
ডা. মো. কামরুজ্জামান (পিটি), ১৭ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : বিশ্বজুড়ে পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, স্ট্রোকজনিত মৃত্যুর সংখ্যা তৃতীয় এবং স্ট্রোকের কারণে স্নায়ুজনিত অক্ষমতার অবস্থান ২য়। মেডিকেল ভাষায় স্ট্রোককে সেরেব্রো ভাস্কুলার ডিজিজ বলে।
ব্রেইন বা মস্তিস্কের স্ট্রোক সাধারণত দুই ধরণের হয়ে থাকে:
১. ইস্কেমিক স্ট্রোক যেখানে মস্তিস্কের মধ্যকার ধমনিগুলোতে রক্ত চলাচল কম হয়।
২. হেমরেজিক স্ট্রোক যেখানে মস্তিস্কের মধ্যকার ধমনিগুলো ছিঁড়ে রক্ষক্ষরণ হয়।
মস্তিঙ্কের স্ট্রোক কেন হয়?
বিভিন্ন কারণে ব্রেইন বা মস্তিস্কের স্ট্রোক হতে পারে।
যেমন-
অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারলিপিডেমিয়া বা আথেরস্কেলরসিস।
অবেসিটি বা অধিক ওজন, ধুমপান, মানসিক দুশ্চিন্তা, নিদ্রাহীনতা, এথেরঅ্যাম্বলিজম বা কারডিওঅ্যাম্বলিজম।
ব্রেইন টিউমার, হেড ইনজুরি বা আঘাতজনিত, মেনিনজাইটিস, এইচআইভি, হেমাটোলজিক্যাল ডিস–অর্ডার।
মস্তিস্কের স্ট্রোকে রোগীর কী কী উপসর্গ দেখা যায়?
রোগীর এক পাশের হাত এবং পা আংশিক বা প্যারালাইসিস হয়ে যায়।
রোগী আক্রান্ত হাত ও পা নাড়াতে পারেন না।
আক্রান্ত হাত ও পায়ের ওপর ভর দিতে পারেন না।
সঠিকভাবে কথা বলতে পারেন না অনেক ক্ষেত্রে মুখ বাঁকা হয়ে যায়।
খাবার খেতে কষ্ট হয়।
প্রস্রাব ও পায়খানায় নিয়ন্ত্রণ থাকে না।
অনেক সময় মাথাব্যথা করে, বমি ভাব হয়।
ঘুম স্বাভাবিকভাবে হয় না।
কিছু কিছু রোগী মেমোরি বা পূর্বের ইতিহাস ভুলে যায় বা পরিচিত মানুষের চিনতে পারেন না।
রোগ নির্ণয়ে প্রয়োজনীয় পরীক্ষা–নিরীক্ষা:
এই রোগের ক্ষেত্রে কিছু প্যাথলজিক্যাল ও রেডিওলজিক্যাল পরীক্ষা খুবই জরুরি। যেমন-
১। প্যাথলজিক্যাল
সিবিসি উইথ ইএসআর, সেরাম কালেস্টেরল লেভেল, সেরাম ইলেক্ট্রোলাইট লেভেল, সেরাম ক্রিয়েটিনিন এবং ইউরিয়া ইত্যাদি।
২। রিডিওলজিক্যাল
–কম্পিউটেড টমোগ্রাফি বা সিটি স্ক্যানণ্ড এটি খুবই জরুরি করণের মাধ্যমে স্ট্রোকটি কী ধরনের (ইস্কেমিক স্ট্রোক অথবা হেমরেজিক স্ট্রোক) তা নির্ণয় করা যায়।
ম্যাগনেটিক রিজনেন্স ইমেজিং সুক্ষ্নভাবে মস্তিস্কের অবস্থা বোঝা যায়।
চিকিৎসা:
চিকিৎসার ক্ষেত্রে রোগ নির্ণয় খুবই জরুরি, কারণ ইস্কেমিক স্ট্রোক অথবা হেমরেজিক স্ট্রোক উভয় এর চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন এবং সেটা একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রোগের ধরণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে থাকেন।
স্ট্রোকণ্ডপরবর্তী প্যারালাইসিস বা পক্ষঘাতগ্রস্ত রোগীকে আবার পূর্বের স্বাভাবিক জীবনযাপন এ ফিরিয়ে আনার জন্য ওষুধের পাশাপাশি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিকিৎসা হলো আধুনিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা, এই চিকিৎসার মাধ্যমে একজন স্ট্রোক–পরবর্তী প্যারালাইসিস বা পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীকে সম্পূর্ণ পুনর্বাসন করা সম্ভব সেক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে নিয়মিত দিনে ৩–৪ বার ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিতে হবে ২ণ্ড৬ মাস। এক্ষেত্রে একজন বিশেষজ্ঞ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক রোগীকে পূনর্বাসনের জন্য একটি ট্রিটমেন্ট প্ল্যান তৈরি করে থাকেন।
ম্যানুয়াল থেরাপি, থেরাপিউটিক এক্সারসাইজ, প্রগ্রেসিভ কন্ডিশনাল, এক্সারসাইজ, প্যারালাল বার এক্সারসাইজ, গেট ট্রেনিং বা গেট রি–এডুকেশন এক্সারসাইজ, ইলেক্ট্রথেরাপি বা ইলেক্ট্রিক্যাল ইস্টিমুলেশন থেরাপি, অকুপেশনাল ট্রেনিং, বাউএল, ব্লাডার ট্রেনিং ইত্যাদি।
পরামর্শ:
১. রোগীকে পুষ্টিকর খাদ্য খাওয়াতে হবে।
২. ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৩ চর্বি জাতীয় খাদ্য পরিহার করতে হবে।
৪. ধুমপান ও তামাক জাতীয় দ্রব্যপরিহার করতে হবে।
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
৬. শেখানো মতো ব্যায়াম করতে হবে।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি