![বদলগাছীতে স্কুল ছাত্রকে বেত্রাঘাত শিক্ষিকা লাঞ্ছিত!](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/12/techer@abnews_125649.jpg)
বদলগাছী (নওগাঁ), ১২ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : নওগাঁর বদলগাছীতে উপজেলার ঝাড়ঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গত শনিবার পাঠাদানের সময় শিক্ষকের বেত্রাঘাতে পঞ্চম শ্রেণীর এক ছাত্র মোঃ রিয়াদ হোসেন অসুস্থ্য’ হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তার পরিবার। তবে শিক্ষকেরা বেত্রাঘাতের কথা অস্বীকার করে বলেছেন, অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে শিক্ষকেরা ওই ছাত্রকে দেখতে তাদের বাড়িতে গেলে অভিভাবক ও গ্রামের কিছু উশৃঙ্খল লোকজনেরা উল্টো তাঁদেরই লাঞ্ছিত করেছেন। এঘটনায় গত শনিবার রাতে ছাত্রের অভিভাবক ও শিক্ষকেরা থানায় পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছে।
বিদ্যালয় শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, গত শনিবারে রিয়াদ হোসেন বিদ্যালয়ে যায়। কাগজের টুকরায় অশ্লীল কথা লেখে রাখে সে। রিয়াদের সহপাঠীরা অশ্লীল কথা লেখা কাগজের টুকরাটি শিক্ষিকা মিতা রানীকে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শিক্ষিকা মিতা রানী রিয়াদ হোসেনকে সামান্য বেত্রাঘাত করেন। এঘটনার পর পাঠদান বিরতির সময় কাউকে না জানিয়ে বাড়িতে চলে যায় রিয়াদ। রিয়াদ হোসেন বাড়িতে এসে এক পর্যায়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। সে তার অভিভাবদের ঘটনাটি জানায়। অভিভাবকেরা গ্রামের লোকজনদের ডেকে এনে রিয়াদের অবস্থা দেখায়। এতে গ্রামের লোকজন শিক্ষকদের ওপর ক্ষুব্ধ হন। অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে শিক্ষিকা মিতা রানী দুপুরে রিয়াদ হোসেনের বাড়িতে দেখতে গেলে রিয়াদের অভিভাবক ও গ্রামের লোকজন তাঁর ওপর চড়াও হন। তিনি সেখান থেকে বিদ্যালয়ে ফিরে গিয়ে ঘটনাটি প্রধান শিক্ষিকাকে জানান। পরে প্রধান শিক্ষিকাসহ অন্য শিক্ষকেরা আবারও রিয়াদের বাড়ি গেলে একই ঘটনা ঘটে।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রিয়াদ হোসেন বলে, আমি কোন অশ্লীল কথা কাগজে লিখিনি অথচ মিতা রানী ম্যাডাম শ্রেণিকক্ষে আমাকে প্রচুর বেত্রাঘাত করেছে। রিয়াদ হোসেনের মা রেহেনা খাতুন বলেন, শ্রেণীকক্ষে সামান্য দুষ্টামী করায় শিক্ষক মিতা রানী আমার ছেলেকে প্রচুর মারধর করেছে। এতে আমার ছেলে অসুস্থ্য পড়েছে। প্রধানশিক্ষিকা বিদ্যালয়ে প্রায় দিনই দেরীতে আসেন। তিনি ঠিকমতো বিদ্যালয়েও থাকেন না। প্রধান শিক্ষকের বদলির আবেদন পত্রে আমার ছেলে রিয়াদ হোসেন সই দেওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ ঘটনা ঘটানো হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
শিক্ষিকা মিতা রানী বলেন, কাগজে অশ্লীল কথা লেখায় রিয়াদ হোসেনকে সামান্য শাসন করেছি। এতে রিয়াদ অসুস্থ্য’ হওয়ার কথা নয়। প্রধান শিক্ষকের ওপর প্রতিশোধ নিতে আমার ওপর মিথ্যা দোষ চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। ছেলেটা অসুস্থ্যতার খবর পেয়ে আমি তাকে দেখতে বাড়িতে গেলে উল্টো তার অভিভাবক ও কয়েকজন গ্রামবাসী আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে আমাকে দাক্কাধাক্কি করে।
প্রধান শিক্ষিকা তানজিদা আখতার বলেন, আমরা স্কুলে লেখাপড়া শিখাতে যাই। অনেক ছেলে মেয়ে থাকে এবং অনেক ছেলে-মেয়ে ভুলত্র“টি করে। আমরা শিক্ষার ক্ষেত্রে ছাত্র-ছাত্রীকে শাসন করতে গেলে যদি লাঞ্চিত হতে হয় এটা দুঃখজনক। আমরা ঐদিন বারবার সমঝোতার চেষ্টা করেছি কিন্তু তারা আমাদের বিরুদ্ধে থানায় মামলা করতে আসে। বাধ্য হয়ে শিক্ষিকা মিতা রানী ও আমাকে লাঞ্চিত করায় আমি বাদী হয়ে এ ঘটনাকে উস্কে দেওয়ায় বিদ্যালয়ের সভাপতি রফিকুল ইসলাম রয়েল ও সেলিম নামে একজনের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করি। আমি এ ঘটনার সুবিচার দাবি করছি। অপরদিকে স্কুলে রিয়াদকে বেত্রাঘাত করার অপরাধে তার বাবা এনামুল হক বাদী হয়ে প্রধান শিক্ষিকা তানজিদা আখতার ও মিতা রানীর বিরুদ্ধে বদলগাছী থানায় মামলা দায়ের করে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে এলাকায় ব্যাপক তোলপাড় চলছে। আজ সোমবার বিকাল ৫টার পরে উপজেলার সকল শিক্ষক-শিক্ষিকা উপজেলা পরিষদ চত্ত্বরের সামনে শিক্ষক নির্যাতন প্রতিরোধে এক মানবন্ধন কর্মসূচী পালন করে। উপজেলার বিভিন্ন স্কুলে ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে শিক্ষক লাঞ্চিত হচ্ছে। এ ঘটনার প্রতিকার চেয়ে মানববন্ধন শেষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি মোঃ আবুল কালাম আজাদ, সাধারণ সম্পাদক মোখলেছার রহমান, শিক্ষক আব্দুর রশিদ, দেলোয়ার হোসেন, আব্দুর রউফ, দিপালী প্রমূখ। ঐ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি মোঃ রফিকুল ইসলাম রয়েল এর সংগে মোবাইল ফোনে কথা বললে তিনি জানান ছাত্র রিয়াদকে মারপিটের ঘটনা শুনে আমি তার বাড়িতে যাই এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন করি। এর আগেও একটি ছাত্রকে মারপিট করেছিল আমি সেদিনও পরি¯ি’তি নিয়ন্ত্রন করি। অথচ রাতে আমি শুনতে পাই থানায় আমার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হয়েছে। পরবর্তীতে আমরাও অভিভাবককে বাদী করে প্রধান শিক্ষক ও সহকারী শিক্ষিকার বিরুদ্ধে থানায় মামলা করি।
বিষয়ে উপজেলা শিক্ষা অফিসার মোঃ ছানাউল হাবীব এর সংগে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান আমার কাছে কোন লিখিত অভিযোগ আসেনি। তবে আমি বিষয়টি শুনেছি রিয়াদ নামে এক ছাত্র একটি সাদা পাতায় অশ্লীল কথা লিখে অন্য এক ছাত্রীর হাতে দেয়। ঐ ছাত্রী ঐ কাগজ শিক্ষিকার হাতে দিলে রিয়াদকে শাসন করে। এ ঘটনা নিয়ে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।
বদলগাছী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জালাল উদ্দীন বলেন, ঝাড়ঘড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ঘটনায় থানায় পাল্টাপাল্টি দুটি মামলা হয়েছে।
এবিএন/হাফিজার রহমান/মমিন/জসিম