শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়া

ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়া

ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঝুঁকিতে শিল্প ও বন্দর নগরী নওয়াপাড়া

অভয়নগর (যশোর), ১৫ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : যশোরের অভয়নগরের বানিজ্য শহর নওয়াপাড়া যেকোন মুহুতে পুড়ে যেতে পারে। যত্রতত্র সেখানে সেখানে খোলা জায়গায় ধাতব পদার্থ কয়লা রাখার কারনে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের মাধ্যমে এই অবস্থা সৃষ্টি হতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করেছেন। তারা আরো উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত কয়লার বিষ যা ছড়িয়ে পড়ছে মানবদেহে। যা থেকে ফুসফুসে মারাত্বক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। কয়লা জনবসতি এলাকা ও মহা-সড়কের পাশে খোলা জায়গায় ড্যাম্পিং করে রাখার ফলে শিশু ও বৃদ্ধরা শ্বাসকষ্ঠে আক্রান্ত হচ্ছে।

ঘরের দরজা জানালা বন্ধ করে বসবাস করছে ওই এলাকার মানুষ। এমনকি খাবারেও মিশে যাচ্ছে কয়লার বিষ, আর এ খাবার খেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়ছে তারা। এ নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কোন মাথা ব্যাথা নেই, তারা মাসোহারা পেয়েই তুষ্ট রয়েছেন বলে সচেতন মহলের অভিযোগ। এ বিষয়ে প্রতিকারের জন্য গত কয়েকদিন যাবৎ একাধিক জায়গা থেকে এই প্রতিনিধির কাছে ফোন আসতে থাকে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, যশোর-খুলনা মহাসড়কের নওয়াপাড়ার বেঙ্গল গেট এলাকা থেকে শুরু করে চেঙ্গুটিয়া পর্যন্ত রেলওয়ের দু’পাশে আমদানিকৃত কয়লা এনে ড্যাম্পিং করে রাখা হয়েছে। যার সব চেয়ে বেশি প্রভাব পড়ছে নওয়াপাড়া রেলগেট খাবারের হোটেলের পাশে, নওয়াপাড়া মডেল সরকারী প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে যা কলাতলা স্কুল নামে পরিচিত। এখানে যশোর-খুলনা মহাসড়কের গা-ঘেষে রাখা এই কয়লার কারণে একদিকে যানজট বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অপরদিকে সড়ক সরু হয়ে যাওয়ায় এখানে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনার আশংকা করছে পথচারীরা। কিন্তু সংশ্লিষ্ট প্রশাসন যেন কানে তুলা দিয়ে রেখেছে। জনসাধারণের এমন আকুতি যেন তাদের কানেই পৌছাচ্ছে না।

এলাকাবাসি জানায়, মহা-সড়কের পাশে এনে রাখা কয়লার ড্যাম্প থেকে প্রতিনিয়ত কয়লার ঝাঁজালো বিষক্রিয়া ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসের মাধ্যমে। আর এই বিষক্রিয়া সাধারণ মানুষের শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে ভিতরে গিয়ে প্রবেশ করছে। এতে ক্ষতি হচ্ছে সাধারণ মানুষসহ এলাকাবাসির।তাছাড়া বৃক্ষরাসী মারাত্বক ক্ষতিসাধিত হয়ে পরিবেশ বিপরজয় দেখা দিয়েছে। আর এ কয়লার ড্যাম্প থেকে যখন ভেকু কিংবা স্কেভেটরের সাহায্যে ট্রাক লোড করা হচ্ছে তখন ওই এলাকা ধুলায় অন্ধকারাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছে।

আর এই ধুলা গিয়ে মহা-সড়কে চলাচলকারী মানুষের চোখে মুখে লেগে ধুলায় মলিন হচ্ছে। ফলে নিশ্বাসের সাথে এই বিষাক্ত ধুলা ভেতরে প্রবেশ করে তাদের জীবন যাত্রাকে হুমকির মুখে ফেলছে। আবার বসতিপূর্ণ এলাকা হওয়ায় ওই সব বাড়ি ঘরের মধ্যে কয়লার বিষক্রিয়া ও কয়লার ধুলা গিয়ে প্রবেশ করছে বাড়ি ঘরের মধ্যে। এতে করে বাড়ি ঘরে সকল আসবাবপত্র কয়লার ধুলায় ঢেকে যাচ্ছে। উপায় অন্ত না পেয়ে এলাকাবাসি তাদের বাড়ি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রেখে বসবাস করছে। দিন-রাত বাড়ি ঘরের দরজা জানালা বন্ধ রেখে বসবাস করার ফলে বাহিরের আলো বাতাস বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে তারা। এতে দেখা দিচ্ছে আরেক বিপত্তি।

ফলে ওই সব বাড়ি ঘরের মানুষেরা অল্প দিনে হয়ে পড়ছে অসুস্থ্য। এলাকাবাসির দাবি, ব্যবসা বাণিজ্যের পন্য হিসেবে কয়লা ব্যবহার হয়ে আসছে খুব গুরুত্বের সাথে। কিন্তু এই সব কয়লা বসতিপূর্ণ এলাকায় না রেখে যেখানে বসতি নেই বা খালি জায়গা রয়েছে সেখানে ডেকে রেখে ট্রাক লোড-আনলোড করলে এলাকার সাধারণ মানুষ তাদের স্বাভাবিক জীবন যাত্রা ফিরে পেত।

অন্যদিকে মহা-সড়কের পাশে রাখার কারণে পথচারীদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা থেকে রেহায় পেত ওইসব যাত্রীরা। আবার মহা-সড়কের পাশে কয়লার ড্যাম্প করায় সড়ক সংকীর্ণ হচ্ছে। যে কারণে এখানে প্রতিনিয়ত ঘটছে দুর্ঘটনার মত মারাত্মক ঘটনা। আবার দীর্ঘক্ষণ যানজট লেগে থাকতে দেখা গেছে ওই এলাকাগুলিতে। এ নিয়ে যেন মাথা ব্যাথা নেই সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের।

এলাকাবাসির অভিযোগ, পরিবেশ অধিদপ্তর এ ব্যাপারে যেন কোন খবরই জানেনা। তাদের কর্মতৎপরতা না থাকায় বিশ্ময় প্রকাশ করেছে ওই এলাকার সাধারণ মানুষ। তাদের অভিযোগ পরিবেশ অধিদপ্তর মাসোহারা পেয়েই তুষ্ট রয়েছে। তাই এব্যাপারে তাদের কোন নজরদারি চোখে পড়ছেনা। বেঙ্গল গেট এলাকার এক বাসিন্দা বলেন, তার বাড়ি পাশে একটু খালি জায়গা ছিল এক ব্যক্তি তা কয়লা ব্যবসায়ীর কাছে ভাড়া দিয়েছে। এতে আমাদের পরিবারের সদস্যদের শ্বাসকষ্ঠে আক্রান্ত হচ্ছে।

নওয়াপাড়া গ্রামের গোলাম রসুল নওয়াপাড়ার সাংবাদিকদের ফোন করে দাওয়াত দেন। তিনি জানান, ‘আমাদের বাড়িতে এসে একটু মাংশ ভাত খেয়ে যান। কয়লার গুড়ার সাথে মাংশ ভাত খেতে কি মজা একটু দেখে যান। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নওয়াপাড়ায় সাংবাদিকরা কি জন্যে আছেন? আমার জানতে ইচ্ছা হয়।

এভাবে কি কোন বাড়িতে বসবাস করা যায়? আপনারা যদি এগুলি নিয়ে না লেখেন তাহলে আমাদের মত সাধারণ মানুষের কথা সংশ্লিষ্ট কর্তা ব্যক্তিদের কাছে কিভাবে পৌছাবে?’। মহাসড়কের ভ্যানযাত্রী সিরাজুল ইসলাম জানান, আমি প্রতিদিন এই রাস্তা দিয়ে নওয়াপাড়া বাজারে যাই।

পাঁচ কবর এলাকায় আসলে জীবন হাতের মুঠোই নিয়ে এই সড়কটুকু পার হতে হয়। যশোর-খুলনা মহাসড়কের পাশে বস্তা ভরে একেবারে মেইন রাস্তার সাথেই খাড়ি বেধে দেওয়াল বানিয়ে খামাল দিয়ে রাখা হয়েছে কয়লা। এখানে একসাথে দুটি গাড়ি ক্রস করতে পারেনা তাই এখানে আসলে জীবন হাতের মুঠোই নিয়ে পার হতে হয়।বেঙ্গল রেল গেটে খাবার হোটেলের সাথে কয়লা রাখা হয়েছে যা এলাকাবাসী চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। এ বিষয় খুলনা পরিবেশ অধিদপ্তরের পরিচালক হাবিবুল হক খানের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি জানান কয়লা দ্রাতব পদার্থ খোলা স্থানে রাখা বেআইনি।

গোডাউনের মধ্যে অথবা খোলা জায়গায় রাখলে কয়লা ডেকে রাখতে হবে। তবে বসতি এলাকায় কোন রকম কয়লা রাখা যাবেনা। কারন হিসেবে তিনি বলেন এ থেকে ভয়াবহ অগ্নিকান্ড ঘটতে পারে। তবে কেন এখানে যত্রততত্র কয়লা রাখা হয়েছে । পরিবেশ অধিদপ্তর কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না ।

এবিষয় তিনি জানান জরিপের কাজ চলছে এর পর ব্যবস্থা নেয়া হবে। যত্রতত্র কয়লা রাখার কারনে মানব দেহের কি ক্ষতি হতে পারে এই বিষয় খুলনা মেডিকেল কলেজের অধ্যাপক ডাক্তার শেখ আমীর হোসেন বলেন, ফুসফুসে মারাত্বক ক্ষতিসাধিত হতে পারে। তিনি বলেন কয়লার খনিতে যে শ্রমিকরা কাজ করে তাদের যে ক্ষতি হয় একই ক্ষতি কয়লা যেখানে রাখা হয় তার আশ-পাশ এলাকার মানুষের হতে পারে।

এবিএন/মো: সেলিম হোসেন/জসিম/রাজ্জাক

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত