবোর্ডটিতে যাবতীয় চিকিৎসাসহ অনেক কথার মাঝে লেখা রয়েছে, ‘মেসার্স মারুফ মেডিকেল কর্নার, ডাঃ মোঃ মনিরুজ্জামান খান।’ প্রায় ২৪-১৮ ফুট ঘরের দোকানটির একপাশে রয়েছে হোমিওপ্যাথি ও এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের সাজানো দু’টি আলমারী। অন্যপাশে রোগী দেখার বেড পাতানো আর সামনের দিকে শোকেস।
আলাপকালে ডাঃ মনিরুজ্জামান খান জানান, তিনি ডাক্তারী পাশ, এলএমএফপি। আর সরকারী লাইসেন্স নিয়ে ওষুধের ব্যবসা করছেন। হোমিওপ্যাথি ও এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের ব্যবসা একসাথে করছেন? উত্তরে ৩৭ বছর বয়সী ডাঃ মনিরুজ্জামান খান বলেন, ‘হ্যাঁ তিনি এই দু’টি বিষয়েই অভিজ্ঞ। অভিজ্ঞতা আর পাশ না থাকলে তো আর একটি বাজারে দোকান করা যায়না! আমার ট্রেড লাইসেন্সও আছে।’
কথা বলতে বলতে তিনি একটি প্যাকেটভর্তি কাগজপত্র বের করেন। কাগজগুলোর ভেতর থেকে তার ডাক্তারী বিষয়ে লেখাপড়ার সার্টিফিকেটটি বের করেন। সার্টিফিকেটটির উপরের এক কোনায় পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি সেটে লেমিনেটিং করা। সেটির পেছনে ফুজি ফটো প্রিন্টের জলছাপ।
সার্টিফিকেটটির লেখায় দেখা যায়, সাতক্ষীরার বাংলাদেশ টেকনোলজি ফাউন্ডেশন’র হোমিওপ্যাথি প্যারা মেডিকেল প্রোগ্রাম হতে মোঃ মনিরুজ্জামান খান এক বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন ২০১৫ সালে। এ্যালোপ্যাথি বিষয়ে তার কোন লেখাপড়া নেই।
তবে এ্যালোপ্যাথির ড্রাগ লাইসেন্স আছে দাবী করে একটি কাগজ দেখিয়ে বলেন, ‘মূল লাইসেন্সটি নবায়ন করতে পাঠিয়েছি-এটা তার ফটোকপি।’ ফটোকপি কাগজটির বিভিন্ন স্থানে কাটাছেড়া করা। ইংরেজীতে লেখা ড্রাগ লাইসেন্সটির নামের স্থানে প্রকৃত নামটি কেটে সেখানে বাংলায় লেখা রয়েছে, ‘মেসার্স মারুফ মেডিকেল কর্নার, প্রোপাইটার মোঃ মনিরুজ্জামান খান, চিতলমারী বাজার, চিতলমারী, বাগেরহাট।’
ঠিকানার স্থানে চিতলমারী বাজার লেখা থাকলেও মোঃ মনিরুজ্জামান খানের ডাক্তারী-ওষুধের দোকানের দেখা মিলেছে উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দুরে কাননচক বাকেরকান্দি বাজারে। যেখানে সাধারণ মানুষের কাছে এইসব সত্যতা বিচারের চেয়ে বেশি প্রয়োজন হয়ে দাড়ায় অসুস্থ রোগীদের চিকিৎসা সেবা। আর এই সুযোগটি গ্রহণ করে যাচ্ছে মোঃ মনিরুজ্জামান খানের মতো ডাক্তার নামধারী ব্যবসায়ীরা।
এসব ব্যাবসায়ীদের পেছনে রয়েছে রাজনৈতিক স্থানীয় প্রভাবশালীরা। এই ধরণের ওষুধ ব্যবসায়ীরা কোন প্রেসক্রিপশন ছাড়াই ঘুমের ওষুধ ও যৌন উত্তেজক ওষুধ বিক্রি করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। শুধু মনিরুজ্জামান নয় চিতলমারীর বিভিন্ন বাহাট-বাজারে এভাবে গড়ে উঠেছে ওষুধের দোকান ও ডাক্তারখানা।
ওই এলাকার বাসিন্দা ও চিতলমারী উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি স.ম. গোলাম সরোয়ার বলেন, চিতলমারী উপজেলার বিভিন্ন বাজারে ওষুধের অবৈধ ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ হতে মনিটরিং জোরদার করা উচিৎ।
এ ব্যাপারে চিতলমারী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোঃ আলমগীর হোসেন জানান, যত্রতত্র প্রশিক্ষণ নিয়ে একজন ব্যক্তি ডাক্তার লিখতে পারেন না। এ ছাড়া হোমিওপ্যাথি আর এ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা দুই মেরুর। একজন চিকিৎসক একই স্থানে বসে এই দুই ধরণের চিকিৎসা সেবা দিতে দেখা যায় না। যদি কেউ এটা করে তা সম্পূর্ণ বেআইনি।
এবিএন/এস এস সাগর/জসিম/রাজ্জাক