![বিমানে সরাসরি কার্গো পরিবহনে যুক্তরাজ্যের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/18/cargo_126454.jpg)
ঢাকা, ১৮ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : অবশেষে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে সরাসরি পণ্য পরিবহনের ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাজ্য। নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে প্রায় দুই বছর আগে তারা এ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছিল।
আজ রবিবার বিকেলে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের কনফারেন্স রুমে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের কথা জানান বাংলাদেশে নিযুক্ত ব্রিটিশ হাইকমিশনার অ্যালিসন ব্লেক।
এরপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার সংক্রান্ত পত্র বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রী এ কে এম শাহজাহান কামালের হাতে তুলে দেন হাইকমিশনার।
এর আগে কনফারেন্স রুমেই বেসামরিক বিমান পরিবহন মন্ত্রণালয় ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষসহ (বেবিচক) সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনসহ সংশ্লিষ্ট দফতরের কর্মকর্তারা।
২০১৬ সালের ৮ মার্চ যুক্তরাজ্যের ট্রান্সপোর্ট ডিপার্টমেন্ট হজরত শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে অস্থায়ী নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল। এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ থেকে আকাশপথে কার্গো পাঠানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে অস্ট্রেলিয়া।
এ ঘোষণার মধ্য দিয়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে দুবছর পর কার্গো নিয়ে সরাসরি যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে আকাশে উড়তে যাচ্ছে বিমান।
সিভিল এভিয়েশন সংশ্লিষ্টদের আশা, খুব শিগগির অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
নিরাপত্তার অজুহাতে ২০১৬ সালের মার্চে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে যুক্তরাজ্য তার দেশে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। যুক্তরাজ্যের পর অস্ট্রেলিয়া পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সব দেশও নৌ ও আকাশপথে সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। ইইউর টিম বাংলাদেশকে সরাসরি কার্গো রফতানির ক্ষেত্রে উচ্চমাত্রার ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে।
বিমানমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল বলেন, বর্তমানে শাহজালালে কার্গো পণ্য স্ক্রিনিংয়ে অ্যাভসেক ও বিজিবির ডগ স্কোয়াড কাজ করছে। আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন দিয়েও ডগ স্কোয়াড নামানো হয়েছে। সর্বশেষ সংযোজন করা হয় অত্যাধুনিক এক্সপ্লোসিভ ডিটেনশন সিস্টেম (ইডিএস)। তাতে যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়ন যতগুলো শর্ত দিয়েছিল সব শর্ত পূরণ হয়। তিনি বলেন, শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তাব্যবস্থা এখন ইউরোপ-আমেরিকা মানের।
জানা গেছে, ২০১৬ সাল থেকে নিষেধাজ্ঞার ফলে বছরে বিমানে ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকার পণ্য রফতানি হুমকির মুখে পড়েছিল। ব্যাহত হয়েছিল দেশের ভাবমূর্তি। ধস নেমেছিল বিমানের কার্গো ব্যবসায়। তবে এতদিন অন্য দেশের মাধ্যমে রি-স্ক্যানিং করে যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোয় কার্গো রফতানি অব্যাহত ছিল।
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন দুদিনের সফরে গত ৯ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসেন। সফরকালে তিনি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত না দিলেও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য সিভিল এভিয়েশনকে ডিএফটি যেসব শর্ত দিয়েছিল তার সব শর্ত বাংলাদেশ পূরণ করেছে বলে সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন।
সদ্য বিদায়ী ঢাকার ব্রিটিশ ডেপুটি হাইকমিশনার ডেভিড অ্যাশলে ওই সময় বলেছিলেন- ২০১৭ সালের শেষের দিকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি শর্ত দিয়েছিল ইউকে ডিপার্টমেন্ট অব ট্রান্সপোর্ট। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল- ইউকের নিরাপত্তা পর্যবেক্ষণ, বিমানবন্দরের নিরাপত্তা বিষয়ে দীর্ঘমেয়াদে দুজন পরামর্শক নিয়োগ, এভিয়েশন সিকিউরিটিতে ইউকে মডেল অনুসরণ করা। এসব বিষয়ে ব্যাপক উন্নতি করেছে বাংলাদেশ।
জানা গেছে, বেবিচকের মেম্বার অপারেশন এয়ার কমোডর মোস্তাফিজুর রহমানের নেতৃত্বে একটি শক্তিশালী টিম গত দুবছর ধরে এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন। সাবেক বিমানমন্ত্রী রাশেদ খান মেননও এ নিয়ে দুদেশের মধ্যে ব্যাপক দেনদরবার করেন। সম্প্রতি নিয়োগ পাওয়া সিভিল এভিয়েশনের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল এম নাইম হাসান দায়িত্ব নিয়েই বিমানের সরাসরি কার্গো পণ্য পরিবহনে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে তিনি এ নিয়ে মাঠে নামেন।
সূত্র জানায়, বাংলাদেশ থেকে বছরে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি ও যুক্তরাজ্যসহ ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ১৯ বিলিয়ন ডলারের (১ লাখ ৫২ হাজার কোটি টাকা) পণ্য রফতানি হচ্ছে। যার বড় অংশ হচ্ছে তৈরি পোশাক। এর মধ্যে বিমানে পরিবহন করা হয় ১৮-২০ শতাংশ। টাকার হিসাবে এর পরিমাণ ৩০ হাজার ৪০০ কোটি টাকা। প্রথম হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র আর দ্বিতীয় স্থানে আছে ইইউ।
জানা গেছে, যুক্তরাজ্য ছাড়াও সরাসরি কার্গো ফ্লাইট বন্ধ করা প্রসঙ্গে ইইউ (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) বাংলাদেশকে ঝুঁকিপূর্ণ তালিকার দেশগুলোয় অন্তর্ভুক্তির কথা জানিয়েছে। অর্থাৎ ইইউ কমিশন ইম্প্লিমেনটেশন রেগুলেশন (ইইউ) ২০১৫/১৯৯৮ অনুযায়ী বাংলাদেশকে অ্যাটাচমেন্ট ৬-১ তে অন্তর্ভুক্ত করেছে। এ অন্তর্ভুক্তির ফলে ইউরোপীয় কমিশন ডিভিশন সি (২০১৫) ৮০০৫-এর আলোকে বাংলাদেশ থেকে পাঠানো সব এয়ার কার্গো ও মেইল কনসাইনমেন্ট ‘হাই রিস্ক কার্গো অ্যান্ড মেইল’ (এইচআরসিএম) হিসেবে বিবেচিত হবে।
এ জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের শর্তানুযায়ী সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ বিমানের কার্গো কমপ্লেক্সে এক্সপ্লোসিভ ডিটেনশন সিস্টেম বসানোর কথা বলেছিল। ইতিমধ্যে এ সিস্টেমটি বসানো সম্পন্ন হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে এ মেশিনটি ক্রয় করেছে সরকার। এ অবস্থায় সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ আশা করছে, যুক্তরাজ্যের পর অস্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেবে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি