![জেনে নিন খুশকির কারণ ও প্রতিকার](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/03/dandraf_124040.jpg)
অধ্যাপক নইম কাদের, ০৩ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : মানুষের মাথার চুলের গোড়ায় জমে থাকা ময়লা বা ছত্রাকই খুশকি। মূলত: মাথার তালুর ত্বকেই খুশকি বেশি দেখা দেয়। তবে কানে, নাকের ছিদ্রে, ভ্রু, বোগলেও খুশকি হয়। শরীরের এসব স্থানে খুশকি হলে তা সহজে দৃষ্টিগোচর হয় না, বুঝা যায় না, যেভাবে মাথার খুশকি দৃষ্টিগোচর হয়। শুষ্কতার কারণে ত্বকের ছোট ছোট মৃত কোষ খুশকি তৈরি করে। মাথার ত্বকে খুশকি হলে তা ছোট ছোট আঁশের মত উঠতে থাকে। এর ফলে মাথা চুলকায়। মাথা চুলকালে চিরুনি আঁচড়াতে ভাল লাগে। তাই যাদের খুশকি আছে তারা ঘন ঘন মাথা আঁচড়ায়। চিরুনি দিয়ে আঁচড়ালে মাথা থেকে ছোটছোট খুশকি কণা ঝরতে থাকে। অনেকের মাথায় এত বেশি খুশকি হয় যে, ঘাঁড়ে, কাঁধে খুশকি ঝরে পড়ে। এমনকি মাথা আঁচড়ালে জামায় পড়ে বড় বিশ্রি দেখায়।
খুশকি কখন বেশি হয়? সাধারণত বয়ো:সন্ধিকালে এবং প্রাপ্ত বয়সে খুশকি বেশি হয়। আবার মৌসুম হিসেবে অন্যান্য ঋতুর তুলনায় শীতকালে বেশি হয়।
খুশকির কারণ:
ফাঙ্গাস :
প্রতিটি মানুষের কম বেশি খুশকি হয়, খুশকি হতে পারে। মাথার ত্বকে সব সময় নতুন কোষ জন্মায় এবং পুরাতন কোষ ঝরে পড়ে। পুরানো কোষগুলো যদি মাথায় জমে যায় এবং তাতে ফাঙ্গাস সংক্রমিত হয়, তখন খুশকি হয়।
ম্যালেসেজিয়া :
ত্বকে ম্যালেসেজিয়া নামক একপ্রকার ছাত্রাক থাকে। যদি কোন কারণে এ ছত্রাক বৃদ্ধি পায়, তখন ত্বক শুষ্ক হয়ে যায়। কারণ ম্যালেসেজিয়া ত্বক থেকে তেল শুষে নেয়। ফলে ত্বকের কোষ মরে যায় এবং মৃত কোষ চুলের গোড়ায় খুশকিতে পরিণত হয়।
ত্বকের শুষ্কতা :
যাদের ত্বক অতিমাত্রায় শুষ্ক তাদের খুশকির প্রবণতা বেশি। শুষ্ক আবহাওয়া বিশেষ করে শীতকালে বাতাসের আদ্রতা কমে গিয়ে ত্বকের শুষ্কতা বৃদ্ধি পায়। এটি খুশকির একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণে।
এলার্জি :
যাদের ত্বকে এলার্জি আছে তারা বেশি খুশকির প্রবণ। সূর্যের অতি বেগুনি রষ্মি ও ত্বক পরষ্পর বিপরীত প্রতিক্রিয়ার ফলেও খুশকি হতে পারে।
ওষুধ :
চর্মপীড়া বা ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য ওষুধ ব্যবহার করলে এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হিসেবে খুশকি দেখা দিতে পারে।
খাদ্য :
যাদের খাদ্য তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন– বি এবং জিংক থাকে না, তাদের খুশকি বেশি হয়। ফাস্ট ফুড এবং কোলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করে প্রচুর পরিমাণে শাকসবজি খাওয়া দরকার।
পানি :
ব্যবহারের পানিতে যদি আয়রণ, ক্লোরিনের মাত্রা বেশি থাকে, খুশকি হতে পারে।
মানসিক চাপ :
গবেষণায় দেখা গেছে যারা অতিরিক্ত মানসিক পরিশ্রম করেন, মানসিক চাপে থাকেন, হতাশায় ভোগেন, তাদের মাথায় খুশকি হয়।
বিভিন্ন রোগ :
স্নায়ুবিক সম্পর্ক আছে এ সব রোগ যেমন স্ট্রোক, হৃদরোগ, পার্কিন্স ইত্যাদিতে ভোগলে খুশকি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা:
খুশকির সাথে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার সম্পর্ক আছে। যাদের দেহে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম, তাদের খুশকি হয়।
অতিরিক্ত তেল ব্যবহার :
অনেকে মাথায় বেশি পরিমাণে তেল ব্যবহার করেন। এটা ঠিক নয়। এর ফলে চুলের গোড়ায় জমে থাকা তেলের সাথে বাইরের ধূলা–বালির মিশ্রণে মাথার ত্বকে ময়লায় সৃষ্টি হয়। আর তা থেকে সহজেই ছত্রাকজণিত খুশকি হয়। মাথায় তেল ব্যবহার করতে হবে হাল্কাভাবে, বেশি মাত্রায় নয়।
খুশকির সাথে পরিবেশ এবং গোসলেরও সম্পর্ক আছে। যারা প্রতিদিন গোসল করে না এবং যারা অতিরিক্ত ধূলা–বালি ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বসবাস করেন তাদের খুশকি বেশি হয়। অনেকের কোন কারণ ছাড়াই খুশকি হয়। এটা জন্মগত।
খুশকি থেকে সৃষ্টি হতে পারে প্রদাহজনিত এলার্জি ও নানা রোগ। তৈরি হতে পারে চুল পড়ে যাওয়াসহ বিভিন্ন জটিলতা। হাল্কা খুশিতে তেমন সমস্যা নেই। যদি খুশকির পরিমাণ বেড়ে যায়, তাহলেই জটিলতা।
খুশকি প্রতিরোধে করণীয়:
খুশকি প্রতিরোধে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন পরিষ্কার–পরিচ্ছন্নতা, গোসল, পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও নিয়মিত চুল আঁচড়ানো। নিয়মিত মাথার চুল আঁচড়ানোর ফলে চুলের গোড়ায় ময়লা ও ছত্রাক জমতে পারে না।
নিয়মিত মাথার ত্বক পরিষ্কর রাখা–না রাখার উপরও খুশকি নির্ভর করে। নিয়মিত গোসল করা এবং গোসলের সময় ভালভাবে মাথার ত্বক ঘষে পরিস্কার করা দরকার। যাদের অতিরিক্ত খুশকি হয়, স্যাম্পু ব্যবহার করা যায়, তবে প্রতিদিন স্যাম্পু ব্যবহার করার দরকার নেই।
খুশকি প্রতিরোধে দই একটি ভাল উপাদান। মাথায় পানি দিয়ে ভালভাবে চুল ভিজিয়ে মাথার ত্বকে ১০/১৫ মিনিট দই মেখে অপেক্ষা করুন। তারপর শ্যাম্পু দিয়ে ভালভাবে মাথা ধুয়ে ফেলুন। মাথায় মেহেদি বাটা এবং লেবুর রস লাগালেও খুশকির প্রবণতা কমে আসে।
যদি খুশকি অতিরিক্ত বেড়ে যায়, মাথায় চুলকানিসহ নানা জটিলতা দেখা দেয়, অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া দরকার।
হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা :
হোমিওপ্যাথিতে খুশকি নিরাময়ে ফলপ্রসূ চিকিৎসা আছে। অনেক রোগীকে আমি চিকিৎসা দিয়ে ভাল ফল দেখেছি। আর্স আয়োড, আর্স এল্ব, গ্রাফাইটিস, ফসফরাস, ন্যাট্রাম মিউর, সালফার, সোরিনাম প্রভৃতি ওষুধ থেকে লক্ষণ অনুযায়ী প্রয়োগ করে ফল পাওয়া যায়।