![সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে যা বললেন প্রধানমন্ত্রী](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/01/31/pm-perliament-abn_123585.jpg)
ঢাকা, ৩১ জানুয়ারি, এবিনিউজ : “চাকরিজীবীদের অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো সম্ভব নয়”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবীদের অবসরের বয়সসীমা আপাতত বাড়ানো সম্ভব নয়।
তিনি আজ সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে জাতীয় পার্টির সদস্য ফখরুল ইমামের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সরকারি চাকরিতে অবসরের বয়সসীমা বৃদ্ধি করার কোন পরিকল্পনা আপাতত সরকারের নেই। ভবিষ্যতে এ বিষয়টি দেখা যাবে। স্বাধীনতার পর দীর্ঘদিন অবসরসীমা বাড়ানো হয়নি। একমাত্র আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে অবসরের বয়সসীমা ৫৭ থেকে ৫৯ বছর করেছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে বয়সসীমা ৬০ বছর করা হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, অবসরের বয়সসীমা বাড়ানো হলে নীচের স্তরে পদোন্নতির ক্ষেত্রে ব্যাঘাত ঘটে এবং নতুনদের চাকরিতে প্রবেশের সুযোগ কমে যায়। তাই যত বেশি অবসরের বয়স বাড়ানো হবে তত চাকরিতে প্রবেশ কমে যাবে। আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সেশনজট ছিল, আওয়ামী লীগ সরকার সেমিস্টার সিস্টেম করে দেয়ায় এখন তেমন সেশনজট নেই। ফলে চাকরিতে প্রবেশের জন্য এখন অনেক সময় পাচ্ছে। তাই এখন আর অবসরের বয়সসীমা বাড়ানোর কোন পরিকল্পনা নেই।
সরকারি দলের সদস্য সামশুল হক চৌধুরীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের ভেতরে বিনিয়োগের জন্য সরকার সকল সুযোগ-সুবিধাই নিশ্চিত করেছে। কিন্তু দেশে বিনিয়োগ না করে যারা অর্থ পাচার করতে চায় তারা তো তা করতেই চাইবে।
তিনি বলেন, টাকা পাচার করলে সরকার তা শনাক্ত করে দেশে ফেরত আনছে। বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার ছোট ছেলে কোকো’র পাচারকৃত অর্থ দেশে ফেরত আনা হয়েছে। অন্যরা যারা অর্থ পাচার করছে তা দেশে ফেরত আনতে সরকার যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।
“শিশুর প্রতি সহিংসতার দ্রুত বিচারে ৪১টি নতুন ট্রাইব্যুনাল বসানো হচ্ছে”
সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য দিদারুল আলমের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার দ্রুত বিচারের লক্ষ্যে ৪১টি নতুন ট্রাইব্যুনাল বসানো হচ্ছে। এই ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিচার যাতে দ্রুত হয়, সে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘সরকার নারীদের সহিংসতা থেকে রক্ষায় সব ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে। যদি কোন মেয়ের প্রতি ইভ টিজিং করা হয়, এসিড নিক্ষেপ করা বা নির্যাতন করা হয় তাহলে সাথে সাথে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের বিচার করা হচ্ছে। যার ফলে এ ধরনের সহিংসতা অনেকটা হ্রাস পেয়েছে। তবে মাঝে মাঝে অনেক নারী পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়। ইদানিং সম্পত্তি নিয়েও কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটছে। এ ব্যাপারে তিনি সকলকে আরো বেশি সচেতন হওয়ার আহবান জানান।’
তিনি বলেন, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতার বিচারে দীর্ঘসূত্রিতা নিরসনে সরকার আইন প্রণয়ন করেছে এবং বিচারের ব্যবস্থাও করেছে। এছাড়া হতদরিদ্রদের বিচার প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে লিগ্যাল এইড ফান্ডের মাধ্যমে মামলা চালাতে টাকা দিয়ে সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশব্যাপী নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুদের সেবাপ্রাপ্তির সুবিধার্থে ২০১৩ সালে ৪০টি জেলা সদর হাসপাতাল এবং ২০টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৬০টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩৫ হাজার ৬৭৭ জন নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুকে আইনি সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশের ৯টি ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ৩১ হাজার ৫৭৩ জন নারী ও শিশুকে সেবা দেয়া হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সরকার ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন, ২০০০’, ‘পারিবারিক সহিংসতা (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন, ২০১০’, ‘মানবপাচার (প্রতিরোধ ও সুরক্ষা) আইন ২০১২’, ‘পর্ণোগ্রাফী নিয়ন্ত্রণ আইন,২০১২’, বাল্যবিবাহ নিরোধ আইন, ২০১৭’, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে জাতীয় কর্মপরিকল্পনা (২০১৩-২০২৫) প্রণয়ন করেছে।
“২০১৮-১৯ সালের মধ্যে সারা দেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হবে”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০২১ সালের মধ্যে ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সুবিধা নিশ্চিত করার লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও বাস্তবে ২০১৮-১৯ সালের মধ্যেই দেশের শতভাগ এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
প্রধানমন্ত্রী আজ তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য শেখ মো. নুরুল হকের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।
শেখ হাসিনা বলেন, দেশে বর্তমানে শীতকালে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে প্রায় ৮ হাজার থেকে ৮ হাজার ৫শ’ মেগাওয়াট এবং এর বিপরীতে উৎপাদন ক্ষমতা ১৬ হাজার ৪৬ মেগাওয়াট (ক্যাপটিভসহ)। ফলে বর্তমানে দেশে বিদ্যুতের কোন ঘাটতি নেই।
তিনি বলেন, গ্রীষ্মকালে সঞ্চালন ও বিতরণ নেটওয়ার্কের সীমাবদ্ধতা, গ্যাস সরবরাহের অপ্রতুলতা ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজের জন্য মাঝে মধ্যে বিদ্যুৎ বিভ্রাট ঘটে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন বিতরণ কোম্পানির কাছ থেকে প্রাপ্ত চাহিদার তথ্য অনুযায়ী আসন্ন সেচ মৌসুম ও গ্রীষ্মকালীন সময়ে বিদ্যুতের চাহিদা গড়ে ১১ হাজার ৫শ’ থেকে ১৩ হাজার মেগাওয়াট হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ‘সবার জন্য বিদ্যুৎ’ সুবিধা নিশ্চিতকল্পে বিদ্যুৎ খাতে যুগোপযোগী বাস্তবসম্মত টেকসই পরিকল্পনা প্রণয়ন করে নতুন নতুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে বিদ্যুৎ আমদানির ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
তিনি বলেন, এর ধারাবাহিকতায় ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার, ২০৩০ সালের মধ্যে ৪০ হাজার এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমানে মোট ১৩ হাজার ৭৭১ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৪৭টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণাধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
তিনি বলেন, ৫ হাজার ৯২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ৩০টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের দরপত্র প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে পর্যায়ক্রমে চালু হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০ হাজার ৭৩২ মেগাওয়াট ক্ষমতার ১৯টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ পরিকল্পনাধীন রয়েছে।
তিনি বলেন, আঞ্চলিক সহযোগিতার ভিত্তিতে ভারতের ৩টি স্থান থেকে ২ হাজার ৩৩৬ মেগাওয়াট ক্ষমতার বিদ্যুৎ আমদানি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে, যা ২০১৮ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে শুরু হবে। বর্তমানে ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ ভারত থেকে আমদানি করা হচ্ছে।
“রাজধানীতে আজই মাদক বিরোধী অভিযান চালানো হবে”
রাজধানীতে ভবঘুরে শিশু-কিশোরসহ মাদক ব্যবহারকারীদের বিরুদ্ধে আজই অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদের পয়েন্ট অব অর্ডারে রাজধানীর অভিজাত এলাকা থেকে ফুটপাতে মাদকের অবাধ ব্যবহার প্রসঙ্গে স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে সংসদ নেতা মাদক বিরোধী এই অভিযানের ঘোষণা দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমি আজই রাজধানীতে মাদক বিরোধী অভিযান চালানোর নির্দেশ দেব। ভবঘুরে শিশুদের মধ্যে যারা মাদকে আসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের ধরে সংশোধনাগারে পাঠানো হবে। আমরা আমাদের শিশুদের এভাবে ধ্বংস হয়ে যেতে দিতে পারি না।’
তিনি গুলশান-বনানীসহ রাজধানীর অভিজাত এলাকায় যেসব উচ্চবিত্তের সন্তানরা মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে তাদের ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট পরিবারকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।
তিনি সংসদ সদস্যদের নিজ নিজ এলাকায় মাদকের ব্যাপারে সচেতন থাকার নির্দেশ দেন।
শেখ হাসিনা বলেন, কোন যুবক বা শিশু-কিশোর যাতে মাদকের ভয়াবহ ছোবলের শিকার না হন, এজন্য প্রতিটি পরিবারের উচিত তাদের সন্তানদের ব্যাপারে খোঁজ-খবর রাখা।
কাজী ফিরোজ রশীদ তার বক্তব্যে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান, বনানীতে উচ্চ বিত্তের সন্তানদের অবাধে মাদক ব্যবহার এবং গুলিস্তান, হাইকোর্ট মাজারসহ সারা ঢাকা শহরে রাস্তায় মাদক ব্যবহারের ভয়াবহতার বিষয়টি তুলে ধরেন।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি