![‘হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে’](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/22/pm-natore_127064.jpg)
নাটোর, ২২ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক যে কোনো হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সর্বদা প্রস্তুত থাকতে হবে। সংবিধান ও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সেনাবাহিনীকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।
আজ বৃহস্পতিবার নাটোরের কাদিরাবাদ সেনানিবাসে আর্মি ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ষষ্ঠ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
দেশের অগ্রগতিতে সেনাবাহিনীকে অবদান রাখার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না দেশে কোনো রকম সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ, মাদকাসক্তি থাকুক। এগুলো সমাজকে নষ্ট করে। আমরা দেশের মানুষের শান্তি, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে চাই। দেশের গণতান্ত্রকে সাংবিধানিকভাবে অব্যাহত রাখার পাশাপাশি আধুনিক, উন্নত ও সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ নির্মাণে সেনাবাহিনীকে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে আমাদের সুদৃঢ় পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। আমার দুই ভাই শহীদ ক্যাপ্টেন শেখ কামাল ও শহীদ লে. শেখ জামাল মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছিলেন। শেখ জামাল ১৯৭৫ সালে রয়াল মিলাটারি সেন্ট হার্স্ট থেকে নিয়মিত প্রশিক্ষণের পর কমিশন শেষে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়। আমি আপনাদের মাঝে আমার হারানো ভাইদের খুঁজে পাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, কোর অব ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ঐতিহ্যবাহী সংগঠন। এ কোরের রয়েছে গৌরব উজ্জ্বল ও আত্মত্যাগের ইতিহাস।
সরকারের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, দীর্ঘদিন আমরা সরকারে আছি। তাই দেশ উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা লিস্ট ডেভেলপড কান্ট্রি না, আমরা ডেভেলপিং কান্ট্রি। দেশকে এগিয়ে নিতে আমরা ব্যাপকভাবে কাজ করছি। দেশের সব ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া থেকে শুরু করে সার্বিক বিষয় নিয়ে কাজ করছি। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ চালু করেছি। এখন সারাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস আছে। প্রতিটি প্রতিষ্ঠান সেই ডিজিটাল ব্যবস্থা প্রবর্তন করে নিজেদের আধুনিক যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা অর্জন করেছে। আমরা দেশের সব মানুষের হাতে হাতে মোবাইল ফোন পৌঁছে দিয়েছি। আমরা থ্রিজি চালু করেছি, এখন ফোরজি চালু করছি।
২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করতে সরকারের পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর মধ্যে প্রায় ৫ কোটি মানুষ নিম্নবিত্ত থেকে মধ্যবিত্তে উঠে এসেছে। আমরা দারিদ্র্যের হার ২২ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। আমাদের লক্ষ্য, এ হার ১৪ থেকে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনব। যেন বাংলাদেশকে কেউ দরিদ্র দেশ বলে অবহেলা করতে না পারে, করুণা করতে না পারে।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্য তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ নিজেদের অর্থায়নে, নিজেদের কাজ করে এগিয়ে যাবে। এরই মধ্যে উন্নয়ন প্রকল্পের ৯০ ভাগ নিজেদের অর্থায়নে ব্যয় করার সক্ষমতা অর্জন করেছি। প্রথমবার মাত্র ৬১ হাজার টাকার যে বাজেট পেয়েছিলাম, তা এখন ৪ লাখ কোটি টাকায় পরিণত হয়েছে। এ উন্নয়নের ছোঁয়া গ্রাম-বাংলা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে। দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশ ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে উঠবে। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমরা উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছি।
এর আগে বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারে চড়ে সকাল ১১টার দিকে তিনি কাদিরাবাদ সেনানিবাসে পৌঁছান।
অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সেনাপ্রধান জেনারেল আবু বেলাল মোহম্মদ শফিউল হক, প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহম্মেদ সিদ্দিক, নৌ বাহিনীপ্রধান অ্যাডমিরাল নিজাম উদ্দিন আহমেদ ও বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল আবু এসরার।
এ ছাড়া অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য, ঊর্ধ্বতন সামরিক ও অসামরিক কর্মকর্তাসহ ইঞ্জিনিয়ার সেন্টার অ্যান্ড স্কুল অব মিলিটারি ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের অবসরপ্রাপ্ত ও চাকরিরত কর্মকর্তা এবং অন্যান্য পদবির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
দুপুরের পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী যাবেন। সেখানে বিকালে মহানগরীর মাদ্রাসা ময়দানে আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় ভাষণ দেবেন। মাদ্রাসা ময়দান থেকে ২১টি উন্নয়ন প্রকল্প উদ্বোধন ও ১২টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তরের ফলক উন্মোচন করবেন প্রধানমন্ত্রী। ৭ বছর আগে রাজশাহীর এই ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে দলীয় জনসভায় ভাষণ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এর পর ২০১৩ সালের ৫ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর বাগমারা, ২০১৪ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি চারঘাটে আওয়ামী লীগের জনসভায় যোগ দেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৭ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর পবায় দলীয় জনসভায় উপস্থিত হয়েছিলেন শেখ হাসিনা।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ