![দেশের ডাক্তাররা রোগীদের সময় দেয় না কেন?](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/04/doctor_128447.jpg)
ঢাকা, ০৪ মার্চ, এবিনিউজ : রোগীদের চিকিৎসায় দেশের চিকিৎসকরা গড়ে যে সময় দেন সেটি এক মিনিটও নয়। আর তাতে কতটুকুই বা রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা সম্ভব।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগে মোহাম্মদ আবুল কাশেম বগুড়া থেকে এসেছেন ভাতিজাকে নিয়ে। কিন্তু তাকে ভর্তিই করাতে পারেননি। অনেক দূর থেকে এসে তাই হতাশ হয়ে যাচ্ছেন অন্য কোথাও।
তিনি বলেন, ‘এখানে আসলে ডাক্তাররা প্রেসক্রিপশন দিয়ে বলে অমুক জায়গায় যাও। এ কারণে আমি ভুক্তভোগী।
নোমান গাজী ময়মনসিংহ এসেছেন। তার পিত্তথলির পাথর হয়েছে সেটির চিকিৎসার জন্য।
তিনি বলেন, ‘ডাক্তাররা বাংলাদেশে রোগীদের সময় দেয়না সেটি ঠিকই। তার আমি নিজে প্রমাণ। কখন দেখবে এখনো বলা যাচ্ছে না। এখন থেকে প্রায় ৪ ঘণ্টা আগে আসছি।
এ রোগী ও আত্মীয়দের গলায় স্বভাবতই হতাশার সুর। যার কারণ ফুটে উঠেছে ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের জরিপে।
যেখানে রোগী দেখায় সময় দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত বাংলাদেশের থেকে এগিয়ে। অথচ বাংলাদেশে রোগী প্রতি গড়ে মোটে ৪৮ সেকেন্ড সময় দেয়া হয়। মিনিটের কাটায়ও তা পৌঁছায় না চিকিৎসকের সময়।
যেখানে এই জরিপে সুইডেনের মতো সাড়ে বাইশ মিনিট না হলেও আবুল কাশেমের মতে অন্তত ১০ মিনিট তো দেয়া উচিত।
বহির্বিভাগে ডাক্তারদের কক্ষে গিয়ে দেখা গেলো সেই সুযোগ মেলা খুব কঠিন। ডাক্তারের মনোযোগ পেতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে রোগীদের। কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি জানতে চাওয়া হয় মেডিসিন বিভাগের চিকিৎসক শারমিন সুলতানা চৌধুরীর কাছে।
তিনি বলেন, ‘যেমন ধরেন আমাদের রুমে এখন দুজন আছি। যদি এ রুমে ২০০ রোগী হয়, আর আমার কর্মঘণ্টা যদি ৮টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত ধরি তা হলে এক একজনকে কজন করে রোগী দেখতে হয়। মূল সমস্যাই হলো জনসংখ্যা।’
দিনে আমাদের শতাধিক রোগী দেখতে হয়। অথচ কাজের সময় সকাল ৮টা থেকে দুপুর ২.৩০ মিনিট পর্যন্ত হলে একজন রোগীর পেছনে কতটুকু সময় দেওয়া যায়?
কিন্তু প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে অনেক টাকা ভিজিট দিয়েও যথেষ্ট মনোযোগ পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের জরিপ মতে, ভারতে চিকিৎসকরা রোগীকে প্রায় আড়াই মিনিট দেন। সেটিও খুব কম। তবুও সেখানেও বাংলাদেশ থেকে বছরে হাজার হাজার রোগী যাচ্ছেন চিকিৎসার জন্য। বাংলাদেশে ডাক্তারদের উপরে রোগীদের যেন আস্থার সংকট রয়েছে।
জনসংখ্যার অনুপাতে চিকিৎসকের সংখ্যা কম হওয়াই মূল সমস্যা হিসেবে মনে করছেন চিকিৎসকরা।
গত মাসেই জাতিয় সংসদে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন দেশে সরকারি নানা ধরনের স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ছয় হাজার রোগী প্রতি একজন করে চিকিৎসক।
শিশুদের চিকিৎসক রাজেশ মজুমদার বলছেন রেজিস্টার্ড চিকিৎসক বাড়লে সেবার মানও বাড়বে।
তিনি বলেন, ‘এত রোগী একজন ডাক্তার কিভাবে সামাল দেবে। সকালে এসে দেখি গিজগিজ করছে রোগী। আমাদের আন্তরিকতার সাথে সেবা দেয়া চেষ্টা করি। যদি রেজিস্টার্ড চিকিৎসক যদি বাড়ে তাহলে সেই সেবার মানটাও বাড়বে।’
কিন্তু গড়ে রোগী প্রতি ডাক্তারের সংখ্যা যতদিন না পর্যন্ত সামঞ্জস্যপূর্ণ হচ্ছে ততদিন রোগীদের আক্ষেপ রয়েই যাবে।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ