![ফরিদপুরে মহাসড়ক নির্মাণে মাটির কাজে অনিয়মের অভিযোগ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/09/faridpur-highway-corraption_125083.jpg)
ফরিদপুর, ০৯ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : ফরিদপুরের মাঝকান্দি-ভাটিয়াপাড়া মহাসড়ক নির্মানে মাটির কাজে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। বোয়ালমারী উপজেলার মজুরদিয়া বাজার থেকে সাতৈর মাদ্রাসা পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটার সড়কের দুই পাশে মাটি ফেলার কাজে এ অভিযোগ উঠেছে।
স্থাণীয়রা জানায়, মূল ঠিকাদারের নিকট থেকে স্থানীয় সাতৈর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. মুজিবুর রহমানের ভাই এনামুল হক সড়কের পাশে মাটি সরবরাহ করার দ্বায়িত্ব নেয়। অতপর এনামুল নিয়ম বহির্ভুতভাবে নির্মানাধীন সড়কে পাশ থেকেই মাটি তুলে ভরাট করতে থাকেন। প্রভাব খাটিয়ে তিনি স্কেবেটর দিয়ে ফসলী জমি ও স্থানীয়দের বাড়ীর জমি থেকে জোরপূর্বক মাটি কেটে নেয়। এসময় জমির স্বত্বাধিকারীরা মাটি কাটতে নিষেধ করলে মাটি কাটার কাজে নিয়োজিতরা নানা ধরণের হুমকী ধামকী দিয়ে জোর পূর্বক মাটি কেটে নেয়।
মহিশালা এলাকার ভায়লা খাতুন জানান, তার পাকা বসত ভিটা থেকে রাস্তায় ওঠার জায়গা থেকে মাটি ও গাছপালা স্কেবেটর দিয়ে কাটতে শুরু করলে তিনি বাঁধা দিলে মাটি কর্তনকারীরা গালমন্দ করেন এবং হুমকী ধামকী প্রদান করেন। এক পর্যায়ে তিনি স্কেবেটরের সামনে গিয়ে অবস্থান নিলে ওই সময়ের জন্যে মাটি কাটা বন্ধ করা হয়।
মো. মুনসুর মোল্লা জানান, তার জমিতে ধার রোপন করা ছিল, তা স্কেবেটর দিয়ে কেটে ফেলা হয়েছে, বাঁধা দিলেও তারা শোনেনি। তিনি আরো জানান, ওই এলাকার অনেকেরই রাই, সরিষা, গমসহ বিভিন্ন ফসলসহ জমির মাটি কেটে ফেলা হয়েছে।
ওই গ্রামের সুজন মোল্লা জানান, তার জমির সামনের থেকে মাটি কেটে নেয়ার সময় বাঁধা দিলে মামলায় জড়ানোর হুমকী দেয়া হয়।
স্থানীয় এম এম সফিউল্লাহ্ সাফি বলেন, মাটি কাটার সাব ঠিকা গ্রহনকারী এনামুল স্থানীয় সাতৈর ইউপি চেয়ারম্যান মো. মজিবুর রহমানের ভাই হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে অনিয়মতান্ত্রিকভাবে মাটি কাটছে এবং স্থানীয়দের ভয়ভীতি প্রদর্শন করছে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খুলতে পারছেনা।
সাতৈর ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রাজ্জাক মোল্লা জানান, যেভাবে রাস্তার পাশ থেকে মাটি কাটা হচ্ছে তাতে একটি বৃষ্টি হলেই পুরো রাস্তার মাটি ধসে সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তিনি বলেন, এভাবে মাটি কাটায় সড়কই ঝুঁকিতে পড়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে মাটি কাটার সাব-ঠিকা গ্রহনকারী এনামুল হকের সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে পরে কথা বলছি বলে ফোন কেটে দেন।
আর সাৗতর ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান মো. মুিজবুর রহমান বলেন, মাটি কাটার কাজের সাথে আমার কোন সম্পৃক্ততা নেই। আমার ভাই সহ কয়েকজন কাজ করলেও আমার কোন যোগাযোগ নাই।
ওই এলাকার কাজ তদারকিতে থাকা উপ-সহকারী প্রকৌশলী আওলাদ হোসেন জানান, নির্মানাধীন সড়কের নিচের অবস্থান থেকে অন্তত ১৫ ফুটের মধ্যে থেকে বা যেখান থেকে মাটি কাটলে সড়ক ঝুকিপূর্ণ হবে এমন জায়গা থেকে মাটি কাটার কোন সুযোগ নেই। লেভেল থেকে দুরের মাটি সংগ্রহ করায় কোন বিধি নিষেধ নাই। তিনি জানান, ঠিকাদার চাষীকে ম্যানেজ করে সড়ক থেকে নির্দিষ্ট পরিমান দুরের জমি থেকে মাটি দিতে পারে। মাটি কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বারবার বলা সত্ত্বেও তারা সড়কের পাশ থেকে মাটিকাটা বন্ধ করেনি। পরে মাটি কাটা বন্ধের জন্যে ঠিকাদারকে চিঠিও দেয়া হয়েছে।
মজুরদিয়া বাজার এলাকা থেকে সাৗতর পর্যন্ত আট কিলোমিটার মহাসড়ক নির্মানের ঠিকাদারী পেয়েছে রানা বিল্ডার্স। ওই প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি রবিন চৌধুরী জানান, আমরা সাব ঠিকাদার নিয়েগে দিয়ে মাটির কাজ করাচ্ছি। কাজে অনিয়ম হচ্ছে বলে জেনেছি। তদন্ত করে প্রমাণ পাওয়া গেলে ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার মাঝকান্দি থেকে গোপালগঞ্জের ভাটিয়াপাড়া পর্যন্ত ৪৩ কিলোমিটার মহাসড়ক একশ ৫০ কোটি টাকা ব্যায়ে নির্মান কাজের দরপত্র আহ্বান করা হলে ছয়টি গ্রুপে ছয়টি ছয়টি প্রতিষ্টান কাজ পায়। সড়কটি ২৪ ফুট চওড়া করা হচ্ছে।
এবিএন/কে. এম. রুবেল/জসিম/নির্ঝর