শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
লালমনিরহাটে ভূমিধস ও নদী ভাঙ্গনের আশংকা

বৈধ বালুর অবৈধ ব্যবসা জমজমাট

বৈধ বালুর অবৈধ ব্যবসা জমজমাট

লালমনিরহাট, ১৯ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : লালমনিরহাটে তিস্তা, ধরলা ও সানিয়াজান নদী থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের উৎসব চলছে। ওই সব নদী থেকে অবাধে প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু পরিবহন করা হচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। অবাধে ও অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলনের ফলে তিস্তা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসত-বাড়িসহ আবাদি জমি দেবে ভূমিধস ও নদী ভাঙ্গনের আশংকা দেখা দিয়েছে। মাঝে মধ্যে দুই এক বার প্রশাসন থেকে বালু উত্তোলন বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হলেও বালু ব্যবসায়ীরা স্থান পরির্বতন করে আবারও বালু উত্তোলন শুরু করছে।

জানা গেছে, জেলার পাটগ্রাম উপজেলায় ধরলা নদী, হাতীবান্ধা উপজেলার বিভিন্ন স্থানে সানিয়াজান ও তিস্তা নদী, কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম গ্রামের মুন্সিবাজার এলাকায়, আদিতমারী উপজেলার বিভিন্ন স্থানে তিস্তা, সদর উপজেলায় ধরলা ও তিস্তা নদী থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। প্রতিদিন শত শত ট্রাক বালু চলে যাচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। বালু ব্যবসাকে কেন্দ্র করে প্রভাবশালীদের নিয়ে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। ওই সিন্ডিকেটে জড়িয়ে পড়েছে জেলার এক উপজেলা চেয়ারম্যানসহ কয়েকজন ইউনিয়ন চেয়ারম্যানও। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বালু ব্যবসা বন্ধ করে দেয়া হলেও কয়েকদিন পর স্থান পরিবর্তন করে আবার অগের মতই চলতে থাকে অবৈধ এই ব্যবসা। ফলে ওই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বালু ব্যবসার নামে প্রতি সপ্তাহে লক্ষ লক্ষ টাকা ভাগাভাগি হচ্ছে। এ ভাবে চলছে গোটা জেলা জুড়ে অবৈধ বালু উত্তোলনের জমজমাট ব্যবসা।

গত রোববার কালীগঞ্জ উপজেলার তুষভান্ডার ইউনিয়নের কাশিরাম গ্রামের মুন্সিবাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ৪/৫ টি ট্রাক ওই এলাকায় তিস্তা নদী থেকে দীর্ঘ দিন ধরে অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করছে। প্রতি দিন ভোর থেকে মধ্য রাত পর্যন্ত চলছে বালু উত্তোলন। ওই এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, স্থানীয় সাবেক এক ইউ-পি সদস্যের নেতৃত্ব একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চলছে বৈধ বালুর অবৈধ জমজমাট ব্যবসা। ওই ইউ-পি সদস্য ক্ষমতাধর হওয়ায় ও এক চেয়ারম্যানের কাছের লোক বলে কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না। একই অবস্থা জেলার পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, আদিতমারী ও সদর উপজেলাতেও। বিষয়টি স্থানীয় প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করে চলছে। নদী গুলো থেকে কোনো প্রকার ইজারা ছাড়াই অবৈধ ভাবে বালু উত্তোলন করে অনেকেই কোটি কোটি টাকার মালিক হলেও এক দিকে সরকার বিপুল পরিমান রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে গভীর গর্ত করে বালু উত্তোলন করায় বর্ষা মৌসুমে নদী ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিতে পারে। নদী গর্ভে বিলীন হতে পারে নদীর তীরবর্তী বসত-বাড়িসহ ফসলী জমি। এ ছাড়া খোলা ট্রাকে বালু পরিবহন ও স্তূপ করে রাখা বালুর কারণে স্বাস্থ্যগত সমস্যার মুখে পড়ে এলাকাবাসী।

অথচ ২০১০ সালের বালুমহাল আইনে বলা আছে, বিপণনের উদ্দেশ্যে কোনো উন্মুক্ত স্থান বা নদ-নদীর তলদেশ থেকে বালু বা মাটি উত্তোলন করা যাবে না। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা অথবা আবাসিক এলাকা থেকে বালু ও মাটি উত্তোলন নিষিদ্ধ। এ আইন অমান্য করলে সেই ব্যক্তি বা তাহাদের সহায়তাকারী কোন ব্যক্তির অনূর্ধ্ব ২ বৎসর কারাদন্ড বা ৫০ হাজার টাকা হইতে ১০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত অর্থদন্ড বা উভয় দন্ডে দন্ডিত হইবেন। এ ছাড়া এই আইনের অধীন অপরাধ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক ভ্রাম্যমান আদালত বা বিচারিক ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে বিচার করা যাবে।

লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শফিউল আরিফ জানান, উন্মুক্ত স্থান বা নদ-নদীর তলদেশ থেকে অবৈধ ভাবে বালু বা মাটি উত্তোলনের কোনে সুযোগ নেই। তারপরও যদি কেউ অবৈধ ভাবে ওই সব কার্যক্রম চালান তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। পাশাপাশি প্রতিটি উপজেলায় ভ্রাম্যমান আদালত এসব বন্ধে কাজ করছে।

এবিএন/ আসাদুজ্জামান সাজু/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত