![দুরারোগ্য চর্মরোগ শ্বেতী থেকে বাঁচার উপায়](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/05/sheti_128695.jpg)
ডা. প্রধীর রঞ্জন নাথ, ০৫ মার্চ, এবিনিউজ : শ্বেতী রোগে শরীরের স্থানে স্থানে চর্ম সম্পূর্ণ বা আংশিকভাবে সাদা হয়ে যায়। এর কোন প্রত্যক্ষ কারণ নাও থাকতে পারে, তবে পারদ ও সিফিলিস রোগ এবং স্নুায়বিক কারণে এই রোগ সৃষ্টি হয় বলে অনেকে মনে করেন। প্রথমে পীড়িত স্থানগুলোতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র সাদা দাগ দেখা যায় কিন্তু কিছু দিনের মধ্যে দাগগুলো মিলে বৃহদাকার ধারণ করে। চামড়ার স্বাভাবিক বর্ণের (পিগমেন্ট) উপাদান বিকৃতি বা অভাবের কারণে চামড়া দুধের মত সাদা হলে তাকে শ্বেতী বা ধবল বলে।
এই রোগের কারণ :
চামড়ার স্বাভাবিক রঙ সৃষ্টির মূলে রয়েছে মিলনিন জাতীয় পিগমেন্ট, এটি চামড়ার পিগমেন্ট লেয়ার এ থাকে। দেহের কিছু কিছু অংশের বা অনেকটা অংশের পিগমেন্ট লেয়ার নষ্ট হয়ে গেলে তার ফলে এই রোগ হয়। শ্বেতী দেহের বিভিন্ন অংশ বা প্রায় সারা দেহ সাদা হয়ে যায় বা নিজস্ব রঙ হারিয়ে এক অস্বাভাবিক রঙের সৃষ্টি করে। এই রোগের সংগে কুষ্টরোগের কোন সম্পর্ক নেই। শ্বেতী জীবাণু ঘটিত বা সংক্রামক রোগ নয়। এতে ত্বকের আক্রান্ত অংশ অসাড় হয় না বা ঘা হয় না বা কোন নোডুল সৃষ্টি করে না। কেবল মাত্র চামড়ার বর্ণ অস্বাভাবিকভাবে সাদা হয়। সঠিক কারণ তখনো জানা যায়নি। তবে দেখা যায়, এই রোগীদের ক্রনিক পেটের রোগ, লিভারের গোলযোগ, ডায়াবেটিস, সূত্রবিকার, থাইরয়েডের রোগ, মাথায় আঘাত ইত্যাদি এই সঙ্গে জড়িত থাকে। বংশগতভাবেও হতে পারে। মানসিক কারণও থাকে। এছাড়া দেহের কোথাও আঘাত বা কেটে ছড়ে যাওয়া থেকেও ত্বকের সেই কাটা অংশে পরে শ্বেতী হতে দেখা যায়। এছাড়াও আজকাল বাজারে প্রসাধনী সামগ্রী হিসেবে কতগুলো কেমিক্যাল বা সিন্থোথিক বস্তুর স্পর্শ থেকে এলার্জিক প্রতিক্রিয়া ঘটে ত্বকের বর্ণ বিকৃতি বা শ্বেতী এবং অন্যান্য চর্মরোগ হতে দেখা যায়। চশমার আঁটসাট ফ্রেম থেকে নাকের দুপাশে বা কানের কাছে সাদা দাগ বা কপালে পড়ার সিন্থেটিক টিপ, আটা দেয়া টিপ থেকে শ্বেতীয় চিহ্ন দেখা যায়। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে পাসটিক বা রবারের চটি, ঘড়ির প্লাসটিকের বেল্ট প্রভৃতি ব্যবহার থেকেও কারও কারও পায়ে বা কবজিতে শ্বেতীর চিহ্ন বা অন্যান্য চর্মরোগ দেখা যায়। অনেক সময় সামান্য অংশে দেখা যায় তারপরও ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই রোগ আদৌ ছোঁয়াচে নয় এবং একজন থেকে অন্যজনে সংক্রামিত হয় না। দেহের যে কোন স্থানে ইহা প্রকাশ পেতে পারে এবং মাথায় হলে চুলগুলো সাদা হয়ে যায়।
লক্ষণ :
১. কোন কোন ব্যক্তির রোগ কিছুদূর পর্যন্ত অগ্রসর হয়ে বহুদিন যাবৎ একইভাবে থাকে। অনেকস্থলে দীর্ঘদিন পরে স্বাভাবিক বর্ণ ফিরে আসে কিন্তু তৎপরে আবার কয়েকমাস ব্যবধানে পুনরায় রোগটি প্রকাশিত হয়। স্ত্রী পুরুষ নির্বিশেষে হতে পারে। এই রোগে আক্রান্ত রোগীর তেমন স্বাস্থ্য হানি হয় না শুধুমাত্র চর্মের স্বাভাবিক বর্ণ নষ্ট হয়ে যায় এবং অন্যকোন কষ্ট হয় না। এই রোগে জীবননাশের তেমন কোন আশংকা থাকে না।
২. রোগী রোদের তাপ সহ্য করতে পারে না। রোদে বের হলে কষ্ট পায়। উদরাময় ও কোষ্টকাঠিন্য পর্যায়ক্রমে দেখা যায়।
৩. প্রথমে আক্রান্ত স্থানগুলোতে ছোট ছোট দাগ সাদা বর্ণের দেখা যায়, কিছু দিনের মধ্যে দাগগুলো মিলে বৃহদাকার ধারণ করে। যদি শরীরের সর্বত্রই এইরূপ বিকৃত বর্ণ হয়। তবে তাকে এ্যালবিনোস বলে। পীড়িত স্থানের লোমগুলো ঠিকই থাকে কিন্তু সাদা হয়ে যায়।
৪. সূঁচ ফুটানো ব্যথা ভিতর হতে বাহির বিস্তৃত হয়। এই রূপ ব্যথা মাথার উপরে, কানের পেছনে খোঁচা লাগে, শ্বাসক্রিয়া কষ্টকর হয়। জননাংগে শুষ্ক আঁশযুক্ত চর্ম পীড়া ও সিফিলিস ক্ষত। হাঁটুর চারিদিকে বেদনা এবং সায়টিকার লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
৫. চর্মের খোলস উঠে। খোলস উঠে গিয়ে স্থানটি সাদা হয়ে যায়। মূত্র বৃদ্ধি পায়, মূত্রত্যাগে জ্বালা, গনোরিয়া, পুরাতন লালামেহ, মূত্রাশয় প্রদাহ হতে পারে।
৬. চামড়া ছাড়াও ঠোঁট, চোখের পাতা, যৌনাঙ্গ ইত্যাদি মিউকাস মেমব্রেনেও শ্বেতী দেখা যায়। আবার অনেক সময় সর্বাঙ্গে ছড়িয়ে গোটা মানুষটাকে সাদা করে দেয়।
৭. দশ বৎসর বয়সের পূর্বে অথবা ত্রিশ বৎসর বয়সের পর এই রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। কেউ কেউ বলেন, যে সকল স্থানে শীতেও গ্রীষ্মের আধিক্য থাকে, সেই সকল স্থানেই অধিক লোক এই রোগে আক্রান্ত হয়।
হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান :
এই রোগে হোমিওপ্যাথিক ওষুধের কার্যকারিতা বহু প্রাচীনকাল থেকেই সন্দেহাতীতভাবে দৃঢ়তার সাথে প্রমাণিত হয়ে আসছে। ইহা দুরারোগ্য হলেও হোমিওপ্যাথিতে নির্দ্দিষ্ট মাত্রায়, লক্ষণ সাদৃশ্যে দীর্ঘদিন ওষুধ সেবন এই রোগ ভাল হয়ে থাকে। এই রোগে যে ওষুধ ব্যবহৃত হয় তা নিম্নে প্রদত্ত হল। যথা– ১. আর্সেনিক সালফ ফ্লেভাম ২. আর্সেনিক সালফ রুব ৩. এলুমিনা ৪. আর্সেনিক ৫. নেট্রাম কার্ব ৬. নাইট্রিক এসিড ৭. নেট্রাম সালফ ৮. কেলিমিউর ৯. ফেরাম ফস ১০. চেলিডোনিয়াম ১১. সিপিয়া ১২. সাইলিসিয়া ১৩. সালফার উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ সেবন করা উচিত। (সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি