
বান্দরবান, ০২ মার্চ, এবিনিউজ : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্তের জিরো পয়েন্টের নোম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী ফাঁকা গুলি ছুড়েছে। পরে রোহিঙ্গাদের প্রতিরোধের মুখে পিছু হটেন দেশটির সেনা সদস্যরা। এ ঘটনায় সীমান্তে উত্তেজনা আরো বেড়েছে। সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরাও। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটে।
বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তমব্রু সীমান্তের ওপারে অবস্থানরত মিয়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ সদস্যরা দুই রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
বিজিবি সূত্রে জানা যায়, জেলার ঘুমধুম ইউনিয়নের তুমব্রু কোনাপাড়া সীমান্তে গুলি ছুড়েছে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সীমান্তের নোম্যান্সল্যান্ডে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের ভয়ভীতি দেখাতে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপি কয়েক রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে।
এ ঘটনায় আতঙ্ক দেখা দিয়েছে রোহিঙ্গাসহ সীমান্ত অঞ্চলের বাসিন্দাদের মধ্যে। তবে সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করেছে বিজিবি। গুলিবর্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে বিজিবি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিজিবির এক কর্মকর্তা জানান, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিপির এক সদস্য নোম্যান্সল্যান্ডের আশ্রয় ক্যাম্পে চলে আসে। রোহিঙ্গারা তাকে তাড়া করে। এ সময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে সীমান্তরক্ষীদের বাগ্বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে গুলি ছুড়ে মিয়ানমার বাহিনী।
তিনি জানান, আতঙ্কে রোহিঙ্গারা ছুটাছুটি করছে। কিন্তু রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করতে পারেনি। সীমান্তে সতর্কবস্থায় রয়েছে বিজিবি। সীমান্তের ওপারে ঝামেলা হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় মিয়ানমারের সেনা সদস্যরা কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে জিরো লাইনে আসতে চাইলে রোহিঙ্গারা বাধা দেন। এ সময় তারা কাঁটাতারের বেড়ার কাছে এক রাউন্ড ফাঁকা গুলি করে। এতে আতঙ্কিত বেশ কিছু রোহিঙ্গা পরিবার জিরো লাইন ছেড়ে বাংলাদেশের ভূখণ্ডে আশ্রয় নেয়। স্থানীয়দের বসতবাড়িতেও আশ্রয় নিয়েছেন অনেকে।
এর আগে, বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তমব্রু সীমান্তে দফায় দফায় মিয়ানমার সেনাবাহিনী সৈন্য সংখ্যা বাড়ায়। অস্ত্র নিয়ে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অবস্থান নিয়েছে তারা। ভারী অস্ত্রের পাশাপাশি হালকা অস্ত্রও তাক করেছেন দেশটির সেনাবাহিনীর সদস্যরা। এ ঘটনায় সীমান্তের জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। বাংলাদেশ সীমান্তেও বিজিবি সতর্ক অবস্থায় থেকে টহল জোরদার করেছে।
রোহিঙ্গারা জানান, এর আগে সকাল থেকে ৭টি ট্রাকে করে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সদস্যরা তুমব্রু সীমান্তের ওপারে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নেন। সীমান্তের কাঁটাতার বেড়া বরাবর ব্যাংকারগুলোতেও অবস্থান নিয়েছে সেনাবাহিনী। তাদের সঙ্গে মিয়ানমারের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি) সদস্যরাও পাহাড়া দিচ্ছেন।
জিরো লাইনে থাকা রোহিঙ্গা দিল মোহাম্মদ বলেন, সকাল থেকে সেনাবাহিনীর সদস্যরা মর্টারসহ অন্যান্য অস্ত্র নিয়ে অবস্থান নিয়েছেন। কিন্তু রাত পৌনে ৯টার দিকে ১০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি চালান মিয়ানমার সেনারা। এতে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ি আমরা, কারণ যেকোনো মুহুর্তে কিছু হতে পারে, সে আশঙ্কা করছি।
এছাড়া সকাল থেকে ১১ বার মাইকিং করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। তারা জিরো লাইন থেকে রোহিঙ্গাদের সরে যাওয়ার জন্য নির্দেশনা দিচ্ছে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি