![জোড়া মাথার জমজ শিশুদের কি আলাদা করা সম্ভব?](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/06/2_128821.jpg)
ঢাকা, ০৬, মার্চ, এবিনিউজ : মাথায় জোড়া লাগানো জমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়ার প্রথম ধাপের অপারেশন সফল হওয়ার পর এখন পরবর্তী ধাপের অপারেশনে তাদের আলাদা করতে বেশ আশাবাদী চিকিৎসকরা।
তারা জানিয়েছেন, রাবেয়া-রোকেয়ার দ্বিতীয় ধাপের অপারেশন হবে আগামী মে মাসে। আর শেষ দফায় অপারেশন হবে আগস্টে।
এদিকে প্রথম দফা অপারেশনের পর এখন বেশ সুস্থ ২০ মাস বয়সী জমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়া।
রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা রফিকুল ইসলাম জানান, রাবেয়া তুলনামূলক একটু বেশি চঞ্চল। আর রোকেয়া একটু ধীরস্থির। তাদের শান্ত রাখতে একই খেলনা দিতে হয়। অনেক সময় অন্য শিশুদের মতোই খেলনা নিয়ে কাড়াকাড়িও করে। দুজনই খুব বাবা ভক্ত।
তাদের মা তাসলিমা খাতুন বলেন, ওরা যে জোড়া লাগানো, সেটা এখনো বুঝতে পারে না। আমি ওদের বড় আয়নার সামনে নিয়ে গেলেও ওরা নিজেদের দেখে না। খেলার দিকেই মনোযোগী থাকে। ওদের সমস্যটা ওদের কাছে কোনো সমস্যাই না।
রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা-মা জানেন, এই অবস্থা বেশি দিন থাকবে না। শিশুরা বড় হলেই বুঝতে শিখবে, অনিশ্চিত হয়ে উঠবে তাদের স্বাভাবিক জীবনে। এখন তাই তারা অপেক্ষায় পরবর্তী ধাপের অপারেশনের।
তাসলিমা খাতুন বলেন, অপারেশনে বাচ্চাদের কোনো ক্ষতি হবে কি-না, কতটা কষ্ট পাবে তা নিয়ে সবসময়ই খারাপ লাগে। ওদের যখন প্রথম অপারেশনের জন্য নেয়া হচ্ছিল। আমিই তাদের অপারেশন থিয়েটারে শুইয়ে দিয়ে আসি। আসার সময় দুজনই আমার কাপড় ধরে টানছিল। একজনের হাত থেকে মুক্ত হতে না হতেই অন্য জনের দুই হাত এসে আমাকে জড়িয়ে ধরছিল। ছাড়তেই চায় না। আমি যে কত কষ্টে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের হয়েছি, সেটা আসলে বলার উপায় নেই।
কিন্তু সন্তানের ভবিষ্যত ভেবে অপারেশনের ঝুঁকিপূর্ণ পথই বেছে নিয়েছেন তারা। কিন্তু বাংলাদেশে অপারেশনের মাধ্যমে সারা বিশ্বেই দুর্লভ এরকম জমজ শিশু রাবেয়া-রোকেয়াকে আলাদা করা কি আদৌ সম্ভব হবে?
তবে চিকিৎসকরা অবশ্য আশাবাদী। ইতোমধ্যেই শেষ হওয়া প্রথম দফা অপারেশনে রাবেয়া-রোকেয়ার মাথায় যে যুক্ত রক্তনালি রয়েছে, তা বন্ধ করে দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এতে করে চূড়ান্ত অপারেশনে রক্তক্ষরণ কম হবে এবং ঝুঁকি কমবে বলেই মনে করছেন তারা। দুই মাস পর দ্বিতীয় ধাপের অপারেশনে তাদের মাথায় চামড়া প্রতিস্থাপনের সুযোগ তৈরি করা হবে। এর দুই মাস পরে আগস্টে জোড়া মাথা আলাদা করার জন্য হবে চুড়ান্ত অপারেশন।
প্রথম অপারেশনে অংশ নেয়া চিকিৎসক ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিউরো সার্জন মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ওদের মাথায় কিন্তু নতুন চামড়া লাগাতে হবে। মাথা যখন আলাদা করা হবে তখন এর দরকার হবে। এর জন্য দ্বিতীয় দফায় অপারেশনে চামড়া বিস্তৃত করার জন্য পদক্ষেপ নেয়া হবে, যেন পরে মাথার খোলা অংশে চামড়া প্রতিস্থাপন করা যায়। এটি হবে মে মাসের শুরুতে। এর পরের ধাপ হচ্ছে দুই মাথার পৃথকীকরণ। আমরা যতদূর দেখেছি, কিছু কমন স্ট্রাকচার সেখানে আছে। তবে সেটা আলাদা করা যাবে। আমরা আশাবাদি।
তিনি বলেন, তাদের চূড়ান্ত অপারেশনে বড় জটিলতা ছিল রক্তক্ষরণ সামলানো। কারণ রক্তক্ষরণ বেশি হলে মৃত্যু কিংবা ব্রেইন ড্যামেজ কন্ট্রোল করা কঠিন। প্রথম দফা অপারেশনে রক্তনালি বন্ধ করে দেয়ায় এখন রক্তক্ষরণ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। অপারেশনে হাঙ্গেরি থেকেও দুজন ডাক্তার থাকবেন।
বাংলাদেশে এর আগেও মাথায় জোড়া লাগানো জমজ শিশু জন্মের ঘটনা ঘটেছিল ২০০৯ সালে।
তবে তৃষ্ণা এবং কৃষ্ণা নামে সেই জমজ শিশুর অপারেশন হয় অস্ট্রেলিয়ায়। অপারেশনটি সফলও হয়।
অপারেশনের পর থেকেই তৃষ্ণা এবং কৃষ্ণা রয়েছে অস্ট্রেলিয়াতেই। তারা সেখানে আছে ময়রা কেলি নামের একজন মানবাধিকার সংগঠকের অধীনে।
তৃষ্ণা-কৃষ্ণার সর্বশেষ অবস্থা জানতে আমরা বিবিসি বাংলার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করি ময়রা কেলির সঙ্গে।
তিনি ই-মেইলে জানান, তৃষ্ণা-কৃষ্ণার বয়স এখন ১১। তারা সুস্থ আছে এবং আলাদা দুটি স্কুলে পড়াশোনা করছে।
রাবেয়া-রোকেয়ার বাবা-মাও এখন আশায় আছেন, তাদের সন্তানও ফিরতে পারবে স্বাভাবিক জীবনে।
সূত্র : বিবিসি বাংলা
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ