![গুরুদাসপুরে ১০ কোটি টাকার চাল নিয়ে উধাও](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/11/nator_abnews24_125503.jpg)
বড়াইগ্রাম (নাটোর), ১১ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার চাঁচকৈড় মোকামের ২২ জন চাউল ব্যবসায়ীর নিকট থেকে ১০ কোটি ছয় লাখ টাকার চাল নিয়ে উধাও হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। চাঁচকৈড় বাজারের ‘মেসার্স শাহ্ এগ্রোফুড’ এর প্রতিষ্ঠান ছাবেন শাহ (৪৫) নামে এক ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। এদিকে প্রতারণা ও টাকা আত্মসাতের ঘটনায় উধাও হওয়া ব্যবসায়ী ছাবেন শাহ’র বিরুদ্ধে গুরুদাসপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের পক্ষে ব্যবসায়ী গোলাপ তালুকদার ওই অভিযোগটি দাখিল করেন। গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) দিলীপ কুমার দাস গতকাল রোববার অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের পক্ষে গোলাপ তালুকদার, ইমরুল শাহ, দিলীপ কুমার ঘোষসহ কমপক্ষে ১০জন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, ব্যবসায়ী ছাবেন শাহ চাঁচকৈড় মোকামের এসব ব্যবসায়ীদের নিকট থেকে দীর্ঘ দিন ধরে নগদ ও বাকিকে চাউল কিনতেন। সর্বশেষ গত জানুয়ারি মাসেও প্রায় ৪০ ট্রাক চাল বাকিতে ক্রয় করেন ব্যবসায়ী ছাবেন শাহ। গত ২৭ জানুয়ারি এসব ব্যবসায়ীরা তাদের পাওনা বকেয়া বাকি টাকার তাগাদা দেন। এসময় টাকা পরিশোধ না করে পাওনাদার ব্যবসায়ীদের সাথে অসাদাচরণ করেন ব্যবসায়ী ছাবেন শাহ। বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছে মৌখিক অভিযোগদেন ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা। এরই ফাঁকে টাকা পরিশোধ না করে উধাও হন তিনি।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা আরো অভিযোগ করে বলেন, ব্যবসায়ীদের এত মোটা অংকের টাকা আত্মসাত করে উধাও হওয়ার পেছনে ছাবেন শাহর ভাই সেলিম শাহ, মালুশাহ ও চাচাতো ভাই মশিউর রহমানের যোগসাজশ রয়েছে। তাদের প্ররোচনায় পরিকল্পিতভাবে এসব ব্যবসায়ীদের চাল বাকিতে নিয়ে উধাও হয়েছেন। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের মধ্যে গোলাপ তালুকদার এককোটি ৪৮ লাখ ৫৬ হাজার ৬২৪ টাকা, ব্যবসায়ী রবিউল করিম এক কোটি ১৫ লাখ ৮১হাজার ৬২৩ টাকা, ব্যবসায়ী কছিমুদ্দিন এককোটি ৪৩ লাখ ব্যবসায়ী সিদ্দিক মোল্লা ৮৬ লাখ, শাহিন প্রামানিক ৭২ লাখ দিলীপ কুমার ঘোষ ৬৫ লাখ, ইমরুল হোসেন ৫৩ লাখ ৩৯ হাজার ৪৭৭ টাকাসহ সর্বনি¤œ ৫ লাখ টাকার চাউল বাকিতে ক্রয় করেন ছাবেন শাহন।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীরা দাবী করেন, ক্ষতিগ্রস্থ এসব ব্যবসায়ীরা ধানসেদ্ধ-শুকানোর চাতাল, কেউ কেউ বাড়ি- ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধক রেখে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ব্যবসা পরিচালনা করছেন। অনেক ব্যবসায়ী মোকাম থেকে ধান-চাল বাকিতে কিনে এনে ছাবেন শাহর কাছে বাকিতে চাল বিক্রি করেছেন। কিন্তু ব্যবসায়ী ছাবেন শাহ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে উধাও হয়ে পড়ায় তারা এখন উদ্বিগ্ন। উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সভাপতি আয়নাল হক তালুকদার বলেন, ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসায়ীদের তালিকায় তিনিও রয়েছেন। পাওনা টাকা আদায়ে ছাবেন শাহ’র সাথে কয়েক দফা বৈঠকও হয়েছে। নানা অজুহাতে সময় ক্ষেপন করে এখন নিরুদ্দেশ তিনি। তার স্বজনদের বলেও সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা।
উপজেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ছামসুল হক শেখ ও উপজেলা রড-সিমেন্ট মালিক সমিতির সাধারন সম্পাদক ইমরান হোসেন শাহ বলেন, স্থানীয়ভাবে আপোসের চেষ্টা করে তারা ব্যর্থ হয়েছেন। বাধ্য হয়ে ক্ষতিগস্থ ব্যবসায়ীরা থানায় অভিযোগ দিয়েছেন। তবে ব্যবসায়ীদের বকেয়া টাকা আদায় না হলে ব্যাংক ঋণের টাকা পরিশোধ করতে গিয়ে দেউলিয়া হয়ে পথে বসবেন এসব ব্যবসায়ীরা।
এব্যাপারে অভিযুক্ত ব্যবসায়ী ছাবেন শাহর বক্তব্য নেওয়ার জন্য গতকাল বেলা সোয়া চারটার দিকে তাঁর ব্যবহৃত মুঠোফোনটি (০১৭৭২-৮০৫১১৭) বন্ধ থাকায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি। তার চাচাতো ভাই সাবেক পৌর মেয়র মশিউর রহমান মুঠোফোনে দাবী করেন, গত ৬-৭ বছর ধরে পরিবারসহ তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন। ছাবেন শাহর সাথে তার কোন ব্যবসায়ীক সর্ম্পক নেই। যোগসাজশ থাকার প্রশ্নই ওঠেনা। রাজনৈতিকভাবে হেয় করতেই অভিযোগে তাকে জড়ানো হয়েছে।
ছাবেন শাহর ছোট ভাই সেলিম শাহ দাবী করেন, তিনি পৃথকভাবে বসবাস করেন। ‘মেসার্স শাহ এন্টার প্রাইজ’ নামে পৃথক রড-সিমেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত। বাংক ঋণ এবং মহাজনের কাছে বাকিতে পণ্য নিয়ে ব্যবসা করছেন। তার ভাইয়ের ব্যবসার সাথে কোন সম্পর্ক নেই। তার পরও কতিপয় ব্যবসায়ী তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ‘ভাইয়ের কারনে’ তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন। তবে ব্যবসায় ক্ষতিগস্থ হয়ে তার ভাই ছাবেন শাহ এলাকা ছেড়েছেন। কে কত টাকা পাবেন তার হিসাব ভাই ছাবেন শাহ-ই বলতে পারবেন।
এবিএন/আশরাফুল ইসলাম আশরাফ/জসিম/তোহা