![ভোলার পূর্ব ইলিশায় বাল্যবিবাহ মুক্ত ওয়ার্ড ঘোষনা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/20/bhola-chila-marige-free-pic_126872.jpg)
ভোলা, ২০ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : বাল্যবিয়ে মুক্ত ইউনিয়ন গড়ার লক্ষ্য নিয়ে ভোলার সদর উপজেলার পূর্ব ইলিশার ২নং ওয়ার্ড (বাঘার হাওলা গ্রাম)কে শিশু বিবাহ মুক্ত ঘোষনা করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার বিকালে ইলিশা ইউনিয়ন পরিষদ প্রাঙ্গনে এক গনসমাবেশ এর মধ্যে দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে বাল্য বিয়ে মুক্ত ওয়ার্ড ঘোষনা করেন ইলিশা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসনাইন আহমেদ হাসান মিয়া।
সম্মিলিত শিশু বিবাহ প্রতিরোধ কর্মসূচী (আইইসিএম) প্রকল্পের আওতায় কোস্ট ট্রাস্ট এর বাস্তায়নে ও ইউনিসেফের সহায়তায় বাল্যবিবাহ মুক্ত ওয়ার্ড ঘোষণাকে কেন্দ্র করে ইউনিয়নের সকল কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক, ইউপি সদস্য, সিবিসিপিসি কমিটির সদস্য, রাজনীতিবিদ, ঈমাম, কাজী, স্বাস্থ্য কর্মী, সুশীল সমাজের নেতৃবিন্দ সহ এনজিও কর্মীদের নিয়ে এই গণসমাবেশে অনুষ্ঠিত হয়।
পরে তাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করান ইউনিয়ন পরিষদ এর চেয়ারম্যান হাসনাইন মিয়া। শপথ বাক্যে পাঠ কালে এলাকার লোকজন অঙ্গিকার করে বলেন- আগামী দিনের শিশুদের নিরাপথ বাসযোগ্য করার জন্য “যেখানেই শিশু বিবাহ দেখবো সেখানেই প্রতিরোধ করবো”।
বাল্য বিবাহ একটি সামাজিক ব্যাধি আসুন সবাই মিলে ঐক্য গড়ি বাল্য বিয়ে মুক্ত সমাজ গড়ি। এছাড়াও ইউনিয়নের সকল শিশুকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের হাত থেকে শিশুকে রক্ষা করার কথাও বলেন।
এছাড়াও শিশুর জন্মের ৪৫ দিনের মধ্যে জন্মনিবন্ধন নিশ্চিত করা। রাস্তাঘাটে মেয়েদের ইভটিজিংও যৌন হয়রানীর হাথ থেকে রক্ষা সহ মেয়েদের ১৮ বছরের আগে ও ছেলেদের ২১ বছর আগে বিয়ে দিবেনা সহ সকল আইন মেনে চলবে বলে অঙ্গিকার করেন।
সমাবেশে এডভোকেসি এন্ড মিডিয়া অফিসার আদিল হোসেন তপুর সঞ্চালনায় পূর্ব - ইলিশা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান মো: মোস্তফা মিয়ার সভাপত্বিতে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন- বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী মো:হোসেন মিয়া, নিজাম উদ্দিন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মইনুল হক শিপু, কোস্ট ট্রাস্ট এর (আইইসিএম) প্রকল্পের প্রকল্প সমন্ময়কারী মিজানুর রহমান।
এসময় আরও বক্তব্য রাখেন- আইইসিএম প্রকল্পের ট্রেনিং এন্ড মনিটরিং অফিসার মো: মনিরুজ্জামান,২ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য কামাল হোসেন, বাল্য বিবাহ ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধ কমিটির সম্পাদক এম শাহরিয়ার জিলন,স্বাস্থ্য সহকারী কামরুল ইসলাম, কিশোর-কিশোরীদের পক্ষে বক্তব্য রাখেন-মোসাম্মত হোসনে আরা,আব্দুর রব,তানিয়া প্রমুখ।
এসময় উপস্থিত ছিলেন-ইলিশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি মো: সায়েদ আলী,সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান শাহজাহন ব্যাপারী,ইউনিয়ন সম্মনয়কারী খাদিজা আক্তার মো: ইব্রাহীম প্রমুখ।
এসময় বক্তারা বলেন, বাল্যবিয়ে অভিভাবককে দায়মুক্ত করে না, বরং দায়গ্রস্ত করে। বাল্যবিয়ের ফলে কোনো মেয়ে সুখী হতে পারে না। বাল্য বিবাহর কারনে নারীরা শিক্ষা থেকে বঞ্চিত। আগামী প্রজন্মের সুস্থভাবে বেড়ে উঠা এবং সুনাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতেও বাল্য বিবাহ একটি বড় বাধা।
বাল্য বিবাহের শিকার ছেলে বা মেয়ে সে যাই হোক না কেন সে তার উচ্চ শিক্ষা এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে শিশু শিক্ষা থেকেও বঞ্চিত হয়। ফলে শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত শিশু, কিশোরী এবং কোন কোন ক্ষেত্রে কিশোররাও উন্নত জীবন ব্যবস্থা, আধুনিক প্রযুক্তিগত তথ্যপ্রবাহ থেকে বঞ্চিত।
এসময় তারা আরো বলেন, শিশু বিবাহ সমাজ, জাতি তথা দেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। শিশু বিবাহ এক ধরনের অপসংস্কৃতি। এই অপসংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে। সমাজের প্রতিটি ব্যক্তি যার যার অবস্থান থেকে এগিয়ে এসে শিশু বিবাহ রোধ করার জন্য। কারন শিশু বিবাহ পরিবার দেশ, সমাজ ও জাতির জন্য অভিশাপ। এর বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। তাই সবাইকে ঐক্য বদ্ধভাবে বাল্য বিবাহ রোধ করতে হবে।
আলোচনা সভা শেষে পূর্ব-ইলিশা ইউনিয়নে সেরা তিন ক্লাবকে সম্মাননা জানানো হয়। ও কিশোরী ক্লাবের খেলার সামগ্রীদেওয়ার জন্য প্রতিশ্রুতি দেন ইউপি চেয়ারম্যান হাসান মিয়া।
এবিএন/আদিল হোসেন তপু/জসিম/রাজ্জাক