![নওগাঁয় ভূমি অফিসের সীমাহীন দূর্নীতিতে বিপাকে প্রকৃত ভূমি মালিকরা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/02/23/badalgachi-durniti@abnews_127253.jpg)
নওগাঁ, ২৩ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ :নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার ভূমি অফিসের সীমাহীন দূর্ণীতিতে বিপাকে প্রকৃত ভূমি মালিকরা। রেহায় নেই খোদ সরকারী জমি, জমাও। সাধারন মানুষ তাদের জমিজমা নিয়ে ভীষন বিপদের মধ্যে রয়েছে। উপজেলার খাস খতিয়ানের প্রায় অর্ধশত একর জমি ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের যোগসাজসে ব্যক্তি মালিকানায় খারিজ করায় বিপাকে পড়েছে লীজ গ্রহীতারা। লীজ গ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে দফায় দফায় তদন্ত হলেও অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের দৌরাত্বে লীজ গ্রহীতারা সহ সাধারন মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অনুসন্ধানে জানাগেছে, পত্নীতলায় রাজস্ব অফিসের অধীনে ৬টি ইউনিয়ন ভূমি অফিস রয়েছে। সম্প্রতি উপজেলার পত্নীতলা ইউপির মহেষপুর এলাকার প্রায় ১১ একর, বাজিতপুর ও সম্ভুপুর মৌজার ১৫/৮৫, ১৬/৮৫, ১৭/৮৫ ও ১৮/৮৫ ভিপি কেসের প্রায় ২৬ একর সরকারী জমি ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের যোগসাজসে প্রায় কয়েক কোটি টাকা উৎকোচের বিনিময়ে ব্যক্তি মালিকানায় খারিজ, খাজনা করে দেয়ায় উক্ত সরকারী ভিপি জমির লীজ গ্রহীতাদের পক্ষে জনৈক মোহাম্মদ আলী, গোলাম মোস্তফা ও সাইজ উদ্দীনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে ইতি পূর্বে বিভিন্ন ইলেক্ট্রিক মিডিয়া ও জাতীয় পত্রিকায় খবর প্রকাশের পর দফায় দফায় উর্দ্ধোতন কর্তৃপক্ষ সহ রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তদন্ত হলেও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা, কর্মচারীরা বহাল তবিয়তে রয়েছে।
এব্যাপারে এলাকার ভূমিহীনদের পক্ষে গত ২৫ জুলাই ২০১৭ ইং মোহাম্মদ আলী এবং গোলাম মোস্তফা ও সাইজ উদ্দীন গত ১৫/০১/২০১৮ ইং তারিখে ভূমি সচিব ও বিভাগীয় কশিশনার বরাবর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানাযায়, ১৯৯৮ সালে ভূমি আপিল বোর্ড (২-৫৫/৯৮ নম্বর মামলা) পোরশার নিতপুরের বাসিন্দা মৃত যমুনা প্রসাদ ভগদ নামের এক ব্যক্তির ১ হাজার ১শ বিঘা জমি খাস খতিয়ান ভুক্ত ঘোষনা করে। এসব খাস জমি পোরশা, সাপাহার ও পত্নীতলার কৃষ্ণপুর ইউনিয়নের মহেষপুর মৌজার আরএস ৬১৩ নম্বর খতিয়ানের ১০ একর ৭৪ শতক (৩২ বিঘা ৮শতক) জমি স্থানীয় ভূমিহীন ২৬জন ব্যক্তি ইজারা নেওয়ার জন্য ২০০৫ সালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কাছে আবেদন করেন।
ইজারা না পেলেও ওই ভূমিহীন ব্যক্তিরা ২০০৫ সাল থেকে জমিগুলো ভোগদখল করছিলেন। কিন্তু ২০১৬ সালের অক্টোবর মাসে পত্নীতলার মহেষপুর গ্রামের আশরাফ আলী ও আবদুস সালাম, তকিপুর গ্রামের শরিফুল ইসলাম ও আবদুল জব্বার, উষ্টি গ্রামের সুরেন কুমার এবং সাপাহারের করলডাঙ্গা গ্রামের আবদুল কাদের ওই সব জমি তাঁদের রেকর্ডভুক্ত বলে ভূমিহীনদের উচ্ছেদ করে দেন। কৃষ্ণপুর ইউনিয়ন ভূমি উপসহকারী কর্মকর্তা আতাউর রহমান তৎসময় ভারপ্রাপ্ত ভূমি কর্মকর্তার সহযোগীতায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা উৎকোচের বিনিময়ে জালিয়াতি করে ওই ১০ একর ৭৪ শতক জমি কয়েকজন ব্যক্তির নামে খারিজ করে দেন।
অপরদিকে ১৯৪৭ সালে মহাদেপুরের এনায়েতপুর গ্রামের সুরেন্দ্রনাথ বকশি ভারতে চলে যাওয়ায় তার রেখে যাওয়া অত্র এলাকার বাজিতপুর, সম্ভুপুর, হাসেমবেগপুর, চকরাম, ওড়নপুর, মহেষপুর, আদিমৌজা, বজরুক মাহমুদপুর, মালাহার, জিওল সহ বেশ কয়েকটি মৌজায় প্রায় ১শ একর জমি সরকারী খাস খতিয়ানে অর্পিত সম্পত্তি হিসাবে গৃহীত হয়। ১৯৮৫ সাল থেকে সরকারী জমি পত্নীতলা উপজেলার বাজিতপুরের গোলাম মোস্তফা, সম্ভুপুরের সাইজ উদ্দীন সহ অত্র এলাকার প্রায় ৩৫/৪০ জন ভূমিহীন ব্যক্তি ১৫/৮৫, ১৬/৮৫, ১৭/৮৫ ও ১৮/৮৫ ভিপি কেসের বাজিতপুর ও সম্ভুপুর মৌজার প্রায় ২৬ একর জমি লীজের মাধ্যমে ভোগ দখল করে আসলেও হঠাৎ করে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে উপজেলার জনৈক জয়নব বেওয়া ও আনোয়ারা বেওয়া সহ অন্যান্য নামে ভূমি অফিসের অসাধু কর্মকর্তা ও দালালদের যোগসাজসে গোপনে বড় অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে ৩৯১৫/১৬-১৭, ৩৯৯৯/১৬-১৭ নং খারিজের মাধ্যমে উক্ত সম্পত্তি ব্যক্তি মালিকানায় খারিজ, খাজনা করে দেয়ায় ভুক্তভোগীরা খারিজ বাতিলের জন্য ভূমি সচিব ও বিভাগীয় কমিশনার বরাবর সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেন।
উক্ত লীজ গ্রহীতাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে দফায় দফায় তদন্ত হলেও অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের দৌরাত্বে লীজ গ্রহীতারা সহ সাধারন মানুষ প্রতিনিয়ত প্রতারিত ও চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলী, গোলাম মোস্তফা, সাইজ উদ্দীন সহ অন্যান্যরা অভিযোগকারীরা বলেন, সে সময় সহকারী কমিশনার ভূমি কর্মকর্তা না থাকায় দায়িত্বে ছিলেন তৎসময়ের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। তবে ভূমি অফিসের উপ-সহকারী ভূমি কর্মকর্তা আতাউর রহমান, আব্দুল মান্নান সহ অধিকাংশ কর্মকর্তা, কর্মচারী ও দালালদের যোগসাজসে বড় অঙ্কের উৎকোচের বিনিময়ে উর্দ্ধোতনকে হাত করে ব্যাপক অনিয়ম চালিয়ে যাচ্ছে।
অপরদিকে পত্নীতলা উপজেলা হিন্দু অধ্যষিত এলাকা হওয়ায় দেশ স্বাধীনের পূর্বে বহু হিন্দু পরিবার ভারতে পাড়ি দেয় এবং ১৯৭১ এর যুদ্ধ চলাকালীন সময় পাকবাহিনীর অগ্নিকান্ডে পত্নীতলা সাব রেজিস্ট্রি অফিস পুড়ে যাওয়ায় সুযোগ বুঝে একটি কুচক্রি মহল এসব দালালচক্র, রাজস্ব ও রেজিস্ট্রি অফিসের সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীর যোগসাজসে নানা অনিয়মের মাধ্যমে সরকারী সহ ব্যক্তি মালিকানাধীন জমিজমা নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি করেছে। এবাদেও ভূমি অফিসের সংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা, কর্মচারীরা খারিজ কেস গুলোতে উৎকোচের বিনিময়ে ভূয়া কাগজ পত্র দিয়ে একতরফা ভাবে খতিয়ান ভুক্ত প্রকৃত মালিকদের না জানিয়ে কৌশলে নামজারির মাধ্যমে খারিজ, খাজনা করিয়ে দেয়ায় জমিজমা নিয়ে প্রকৃত মালিকরা নানা জটিলতায় পড়ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে এলাকাবাসীর।
এ বিষয়ে পত্নীতলা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আবদুল করিম বলেন, অভিযোগকারী মোহাম্মদ আলীর খারিজটি বাতিল করা হয়েছে। অন্যান্য অভিযোগের তদন্ত অব্যাহত রয়েছে।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মঙ্গলবার রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় থেকে তদন্তের ব্যাপারে উপ-ভূমি সংস্কার কমিশনার রাজশাহীর একেএম বেনজামিন রিয়াজীর কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। তদন্ত শেষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এবিএন/ব্রেলভীর চৌধুরী/জসিম/নির্ঝর