![ঝালকাঠিতে ছাত্রীর রহস্য জনক মৃত্যু নিয়ে নানা প্রশ্ন](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/05/lash_abnews_128577.jpg)
ঝালকাঠি, ০৫ মার্চ, এবিনিউজ : সুস্থ-স্বাভাবিক ও খুশি মনে থাকা ৪র্থ শ্রেণিতে পড়–য়া কিশোরী ছাত্রী লিজার মৃত্যু কি হত্যা নাকি আত্মহত্যা ? হত্যা হয়ে থাকলে মোটিভ কি? আর কোন কারন ছাড়া এতোটুকু মেয়ে আত্মহত্যা করবে কেনো?
গত কয়েক দিন যাবৎ এ ধরনের নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরবাড়ি এলাকার রহস্য জনক মৃত্যুর হওয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা আক্তারের (১০) পিতামাতা-স্বজন ও স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষসহ সর্বমহলে।
তাছাড়া কোন কথা বলতে গিয়ে কে, কোথায়, কোন বিপদে জড়িয়ে পরে সেই আশংকায় বাসন্ডা ইউনিয়নসহ এলাকাবাসী কেউ প্রকাশ্যে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছেনা।
ঘটনার পর গত ৩ দিন অতিবাহিত হলেও ঝালকাঠি থানা পুলিশ স্কুল পড়–য়া কিশোরী ছাত্রী লিজার মৃত্যু ঘটনার নেপথ্য কারণ বা কোনো ক্লু উদঘাটন করতে পারেনি বলে জানাগেছে। এ অবস্থায় স্কুলছাত্রীর পরিবার-স্বজন, প্রতিবেশী, মানবাধিকার ও নারী অধিকার বিষয়ক সংগঠনসহ স্থানীয় বিভিন্ন মহল গভীর তদন্তপূর্বক কিশোরী লিজার মৃত্যু প্রকৃত রহস্য খুজে বের করার জন্য ঝালকাঠি পুলিশ সুপারসহ উর্ধতন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানিয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঝালকাঠির বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরবাড়ি এলাকার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী লিজা আক্তারের রহস্যজনক মৃত্যু রহস্যের কোন কূলকিনারা করতে পারেনি। পার্শবর্তী বিয়ে বাড়ীতে মা ও বড়বোন কাজে যাওয়ার সুযোগে শূন্য ঘরের আড়ার সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে লিজা আক্তারের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে স্বজনরা ঝালকাঠি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ‘হাসপাতালে আনার অনেক আগে তার মৃত হয়েছে বলে জানায়।
অন্যদিকে ঝালকাঠি থানা পুলিশ খবর পেয়ে নিহত লিজা আক্তারের (১০) লাশ ময়না তদন্তের জন্য ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল মর্গে এনেছে। বাসন্ডা ইউনিয়নের আগরবাড়ি গ্রামের জাহাঙ্গীর মৃধার মেয়ে ও আগরবাড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী। এ ঘটনায় ঝালকাঠি সদর থানায় একটি ইউডি মামলা দায়ের করা হলেও স্কুলছাত্রীর লিজার মৃত্যুর ঘটনাটি রহস্যেঘেরা বলে পুলিশ ধারণা করছে।
এ বিষয়ে ঝালকাঠি থানার এসআই মো. দেলোয়ার জানায়, নিহত লিজা গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বাড়ির পাশের একটি বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠানে তার মায়ের সাথে কাজ করতে গিয়েছিল। রাত ১১ টায় সেখান থেকে একাই বাড়ি ফিরে আসার প্রায় দু’ঘন্টা পর তার বাক প্রতিবন্ধী বড় বোন নাছরিন ঘরে ফিরে এসে লিজাকে ঘরে আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখে ডাক-চিৎকর শুরু করেন। এ সময় বাড়ির পাশের লোকজন ছুটে আসে ও গলায় ওড়নার সাথে লিজার দেহ ঝুলন্ত দেখে তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
নিহত লিজার মা সেলিনা বেগম বলেন, রাত ১টার দিকে খবর পেয়ে বাড়িতে ছুটে এসে আমি আমার মেয়েকে গলায় ওড়না বেধে আড়ার সাথে ঝুলন্ত দেখে প্রতিবেশীদের সহায়তায় সদর হাসপাতালে নিয়ে আসি। তখন ডাক্তার বলে সে বেঁঁচে নেই, বাড়িতে নিয়ে যান। কিভাবে আমার মেয়ে মারা গেল বুঝতে পারছিনা। এভাবে তো আমার মেয়ে মারতে পারে না। আমার স্বামী জাহাঙ্গির মৃধা কাজের তাগিদে ঢাকায় থাকে, এখোন আমি তাকে কি জবাব দেবো বলে কান্নায় ভেঙ্গে পরেন।
লিজার মৃতদেহ বহনকারী ভ্যান চালক স্বপন মিয়া জানায়, আমি খবর পেয়ে যখন মৃতদেহ আনতে যাই তখন স্থানীয়দের মুখে শুনতে পাই লিজাকে ধর্ষণ করে মারা হয়েছে। একই গ্রামের গৃহবধু মাহ্মুদা বেগম বলেন, গত বৃহস্পতিবার রাতে লিজা, তার প্রতিবন্ধী বড় বোন নাসরিন ও মা সেলিনাকে বিয়ে বাড়ির পাকের ঘরে কাজ করতে দেখেছি। এরপর সকালে শুনি নিজ ঘরেই লিজার ঝুলন্ত লাশ পাওয়া গেছে।
হাসপাতালে লিজার মৃতদেহের সাথে থাকা নিকট আত্মিয় রোকেয়া বেগম বলেন, আমাদের সন্দেহ এলাকার কোন বখাটে ছেলেরা ধর্ষন করে ঘটনা আড়াঁল করতে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছে। কারন লিজার দুই কাঁধে কালো দাগ দেখেছি কিন্তু এ দাগ কিসের বলতে পারিনা।
এ ব্যাপারে ঝালকাঠি থানার ওসি তাজুল ইসলাম জানান, এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা তা ময়না তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে ঝালকাঠি থানায় একটি ইউডি মামলা রেকর্ড হয়েছে। ঘটনার পিছনে মোটিভ কি আছে তা আমরা তদন্ত করে দেখছি।
এবিএন/আজমীর হোসেন তালুকদার/জসিম/এমসি