![দিনে কি ১০ হাজার কদম হাঁটতেই হবে?](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/01/walking_123651.jpg)
ঢাকা, ০১ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : শরীর সুস্থ রাখতে হলে হাঁটার বিকল্প নেই, এটা সবাই বলেন। কিন্তু কতদূর হাঁটবেন? দিনে কতটুকু হাঁটলে তা স্বাস্থ্যের জন্য ভালো?
এ নিয়ে বিতর্ক কম নয়। এতদিন পর্যন্ত বলা হয়েছে, ম্যাজিক নম্বরটা হচ্ছে ১০ হাজার কদম। অর্থাৎ দিনে যদি আপনি ১০ হাজার পদক্ষেপ ফেলতে পারেন, এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারে না।
এই ১০ হাজার কদমের লক্ষ্য অর্জনের চেষ্টা করছেন, রাস্তায় এমন অনেক মানুষের দেখা মিলবে। এরা ঝড়ো গতিতে হাঁটার সময় আবার হাতের মোবাইলে বা কব্জির ডিজিটাল ঘড়িতে বার বার দেখে নেন ১০ হাজার কদম হতে আর কত বাকী।
১০ হাজার পদক্ষেপের এই সংখ্যাটা কোত্থেকে এলো? এর বৈজ্ঞানিক ভিত্তিটা কী?
এটি আসলে ১৯৬০ সালে জাপানে একটি পণ্য বাজারজাতকরণের বিজ্ঞাপন থেকে এসেছে। ১৯৬৪ সালে টোকিও অলিম্পিক গেমসের আগে জাপানের একটি কোম্পানি স্বাস্থ্য সচেতন মানুষদের জন্য একটি যন্ত্র বাজারে ছাড়ে।
এই যন্ত্রের নাম ছিল ‘মানপো-কেই।’ জাপানি ভাষায় মান এর মানে হচ্ছে ১০ হাজার, পো মানে পদক্ষেপ আর কেই মানে মিটার। কাজেই মানপো-কেই মানে হচ্ছে ১০ হাজার কদম মাপার মিটার।
সেখান থেকেই আসলে এই ‘১০ হাজার কদম’ হাঁটার ‘মিথ’ তৈরি হয়েছিল। কিন্তু শরীর ফিট রাখতে এটা কতটা কার্যকর?
যুক্তরাজ্যের শেফিল্ড হালাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রব কোপল্যান্ড এ নিয়ে একটা ছোট্ট গবেষণা চালিয়েছেন।
তিনি এক দল স্বেচ্ছাসেবককে বাছাই করলেন এই পরীক্ষার জন্য। তাদের দুটি গ্রুপে ভাগ করে দেয়া হলে। একটি গ্রুপকে বলা হলো দিনে ১০ হাজার কদম, অর্থাৎ প্রায় ৫০ মাইল হাঁটতে।
আর অন্য গ্রুপকে বলা হলো ৩ দফায় মোট ৩ হাজার কদম বা দেড় মাইল হাঁটতে। তবে তাদের হাঁটতে হবে একটু দ্রুপ পদক্ষেপে যাতে তাদের হার্ট বা হৃদযন্ত্রের গতি দ্রুততর হয়। তবে সেটা আবার এত জোরে নয় যে লোকে দম হারিয়ে ফেলবে।
তো এই পরীক্ষা থেকে কী জানা গেল?
দেখা গেল, ১০ হাজার কদম হাঁটতে বলা হয়েছিল যাদের, তাদের প্রতি ৩ জনের দুজনেই লক্ষ্য অর্জন করতে পেরেছেন। কিন্তু এদের সবারই ১০ হাজার কদম হাঁটতে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে।
অন্যদিকে যাদের ৩ হাজার কদম বা দেড় মাইল হাঁটতে বলা হয়েছিল, তাদের সবাই বেশ সহজেই তাদের লক্ষ্য অর্জন করেছেন।
হাঁটার সময় এই দুই গ্রুপের সদস্যকেই সাথে রাখতে হয়েছিল মনিটর।
সেখান থেকে পাওয়া তথ্য বিশ্লেষণ করে রব কোপল্যান্ড দেখতে পেলেন, যারা দেড় মাইল হেঁটেছিলেন, তারাই আসলে বেশি উপকৃত হচ্ছেন।
এর কারণও ব্যাখ্যা করলেন অধ্যাপক কোপল্যান্ড। বলেন, ‘আপনি যখন মধ্যম মাত্রায় শরীরচর্চা করেন, তখনই আপনি আসলে বেশি উপকার পান। যদিও দ্বিতীয় গ্রুপের লোকজন অনেক কম হেঁটেছেন, কিন্তু তারা দ্রুতলয়ে হাঁটার কারণে তাদের হার্ট রেট অনেক বেড়ে গিয়েছিল। শরীরচর্চায় এই হার্টের গতি বাড়ানোটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’
তিনি বলেন, ‘এভাবে হাঁটলে আপনি ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং কিছু কিছু ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনতে পারেন।’
এর পক্ষে আরেকটা যুক্তি হচ্ছে যে দিনে ১০ হাজার কদম হাঁটার সময় অনেকেই বের করতে পারবেন না। কিন্তু ৩ বারে মোট দেড় মাইল হাঁটার সময় ঠিকই বের করা সম্ভব।
কাজেই ১০ হাজার কদম নাকি ৩ হাজার কদম হাঁটায় উপকার বেশি, তা এই পরীক্ষার ফল থেকে বেশ স্পষ্ট।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ