![জেনে নিন ইজি ডায়েট ক্যালকুলেটর](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/04/easy-diet_124238.jpg)
আয়েশা সিদ্দিকা, ০৪ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : বয়সের সঙ্গে সঙ্গে ডায়েটে রদবদল স্বাভাবিক। নির্দিষ্ট বয়সের গ্রুপে খেয়াল রাখা উচিত ডায়েটে বিশেষ ধরনের কিছু খাবার যেন অবশ্যই থাকে। প্রতিটা মানুষের সুস্থ এবং স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকার জন্য দৈনন্দিন ডায়েটে নির্দিষ্ট পরিমাণ খাবার এবং সব ধরনের খাবার থাকা একান্ত জরুরি। “যেহেতু প্রত্যেকের শারীরিক গঠন এবং প্রয়োজন আলাদা তাই এমন কোনও ডায়েট চার্ট নেই যা সকলের জন্যই চলতে পারে। ডায়েট নির্ভর করে আপনার বয়স, লাইফস্টাইল, ফুড হ্যাবিট এবং আরও নানা বিষয়ের উপর।
টিনএজদের যে ধরনের খাবার বেশি পরিমাণে প্রয়োজন একজন বয়স্ক মানুষের প্রয়োজন তার সঙ্গে মিলবে না।
১৩ থেকে ১৯ বছর বয়সে ইজি ডায়েট ক্যালকুলেটর :
এই বয়সের ছেলেমেয়েরা টিনএজার গ্রুপের। এই বয়সে ছেলে এবং মেয়েদের ডায়েটের প্রয়োজনটা একটু আলাদা। ১৯ বছরের মধ্যে বেশিরভাগ মেয়েদেরই গঠন সম্পূর্ণ হয়ে যায়। এই বয়সের পর তারা আর খুব বেশি লম্বা হয় না। এই বয়সে মেয়েদের মেনস্ট্রুয়াল সাইকেল শুরু হয়ে যায়। ফলে এই সময় মেয়েদের প্রচুর পরিমাণে আয়রন দরকার হয়। মোটামুটি ১৩ বছর বয়স থেকেই মেয়েদের পিরিয়ড শুরু হয়। তাই এই সময় আয়রন যুক্ত খাবার ডায়েটে পর্যাপ্ত পরিমাণে না থাকলে নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কিন্তু ছেলেরা আরও কিছুদিন পর্যন্ত বৃদ্ধি পায়। তাই এই সময় ছেলেদের প্রোটিনের প্রয়োজন মেয়েদের তুলনায় বেশি থাকে। মেয়েদের প্রোটিনের প্রয়োজন এই বয়সে ছেলেদের চেয়ে কম। ছেলেদের এই বয়সে প্রোটিনের পাশাপাশি প্রচুর আয়রন প্রয়োজন। কারণ, এই সময় তাদের শারীরিক গঠন হয়। এই সময় অনেকক্ষেত্রে রক্তশূন্যতা দেখা দিতে পারে। অর্থাৎ এই বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে আয়রনের ঘাটতি খুবই সাধারণ সমস্যা। তাছাড়া এই বয়সের আরও একটি কমন সমস্যা ব্রন এবং অপযবহব। বিভিন্ন ধরনের হরমোনাল ডিসব্যালেন্সের জন্য এই ধরনের সমস্যা হয়। তাই সঠিক ডায়েটের বিকল্প নেই। সব ধরনের খাবার খাওয়ার পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়ামও দিতে হবে। এই বয়সে ভিটামিন–ডির অভাবের ব্যাপারে সতর্ক থাকা উচিত। কারণ এতে স্বাভাবিক বৃদ্ধি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।পানি হজমে সহায়তা করে এবং বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করে। প্রচুর পরিমাণে ফল ও সব্জী খাবেন।
প্রতি বেলার খাবার ঠিকমতো খেতে হবে। সকালের নাশতায় ডিম, পাউরুটি, সিরিয়াল এবং কোনো ফল খেতে হবে।
অনেকক্ষণ পর হালকা কিছু খাওয়া যেতে পারে যেমন : সালাদ, বিস্কুট ইত্যাদি। দুপুরে পরিমাণ মতো ভাত, সবজি, মাছ; কখনো মাংস খাওয়া যেতে পারে।
বিকেলে নাশতায় হালকা কিছু খাওয়া যেতে পারে। রাতে সামান্য পরিমাণে ভাত, সবজি এবং মাছ খাওয়া যেতে পারে। কখনো কখনো রুটিও খাওয়া যায়। শরীরের ওজন বুঝে ডায়েট করুন। অবশ্যই শরীরের ওজন ও চাহিদা অনুযায়ী ডায়েটের তালিকা করুন।
জাঙ্কফুড যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলা উচিত। ডায়েটের পাশাপাশি অবশ্যই শরীরচর্চা, খেলাধুলা ও চমথট–তে অংশ নিন।
অবশ্যই প্রতিদিনের ডায়েটে রাখুন
শর্করা :
একজন টিনএজার ছেলে অথবা মেয়ের দিনে অন্তত ১০০ গ্রাম শর্করা জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। এটি শরীরে শক্তি জোগায়। যেমন : ভাত, রুটি, সবজি, বাদাম, ওটমিল ইত্যাদি খাওয়া উচিত।
ক্যালসিয়াম :
ক্যালসিয়াম ৯৯৭ শতাংশ হাড় গঠনে সহায়তা করে, বিশেষ করে কৈশোরে। সুতরাং ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার যেমন: দুধ, দই ইত্যাদি খেতে হবে।
আয়রন :
যেসব খাবারে আয়রণের পরিমাণ বেশি এমন খাবার খেতে হবে। আয়রণ শরীরে অক্সিজেন সরবরাহ করে।
প্রোটিন :
প্রোটিন শরীর গঠনে এবং শক্তি জোগাতে বিশেষ সহায়তা করে। এর অভাবে শরীর গঠনে সমস্যা হয়। প্রোটিনযুক্ত খাবার যেমন: ডিম, দুধ, বিভিন্ন সামুদ্রিক মাছ ইত্যাদি খেতে হবে।
কর্মজীবী মহিলাদের জন্য ইজি ডায়েট ক্যালকুলেটর :
কর্মজীবী মহিলাদের প্রথমেই প্রয়োজন সঠিক ডায়েট প্ল্যানিং। ব্রেকফাস্ট স্কিপ করলে শরীর সারাদিন কাজ করার জন্য প্রয়োজনীয় এনার্জি পায় না। সারাদিন খিদে পেতে থাকে। এবং আমরা জাঙ্ক ফুডে অভ্যস্ত হই। তাই ডায়েট প্ল্যানিং জরুরি। কখনই ব্রেকফাস্ট স্কিপ করবেন না। ছোলা, আখরোট, আমন্ড, ড্রাই মিক্সড ফ্রুট ইত্যাদি সঙ্গে রাখুন। দুম্বটো মিলের মাঝে খিদে পেলে বাইরের খাবার না খেয়ে এগুলো খান। এতে খিদেও মিটবে আবার শরীরের জন্যও উপকারী। চেষ্টা করুন সঠিক সময়ে খেতে। কাজের চাপ থাকলেও চেষ্টা করুন সঠিক সময়ে খেয়ে নিতে। খাবার সময় দুম্বটো মিলের মধ্যে নির্দিষ্ট বিরতি রাখুন। দুম্বটো মিলের মাঝে অনেকক্ষণ না খেয়ে থাকবেন না।
পেস্টিসাইড রোধে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট :
বর্তমানে খাবারে নানা ধরনের পেস্টিসাইড পাওয়া যাচ্ছে। তাই ডায়েটে যথেষ্ট পরিমাণে অ্যান্টি–অক্সিডেন্ট রাখুন। প্রয়োজনে ডায়েট সাপ্লিমেন্টস খান। যাতে শরীরে টক্সিন জমলে শরীর তার বিরুদ্ধে লড়তে পারবে। এরা ড্যামেজিং এর বিরুদ্ধে কাজ করবে। অনেকক্ষেত্রেই আমাদের ডায়েটে সঠিক পরিমাণ ভিটামিন এবং মিনারেল পাই না। ফলে ঘাটতি থেকে যায়। এর থেকে নানা অসুবিধাও দেখা দিতে পারে। তাই শুধুমাত্র আপনার নিউট্রিশনিস্ট ও ডায়েটিশিয়ানের পরামর্শে সঠিক সাপ্লিমেন্টস খান।
ডায়েটে অরগ্যানিক ফুড রাখুন। অরগ্যানিক ফুডে কীটনাশক বা সার কম থাকে।
রান্নায় অরগ্যানিক মশলা ব্যবহার করতে পারেন। অরগ্যানিক ডাল বা রাইস রাখুন ডায়েটে। এতে ব্যালেন্স বজায় থাকবে আবার খরচও তুলনামূলকভাবে কম হবে। সব ধরনের ফল, সবজি খাবেন, ভাল থাকাটা খুবই জরুরি।
মেনোপেজের পর :
হেলদি ডায়েটকরুন। ব্যালেন্স ডায়েট করুন যাতে পাঁচটা ফুড গ্রুপই থাকে। প্রয়োজনীয় সব ধরনের ভিটামিন এবং মিনারেল যেন শরীরে পৌঁছায়। এটা সব এজ গ্রুপের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। মেনোপেজের পর ক্যালসিয়াম ও ইস্ট্রোজেন কমে যায়। হাড় দুর্বল হয়ে যায়, ফলে আর্থ্রাইটিসও হতে পারে। তাই এই সময় ক্যালসিয়াম রিচ ডায়েট প্ল্যান জরুরি।
প্ল্যান্ট সোর্স থেকেও ইস্ট্রোজেন পাওয়া সম্ভব। সয়া প্রডাক্ট খেতে পারেন। হাইপোথাইরডিজম সমস্যায় সয়া বেশি খাওয়া যাবে না। তবে সয়া মিল্ক, ফ্ল্যাটসিড, ক্যালসিয়াম রিচ খাবার ও মিল্ক প্রডাক্ট খেতে পারেন। পোস্ট মেনোপেজে ওজন বেড়ে যাওয়ার সমস্যাও দেখা দেয়। তাই খাওয়া–দাওয়ার পাশাপাশি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখাও খুব জরুরি। ডায়াবেটিসও এই সময় একটি কমন সমস্যা। তাই ওজন ঠিক রাখার পাশাপাশি পরিমিত মাত্রায় খাওয়াদাওয়া করুন। নিয়মিত এক্সারসাইজ করুন। ওয়েট নিয়ে এক্সারসাইজ করতে পারলে সবচেয়ে ভাল। নিয়মিত হাঁটুন, জগিং করুন। নিজেকে অ্যাক্টিভ রাখুন।
ফাইভ ফুড গ্রুপ:
১. গ্রেন বা সিরিয়াল
২. ফল
৩. সবজি
৪. ডেয়ারি
৫. তেলযুক্ত মাছ হচ্ছে ওমেগা–৩ এর সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য উৎস। সামুদ্রিক মাছ ও অন্যান্য সী ফুডে ঋইে এবং ঊঔই থাকে।
অন্য ফ্যাটি আসিড ইীই পাওয়া যায় উদ্ভিদ থেকে বাদাম, ভেজিটেবল ওয়েল (সয়াবিন, অলিভ অয়েল, ফ্লেক্সসিড) এবং ওলিভ ওয়েল। এই সকল ইীই হচ্ছে সর্ট চেইন ফ্যাটি এসিড। আমাদের শরীর এই সর্ট চেইন ফ্যাটি এসিডকে লং চেইন ফ্যাটি এসিডে রূপান্তর করে। ওমেগা থ্রি ফ্যাটি অ্যাসিড হার্ট ডিজিজের জন্য দারুণ উপকারী।
লেখক : কনসালটেন্ট, ইজি ডায়েট
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি