বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • তিতাসে ১১৫ স্কুলের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নেই

তিতাসে ১১৫ স্কুলের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নেই

তিতাসে ১১৫ স্কুলের মধ্যে অধিকাংশ বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নেই

তিতাস (কুমিল্লা), ১৩ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : ভাষা আন্দোলনের ৬৬ বছর অতিবাহিত হবার পরেও কুমিল্লার তিতাস উপজেলায় শহীদদের স্মরণে অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, নিম্ন মাধ্যামিক ও মাদ্রাসাগুলোতে কোন শহীদ মিনার নেই।

উপজেলার ১৩ টি মাধ্যমিক, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক, ৯টি মাদ্রাসা ও ৯৩ টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসকল বিদ্যালয় গুলোর মধ্যে নাম মাত্র কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। শহীদ মিনার না থাকায় ভাষা আন্দোলনের প্রকৃত ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত শিক্ষার্থীরা।

যাদের ত্যাগ, তিতিক্ষা ও রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ও ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি স্মারক এবং আমাদের অস্তিত্বের প্রতীক সেই ৫২’ভাষা আন্দোলনের শহীদদের স্মরণে বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নেই। মাতৃভাষা দিবসে শহীদদের শ্রদ্বা জানাতে শিক্ষার্থীরা স্ব-স্ব বিদ্যালয়ে স্থায়ীভাবে শহীদ মিনার নির্মাণের দাবি জানালেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এ পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।

কয়েকটি মাধ্যমিক ও প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার থাকলেও বছরে দু’তিন দিন পরিস্কার করা হয়। বাকি দিন গুলোতে কেউ আর খবর রাখেনা বললেই চলে।

অনেক শিক্ষার্থীরা অমর ২১ ফেব্রুারি ও ভাষা আন্দোলনের শহীদদের অবদান সম্পর্কে তাদের নুন্যতম ধারণা নেই। দিবস গুলোকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হলেও তাতে শেখার কিছুই থাকেন। ফলে নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে না ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা ও প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সুত্রে জানা যায় উপজেলায় হাতে গোনা কয়েকটি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার আছে। তবে বছরের অধিকাংশ সময় এ শহীদ মিনারগুলো অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে। শুধু জাতীয় অনুষ্ঠানে ধুয়ে-মুছে সাফ করা হয়। দিবস শেষে শহীদ মিনারের খবর রাখেনা কেউ। বছরের অধিকাংশ সময় শহীদ মিনার থাকে অবহেলিত। আর এসব শহীদ মিনারে নিরাপত্তা বেষ্টনী না থাকায় অযত্ন অবহেলায় অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে থাকে শহীদ মিনারগুলো।

সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় উপজেলা সদর কড়িকান্দি উত্তর পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গাজীপুর মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, শাহপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ৫০/৬০টি বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই। দীর্ঘদিন যাবৎ অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে এই বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদান দিয়ে আসছে। শিক্ষিত, অভিজাত ও ধনাঢ্য পরিবারের সন্তানেরা এখানে পড়ালেখা করে।অথচ এসব বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নেই।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল আউয়াল জানান, তিতাস উপজেলায় ৯৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এর মধ্যে হাতে গোনো কয়েকটিতে শহীদ মিনার আছে। বাকি বিদ্যালয়গুলোতে শহীদ মিনার নেই। যে সকল বিদ্যালয়ে শহীদ মিনার নেই সে সকল বিদ্যালরে প্রধানদেরকে শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলোতে সুনামের সঙ্গে শিক্ষার্থীরা পড়াশনা করে।

কিন্তু শহীদ মিনার না থাকার ধরুন শিক্ষার্থীরা ভাষা আন্দোলনের সঠিক ইতিহাস থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোসা. আনোয়ারা চৌধুরী বলেন, তিতাসে ১৩ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১টি নিম্ন মাধ্যমিক ও ৯টি মাদ্রাসা আছে। এর মধ্যে হাতে গোনা কয়েকটিতে শহীদ মিনার নেই। তবে যে সকল বিদ্যালয়ে ও মাদ্রাসায় শহীদ মিনার নেই সে সকল প্রতিষ্ঠানের প্রধানদেরকে দ্রুত শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য বলা হয়েছে।

ভাষাসৈনিক ও তিতাস উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব আব্দুর রব মিয়া দৈনিক সমকালের সাংবাদিককে জানান, ভাষা আন্দোলনের স্মৃতি নতুন প্রজন্মকে জানাতে প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও মাদ্রাসাগুলোতে শহীদ মিনার নির্মাণ করা প্রয়োজন।

ভাষাসৈনিকদের আত্নত্যাগের বিনিময়ে আমরা বিজয় অর্জন করি। কিন্তু দুঃখের বিষয় ৬৬ বছরেও আমরা সর্বস্তরে সঠিক বাংলা ভাষা ব্যবহারে ব্যর্থ হয়েছি। ফেব্রুয়ারি মাস এলেই আমরা কেবল তৎপর হয়ে পড়ি। আমরা আজ পর্যন্ত শহীদ মিনারের পবিত্রতা রক্ষা করতে পারিনি।

সারা বছর শহীদ মিনারগুলো অযত্ন অবহেলায় পড়ে থাকে। শুধু জাতীয় দিবসগুলোতে শহীদ মিনারের চেহেরা পাল্টে যায়। অমর ২১ আন্তর্জতিকা মাতৃভাষা দিবস স্বীকৃতি পাওয়ায় এখন বিশ্বের প্রায় দু’শতাধিক দেশে যথাযোগ্য মর্যাদায় শহীদ দিবস পালিত হবে। এই জন্য গর্বে আমাদের বুকটা ভরে যায়। তবে সবচেয়ে দুঃখ আমাদের অর্জিত প্রাণ প্রিয় বাংলা ভাষা সঠিকভাবে সর্বস্তরে প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে ব্যবহার হচ্ছে না। তবে সর্বস্তরে বাংলা ভাষার ব্যবহার বাস্তবায়নে তিনি জোর দাবি জানান।

এবিএন/কবির হোসেন/জসিম/রাজ্জাক

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত