বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

অদম্য কিশোরী নাদিয়ার সফলতার গল্প

অদম্য কিশোরী নাদিয়ার সফলতার গল্প

ভোলা, ২৭ ফেব্রুয়ারি, এবিনিউজ : ভোলা চরফ্যাশন উপজেলার প্রত্যন্ত এক ইউনিয়ন নুরাবাদ। এই ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের নুরাবাদ গ্রামের দিন মুজর ইউসুফের বড় মেয়ে নাদিয়াতুল কুবরা (১৬)। বাবা-মা তাকে আদর করে ঢাকে নাদিয়া বলে। নাদিরা স্বপ্ন বড় হয়ে শিক্ষক হবে। এই স্বপ্ন পূরনের পথে সঠিকভাবেই এগোচ্ছিলো নাদিয়া। স্বপ্ন দেখার আগেই তার স্বপ্ন বঙ্গের উপক্রম হলো।

দিনমুজর বাবা ইউসুফ দারিদ্র্যতার কারনে পড়াশোনার খরচ না চালাতে পেরে নাদিয়াকে বাল্যবিবাহ দিতে চেয়েছিলো। পড়ালেখা করে শিক্ষক হওয়ার স্বপ্ন দেখা অদম্য নাদিয়া হেরে যাওয়ার মেয়ে নয়।

তাই স্বপ্নের দেশে পাড়ি জমানোর জন্য সাহসী ও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহের কারনে নাদিয়া স্থানীয় কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের মাঠ কর্মী ও কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যদের নিয়ে নিজের বাল্যবিবাহ নিজেই রুখে দেয়।

দরিদ্র পিতা রাগ করে নাদিয়ার পড়াশোনার খরচ বন্ধ করে দেয়। বাবা ইউসুফ বলে দেয় এবার তোমার পড়াশোনার খরচ তুমি নিজেই চালাবে। যে চোখে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখতো সে চোখে অন্ধকার দেখে নাদিয়া। তখনই আলোর মশাল নিয়ে এগিয়ে আসে কোস্ট ট্রাস্ট’র আইইসিএম প্রকল্প।

বাল্যবিয়ে রোধে নাদিয়ার সাহসিকতার কারনে ও পড়ালেখা চালিয়ে নেয়ার জন্য অনুপ্রেরণাস্বরুপ তাকে ১৫০০ হাজার টাকার বৃত্তি প্রদান করে কোস্ট ট্রাস্ট। যার আর্থিক সহায়তায় ছিলো জাতিসংঘ শিশু তহবিল (ইউনিসেফ)। বৃত্তির টাকা পেয়ে আনন্দে আত্মহারা নাদিয়া। মুখে হাসি ফোটে তার। সংগ্রামী ও সাহসী এই বালিকাকে ধাবিয়ে রাখে কে। এবার তার স্বপ্ন পূরণের পালা।

বৃত্তির টাকাকে পুজি করে বর্তমানে নাদিয়া পাটি বুনে বাজারে বিক্রি করে পড়াশোনার খরচ চালাচ্ছে। অদম্য বালিকা নাদিয়া বর্তমানে দুলার হাট কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীতে অধ্যায়নরত আছে। একই সাথে ৫নং কিশোরী ক্লাব ‌‌‌‘আপেল’ এর সহায়ক হিসাবে বাল্যবিবাহ মুক্ত সমাজ গড়তে কাজ করে যাচ্ছে এই সংগ্রামী বালিকা। অদম্য কিশোরী নাদিয়ার সফলতার গল্প

এবার নাদিয়ার মুখেই শুনি তার গল্প :

বাবা ইউসুফ দিন মুজুরের কাজ করে, আর মা গৃহিনী। অল্প একটু জায়গার মধ্যে কোন রকম কষ্ট ও সংগ্রাম করে জীবনযাপন করে নাদিয়াদের। ৪ ভাই বোনের মধ্যে নাদিয়াই সবার বড়। তাই হয়তো বা দায়িত্ব একটু বেশী। বাবার একার পক্ষে সংসার আর আমাদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছিলোনা। অনেক সময় স্কুলে বা কলেজে যেতাম এক রকম না খেয়েই। তাই হয়তো বাবা সংসার ও পড়ালেখার খবর চালাতে পাড়ছিলোনা বলেই আমাকে বাল্যবিয়ে দিয়ে দায়গ্রস্থ হতে চেয়েছিলো। আমিও বুঝতে পেরে নিজের বাল্যবিয়ে নিজেই ঠেকিয়ে দেই।

এই কষ্টের সময় কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্প এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। আইইসিএম প্রকল্পের সহায়তায় বৃত্তির টাকা দিয়ে নিজের পড়াশোনার খরচ নিজেই চালাচ্ছি। বর্তমানে আমি মা তাসলিমা বেগম এর সহায়তায় পাটি বুনি। সেই পাটি বিক্রি করে যে অর্থ আয় হয় তা দিয়ে আমার এবং আমার ছোট ভাই বোনের পড়াশোনা খরচ যোগাই।

স্বাবলম্বী নাদিয়া :

বর্তমানে নাদিয়া প্রতি মাসে ২ থেকে ৩টি পাটি বুনে। এর জন্য পাটি প্রতি খরচ হচ্ছে হয় ৪০০-৬০০ টাকা। বিক্রি করছে ৮০০-৯০০টাকা। যা দিয়েই চলে নাদিয়া পড়াশোনার খরচ। আবার আয়ের উৎস দিয়েই পাশাপাশি চলছে হাসঁ-মুরগী পালন।

নাদিয়ার স্বপ্ন :

নাদিয়া স্বপ্ন দেখে ভবিষ্যৎ শিক্ষক হবে। শিক্ষক হয়ে সমাজের যারা অশিক্ষিত তাদেরকে শিক্ষিত করে গড়ে তুলবে। যারা অসচেতন তাদেরকে সচেতন নাগরিক হিসাবে গড়ে তুলবো। বাল্যবিয়ে বন্ধে অগ্রনী ভূমিকা রাখবে। পাশাপাশি কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে সুন্দর একটি সমাজ গড়তে যেখানে শিশু বিবাহ, শিশু শ্রম, শিশু শাস্তি থাকবেনা এই সমাজ শিশুদের স্বার্থ রক্ষা করতে এগিয়ে আসবে এটাই আমার প্রত্যাশা।

নাদিয়ার মা তাসলিমা বলেন, আমরা আসলে বাল্যবিয়ের যে কুফল তা জানতাম না। এর রকম বাধ্য হয়ে আমাদের মেয়েকে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। এখন আমরা আমাদের ভুল বুঝতে পেরেছি। আমরা নাদিয়াকে পড়ালেখা করিয়ে তার স্বপ্ন পূরণে সহযোগীতা করে যাবো।

আইইসিএম প্রকল্পের ইউনিয়ন সমন্বয়কারী সবুজ চন্দ্র জানায়, আমরা নাদিরা পাশে দাড়াতে পেরে খুব ভালো লাগছে। এখন নাদিয়ার পড়াশোনার খরচ নাদিয়া নিজেই চালাচ্ছে। পাশাপাশি ক্লাবের সদস্যদের কাছে তিনি রোল মডেল হয়ে উঠেছে।

কোস্ট ট্রাস্ট আইইসিএম প্রকল্পের প্রকল্প সমন্বয়কারী মো: মিজানুর রহমান জানায়, আমরা নাদিয়ার মতো অসহায় দারিদ্র্য, এতিম, শিশু বিবাহের ঝুকিঁতে আছে এমন ভোলা, লালমোহন, চরফ্যাশনের ৪০৮জন কিশোরীর মাঝে এক কালীন ১৫ হাজার টাকা করে বৃত্তি প্রদান করেছি। এই টাকা পেয়ে স্ব-স্ব কিশোরী এখন স্বাবলম্বী। তারা তাদের নিজের পড়াশোনার খরচ চালানোর পাশাপাশি পরিবারের খরচও চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে অনেকাংশেই শিশু বিবাহ কমিয়ে আনার পাশাপাশি স্বচ্ছলতাও হয়েছে অনেকের পরিবারের। এবং ভবিষ্যৎ আমরা আরো বৃত্তি দেয়ার চেষ্টা করবো। এর ফলে স্কুল থেকে ঝরে পড়া সংখ্যাও কমিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে জানান।

এবিএন/আদিল হোসেন তপু/জসিম/রাজ্জাক

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত