![ক্ষেতলালে কৃষিকাজে পুরুষের পাশাপাশি নারী শ্রমিকরা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/06/field_abnews_124553.jpg)
ক্ষেতলাল (জয়পুরহাট), ০৬ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : কৃষি খাতে নিয়োজিত পুরুষের চেয়ে নারীর অবদান শতকরা ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশের বেশী। দেশে গত ১ দশকে অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের সঙ্গে যুক্ত প্রায় ১ কোটি ৩০ লাখ বাড়তি শ্রম শক্তির ৫০ লাখই নারী শ্রমিক।
জয়পুরহাট জেলার ক্ষেতলালে শত শত নারী শ্রমিক কৃষি জমিতে পুরুষের পাশাপাশি কাজ করছে। এক সময় যে নারীরা ব্যস্ত থাকতো শুধু গৃহের কাজ নিয়ে, সেইসব নারীরা এখন পুরুষের পাশাপাশী কাজ করছে মাঠে-ময়দানে। অভাব মোকাবেলা করে ঘরে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে নারীরা অবদান রাখছে সমানভাবে।
গ্রামাঞ্চলে দরিদ্র পরিবারের একাংশ নারী সংসারের আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষি কাজে শ্রম বিক্রি করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ বোধ করছে।তারা জমিতে ধানরোপন, ধানকাটা,গম কাটা, আলু রোপন, আলুতোলাসহ এমন কোন কাজ নেই যা করতে পারেনা।
ফসল সংগ্রহ পরবর্তী কাজেও তাদের দক্ষতার তুলনা হয় না। প্রায় এক দশক আগে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাঁওতাল ও পালী সম্প্রদায়ের নারী পুরুষ কৃষি শ্রমিকরা এ অঞ্চলে দল বেধে স্ব-পরিবারে এসে শুধু মৌসুমি কাজ করতে দেখা যেতো। এখন আধুনিকায়নের যুগে অন্য সম্প্রদায়ের নারীরাও পরিবারের আয় বৃদ্ধি ও সংসারের স্বচ্ছলতার জন্য তাদের পদাংঙ্ক অনুস্বরণ করে কৃষি কাজে নেমেছে।
দরিদ্র পরিবারের মেয়েরা এখন আর ঘরে বসে নেই, প্রথম দিকে সমাজের কিছু মানুষ নারীদের মাঠে কাজ করাকে ভালো চোখে দেখতো না। অনেকেই মেয়েদের ঘরের বাইরে গিয়ে কৃষি কাজ করাকে সমালোচনা করতো। এখন সে অবস্থা নেই। এ অঞ্চলের নারীরা শুধু কৃষি কাজই করছেনা বিভিন্ন শিল্প, কল কারখানা ও প্রতিষ্ঠানে পুরুষের পাশা পাশি শ্রমিকের কাজ করছে।
সরজমিনে উপজেলার বিনাই, হিন্দা, বাখেরা মাটিহাঁস, তেলাল, কুসুমশহর মাঠ ঘুরে দেখা যায়, রেশমা, সরলা, রহিমা ও জোসনার মত অসংখ্য নারী দল বেধে আলুর জমিতে আলু তোলার কাজ করছে।
কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন এমন কয়েক জন নারীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এ রকম ছোট ছোট দল বেধে সারা বছর কৃষি কাজ করেন। ওই দলের মধ্যে এক জন দলপ্রধান থাকে সে প্রতিদিন কাজের সন্ধান করে। আমরা সবাই মিলে সেই কাজ করি।
বাকেরা গ্রামের কৃষক ওবায়দুর বলেন, দশ থেকে বারো জন নারী মিলে এদের একটা দল থাকে সেই দলে একজন প্রধান থাকে তার সংঙ্গে কথা বলে চুক্তি করলে সে যে কাজ করতে বলবে সে কাজই তারা করে।
এ রকম দলের প্রধান রেশমার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, আমার দলে ৮ থেকে ১০ জন বিভিন্ন বয়সী নারী আছে, জোসনার দলে ১২ জন, সরলার দলে ১০ জন, লাভলীর দলে ১১ জন নারী কৃষি শ্রমিক আছে।
কুশুম শহর গ্রামের কৃষক আশরাফুল বলেন, আমাদের অঞ্চলে এ মৌসুমে আলুর পাশা পাশি বিভিন্ন রকমের সবজীর ব্যাপক চাষ হয়। তখন শ্রমিকের চাহিদা বেড়ে যায় দ্বিগুন। ওই সময় পুরুষ কৃষি শ্রমিকের পাশাপাশি কদর বাড়ে নারী শ্রমিকের। আলু তোলা, আলুরোপন, সবজী তোলা প্রভৃতি কাজে প্রচুর শ্রমিক প্রযোজন পরে। তখন ওই নারী শ্রমিকই কৃষকের একমাত্র ভরসা।
কিন্তু বৈষম্য থাকে মুজুরীতে, প্রতিদিন যেখানে এক জন পুরুষ শ্রমিক মজুরী পান ৪শ’ থেকে ৫শত টাকা সেখানে এক জন নারী শ্রমিক পান ২শ’ থেকে ২শত ৫০ টাকা।
বড়াইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আশরাফ আলী বলেন, চৈত্র-বৈশাখ মাসে মাঠে তেমন কাজ থাকে না তখন কৃষি শ্রমিকের মজুরী একেবারে কমে যায়। ওই সময় সরকার তাদের কর্ম সংস্থান সৃষ্টির লক্ষে ৪০ দিনের কর্মসৃজন কর্মসুচির মাধ্যমে পূর্ণ বাসন করে। আবার জৈষ্ঠ মাস থেকে বোরো ধান কাটা ও ভুট্রা সংগ্রহের সময় কৃষি শ্রমিকের মজুরী বেড়ে যায়। দরিদ্র পরিবারের অধিকাংশ নারী-পুরুষ কৃষি কাজে যোগ দেন।
ক্ষেতলাল উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আলমঙ্গীর কবির বলেন, দ্রুত নগরায়ন ও শিল্পায়নের ফলে গ্রামাঞ্চলের পুরুষ কৃষি শ্রমিক তাদের পেষা পরিবর্তন করছে। অনেকে কৃষি শ্রম বাদ দিয়ে রাজমিস্ত্রি, কাঠমিস্ত্রি কেউ অটো রিক্সা ভ্যান চালাচ্ছে। এসব কাজে কৃষিশ্রম বিক্রির চাইতে অধিক মজুরী পাচ্ছে ফলে কৃষি শ্রমিকের অভাব সৃষ্টি হচ্ছে।
এবিএন/মিজানুর রহমান/জসিম/এমসি