সোমবার, ০৪ আগস্ট ২০২৫, ২০ শ্রাবণ ১৪৩১
logo

গোপীনাথপুরের মেলায় জমে উঠেছে ঘোড়ার হাট

গোপীনাথপুরের মেলায় জমে উঠেছে ঘোড়ার হাট

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট), ০৬ মার্চ, এবিনিউজ : গোপীনাথপুরের মেলায় জমে উঠেছে ঘোড়ার হাট। পারলে ঠেকাও, তাজিয়া, কুমার রাজা, বিজলি, বাহাদুর ইত্যাদি নানা নামের ঘোড়া এখন জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার গোপীনাথপুর মেলায় পাওয়া যাচ্ছে।

বিক্রির জন্য দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মেলায় এসেছেন ঘোড়া ব্যবসায়ীরা। দোল পূর্ণিমার মধ্য দিয়ে গত বৃহস্পতিবার (১ মার্চ) শুরু হলেও শুক্রবার থেকে পুরোদমে জমে উঠেছে ঐতিহ্যবাহী এ মেলা। কাগজে কলমে মেলার অনুমতি ১৩ দিন হলেও চলে এক মাস ধরে।

জনশ্রুতি আছে, প্রায় পাঁচশ বছর আগের এই মেলায় এক সময় উট ও দুম্বার ব্যাপক আমদানি হতো। ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সেগুলি আমদানি করা হতো। কালের বিবর্তনে ওইসব প্রাণীর পরিবর্তে জায়গা করে নেয় গরু, মহিষ এবং ঘোড়া।

এছাড়া বিনোদনের জন্য যাত্রা, সার্কাস, পুতুল নাচ এবং সংসারের যাবতীয় আসবাবপত্র কাঠ, স্টিল প্লাাস্টিকের ফার্নিচার, মিষ্টান্ন, মসলা, জুতা ও কাপড়সহ এমন কোনও জিনিষ নেই যা এ মেলায় আমদানি হয় না। প্রায় দুই কিলোমিটার বর্গাকার এ মেলাকে ঘিরে এলাকার প্রায় ৫০ গ্রামে চলে স্বজন সমাবেশ।

জমে উঠেছে ঘোড়ার হাট। মেলার শুরু থেকে ঘোড়ার আমদানি হয় চোখে পড়ার মতো। মেলা শুরুর আগে থেকেই ঘোড়া ব্যবসায়ীরা তাদের ঘোড়া নিয়ে আসে মেলায়। আজ সোমবার সকাল ১১টায় কথা হয় নওগাঁর পোরশা উপজেলার কাতকৈইর গ্রামের ঘোড়া ব্যবসায়ী মিলন রহমানের সঙ্গে।

তিনি জানান, তার ঘোড়া অত্যন্ত দ্রুত গতি সম্পন্ন। এজন্য ঘোড়ার নাম দিয়েছেন ‘পারলে ঠেকাও’। এলাকায় তার ঘোড়াকে সবাই ‘পারলে ঠেকাও’ বলেই ডাকে। তার ঘোড়ার দাম এক লাখ টাকা।

একই জেলার সাপাহার উপজেলার ঘোড়া ব্যবসায়ী আব্দুল খালেক জানান, গত বছর তার ঘোড়ার নাম দিয়েছিলেন ‘কিরণ মালা’। এবার নাম দিয়েছেন বিজলি। ৮০ হাজার টাকা পেলে বিজলিকে বিক্রি করে নতুন ঘোড়া কিনবেন বলে জানান।

দিনাজপুর জেলার চিরির বন্দরের বাসুদেবপুর গ্রাম থেকে আসা ঘোড়া ব্যবসায়ী মফিজ উদ্দিন মেলায় এনেছেন পাকিস্তানি তাজিয়া ঘোড়া। দাম হাঁকছেন আড়াই লাখ টাকা।

একজন ক্রেতা পৌনে দুই লাখ টাকা দাম বললেও শেষ না দেখে বিক্রি করবেন না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘১০ বছর ধরে এ মেলায় ঘোড়া কেনাবেচা করছি। কিন্তু ঘোড়া দৌড়ের মাঠ না থাকায় খুব সমস্যা হয়। ঘোড়া দৌড় ঠিক মতো দেখানো না গেলে বিক্রি করা যায় না।’

নওগাঁর ছাতিয়া গ্রামের ঘোড়া ব্যবসায়ী নুর আমিন এবার মেলায় ‘কুমার রাজা’ নামের লাখ টাকা মূল্যের একটি ঘোড়া বিক্রির জন্য নিয়ে এসেছেন। বিক্রি হলে ছোট ঘোড়া কিনবেন। প্রায় ২৫ বছর ধরে এ ব্যবসার সঙ্গে তিনি জড়িত।

স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ জোয়ারদার এই মেলা প্রসঙ্গে বলেন, ‘এ অঞ্চলে এত পুরাতন মেলা আর কোথাও নেই। কালের বিবর্তনে আগের চেয়ে মেলার অবয়ব ছোট হলেও এখনও এই মেলার কারণে এলাকার আশপাশের গ্রামগুলোতে উৎসবের আমেজ বিরাজ করে। মেয়ে জামাই থেকে শুরু করে এমন কোনো আত্মীয় নেই যারা মেলার সময় বেড়াতে আসেন না। মেলার জন্য জয়পুরহাট, বগুড়া ও আক্কেলপুর থেকে স্পেশালভাবে বাস সার্ভিস চালু হয়। মেলায় পুলিশ প্রশাসন ছাড়াও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় সহস্রাধিক স্বেচ্ছাসেবক কাজ করে। কাগজে কলমে এই মেলার অনুমতি ১৩ দিনের হলেও চলে এক মাস ধরে।’

আক্কেলপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম জানান,মেলার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এরই মধ্যে বিশেষ ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে। এছাড়া তিনি সার্বক্ষণিক নজরও রাখছেন। গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী এ মেলার ঐতিহ্য ফেরাতে যেন কোনো প্রকার অনিয়ম, অশ্লীলতা না থাকে সে ব্যাপারেও তাদের নজরদারি রয়েছে।

এবিএন/আতিউর রাব্বী তিয়াস/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত