শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • বদলগাছীতে একের পর এক স্থাপিত হচ্ছে কৃষিজমিতে নতুন নতুন ইটভাটা

বদলগাছীতে একের পর এক স্থাপিত হচ্ছে কৃষিজমিতে নতুন নতুন ইটভাটা

বদলগাছীতে একের পর এক স্থাপিত হচ্ছে কৃষিজমিতে নতুন নতুন ইটভাটা

বদলগাছী (নওগাঁ ), ২০ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : নওগাঁর বদলগাছীতে কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় একের পর এক ইটভাটা নির্মাণ হচ্ছে। অনুমোদন, নিবন্ধন ছাড়ায় গড়ে তুলছে এসব ইটভাটা। ইটভাটা মালিক প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্তাব্যক্তিদের ম্যানেজ করে ইটভাটাগুলো নির্মাণ করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

যার কারণে নতুন নির্মাণকৃত ইটভাটাগুলোর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থাও গ্রহন হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ করে বলেন প্রশাসনের কাছে নতুন ইটভাটা স্থাপন বন্ধের জন্য বারবার অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়না।

সরকারী নিয়ম নিতিকে বৃদ্ধা অঙ্গুল দেখিয়ে বসতবাড়ী সংলগ্ন ফসলী জমিতে ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০১৩ এর পরিপন্থিমূলক এবং পরিবেশের ছাড়পত্র ব্যতিরেখে লাইসেন্স গ্রহন না করে ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে।

পরিবেশ আইনে বলা হয়েছে, জনবসতিপূর্ণ আবাসিক এলাকা, কৃষিজমি, বাজার, স্কুল, কলেজ এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করা যাবে না। ধোঁয়াবিহীন ইট পোড়াতে হবে। কৃষি জমি থেকে কোন মাটি কেটে নেওয়া যাবে না ও এলজিইডির রাস্তা ব্যবহার করা যাবেনা। এছাড়া ইট পোড়ানোর কাজে জ্বালানী হিসেবে কাঠ ব্যবহার করলে তিন বছরের কারাদ- ও তিন লাখ টাকার জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।

সম্প্রতি সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, আধাইপুর ইউনিয়নের উত্তর মির্জাপুর মাঠে একটি ও বিষ্ণপুর মাঠে আর একটি নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে। মিঠাপুর ইউনিয়নের মিঠাপুর মাঠে একটি ও খাদাইল বাজারের পূর্ব পার্শ্বে একটি নতুন ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে। মথুরাপুর ইউনিয়নের থুপশহর মাঠে একটি ইটভাটা নির্মাণ করেছে।

পাহাড়পুর ইউনিয়নের বামনপাড়া মাঠে একই স্থানে একটি ইটভাটা নির্মাণ করা হয়েছে ও আর একটি নতুন ইটভাটার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কোলা ইউনিয়নের শালুককুড়ি কৃষি জমিতে নির্মাণ করা হচ্ছে একটি নতুন ইটভাটা। আরও নতুন করে ২ থেকে ৩টি ইটভাটা নির্মাণ করার প্রক্রিয়া চলছে। আর এসব ইটভাটা অধিকাংশই কৃষিজমি ও জনবসতি এলাকায় গড়ে উঠেছে। এই ইটভাটাগুলোর জন্য কৃষি জমির উপরিভাগের টপসয়েল মাটি কেটে ইটভাটায় আনা হচ্ছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে আগুন দিয়েছে আর বাদ বাঁকী কয়েকটি ইভাটার কাজ চলমান রয়েছে।

ইটভাটাগুলোর মাত্র পঞ্চাশ থেকে ১ শত গজ দুরত্বেই রয়েছে জন-বসতি ও বাড়ী-ঘর । আর ওই সব ইটভাটার কারণে জনবসতি এলাকার গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে এলাকাবাসীর মধ্যে। কয়েকটি ইটভাটা সংলগ্ন বাড়ীর মালিকরা জানান, ইটভাটার কারণে তাঁদের ফলজ গাছগুলো সহ মাঠের ফসলেরও ক্ষতি হচ্ছে। এ বিষয়টি তাঁরা স্থানীয় প্রশাসনকে জানিয়েছিলেন কিন্ত কোনো ফল পাননি।

উত্তর মির্জাপুর মাঠে নির্মাণধীন ইটভাটার মালিক দেলোয়ার বলেন, আমি জমি লিজ নিয়ে ইটভাটা নির্মাণ করছি। কেউ আমার ওপর বিরাগ হয়ে এই অভিযোগটি করেছে। ইটভাটা নির্মাণ এর জন্য আপনি কোন পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন পেয়েছেন কিনা বলে জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনুমতি এখনো পাইনি তবে প্রক্রিয়া চলছে। উপজেলায় নতুন করে আবার ৪/৫ টি ইটভাটা নির্মাণ হলেও কোন প্রদক্ষেপ নেই প্রশাসনের।

নির্মাণধীন ইটভাটা মালিকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অধিকাংশই ইটভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের নেই কোন অনুমোদন, ছাড়পত্র ও নিবন্ধন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই তারা ইটভাটাগুলো নির্মাণ করছে বলে জানান।

বদলগাছী উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খোরশেদ আলম বলেন, আমাদের এই উপজেলায় এমনিতেই চাহিদার থেকে অনেক বেশি ইটভাটা রয়েছে যার ফলে এলাকার পরিবেশের ও কৃষি জমির অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাই নতুন করে ইটভাটা আমাদের এই উপজেলায় আবারো যদি হয় তাহলে পরিবেশের মারাত্বক ক্ষতি হবে। তিনি আরোও বলেন, আমরা মালিক সমিতি সিধান্ত নিয়েছি আর কোন নতুন ইটভাটা নির্মাণ করবোনা। তাই উপজেলার কৃষি জমি ও পরিবেশের কথা চিন্তা করে প্রশাসনের উচিৎ নতুন নির্মাণধীন ইটভাটাগুলো বন্ধ করে দেওয়া।

উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান আলী বলেন, বদলগাছীতে একটি ইটভাটাও নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয়নি। তারপরও আবারোও কৃষিজমিতে নতুন করে ইটভাটা গড়ে তোলা হচ্ছে এ বিষয়টি কৃষি সংক্রান্ত জেলা ও উপজেলা কমিটির মাসিক সভায় একাধিকবার বলা হয়েছে।

ইটভাটার কারণে একদিকে কমছে কৃষিজমি অন্যদিকে মারাত্বক ক্ষতি হচ্ছে পরিবেশের। তাছাড়া ইটভাটায় কৃষি জমির উপরি ভাগের মাটি কাটা বিষয়ে তিনি বলেন, কৃষি জমির উপরি ভাগের টপসয়েল মাটি কাটার করণে জমির উর্বর শক্তি কমে যায় এ কারনে সেই জমিতে তেমন কোন ফসলের ভাল ফলন হয় না । এবং ঐ জমির টপসয়েল পুরন হতে ৫ থেকে ৭ বছর সময় লেগে যাবে।

বদলগাছী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মাসুম আলী বেগ বলেন নতুন করে কয়েকটি ইটভাটা নির্মাণ করা হচ্ছে বলে শুনেছি তাদের তালিকা পেলেই ব্যাবস্তা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে নওগাঁর জেলা প্রশাসক মিজানুর রহমান এর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন লাইসেস ও পরিবেশ ছারপত্র ছারা কোন ইটভাটা নির্মান করতে দেওয়া হবে না জরুরী ভাবে খোজ নিয়ে ব্যাবস্তা গ্রহন করা হবে।

এলাকার সচেতন মহল বলেন, এমনিতেই আগের ইটভাটার কালোধোঁয়ার কারনে আমাদের পরিবেশের অনেক ক্ষতি হচ্ছে তাঁর উপড় আবারো তৈরী হচ্ছে নতুন নতুন কয়েকটি ইটভাটা। রহস্য জনক কারনে প্রশাসনই তাঁদের বিরুদ্ধে আইন গত ব্যবস্থা করছেনা। তাই আমারা আমাদের এলাকায় এসব অবৈধ্য ইটভাটার কালোধোঁয়ার হাত থেকে এলাকার কৃষি জমি, পরিবেশ ও মানুষকে রক্ষা করতে স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তর মন্ত্রনালয়ের উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের হস্থক্ষেপ কামনা করছি।

এবিএন/‌হাফিজার রহমান/জসিম/রাজ্জাক

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত