ধামইরহাট (নওগাঁ), ০৯ মার্চ, এবিনিউজ : প্রত্নসম্পদ সমৃদ্ধ ধামইরহাটের মাটি খুঁড়ে ইতিহাস অনুসন্ধানের শুরুটা যে ভাবে হয়েছিল তা ধরে রাখা যায়নি। প্রত্নসম্পদের চিহ্নিত এলাকাগুলোও হয়নি সংরক্ষিত। যেগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে সেগুলোও রক্ষণাবেক্ষণ হচ্ছে না।
ধামইরহাট উপজেলার জগদ্দল বিহার, আগ্রাদ্বীগুন বিহার, ভীমের পান্টি, হযরত সাহ তকীউদ্দীন পার্সি (রহঃ) এর “মাহী সন্তোষ”সহ অনেক ঐতিহ্যবাহী স্থান রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ১৯৯৭ সালে জগদ্দল বিহারে প্রথম বারের মত প্রত্নতাত্ত্বিক খনন কাজ শুরু হয়েছিল। বিহারের দক্ষিণ ও পশ্চিম পার্শ্বে খননের ফলে, ধ্বংস প্রাপ্ত একটি বিহারের আংশিক স্থাপত্য কাঠামো ও অতিগুরুত্বপূর্ণ প্রত্ন সামগ্রী উম্মোচিত হয়েছিল।
এগুলোর মেঝেতে খনন করে পাওয়া গেছে দরজার চৌকাঠের নিচের অংশ যা দীর্ঘ কালের অলংকৃত পাথরের তৈরী। খনন কালে মূল্যবান কালো ছোট বড় মুর্তি, বৌদ্ধ ধর্মমতে নামৃত পাত্র, লোহার পেরেক সহ ১৩৪টি প্রত্নবস্তু। জগদ্দল বিহার পূর্ব-পশ্চিমে ১০৫ মিটার দীর্ঘ এবং উত্তর-দক্ষিণে ৮৫ মিটার দীর্ঘ ও চার দিকের ভূমি থেকে ৫ দশমিক ৪০ মিটার উঁচু। ইট ও মৃৎপাত্রের টুকরা থেকে প্রতœতত্ত্ববিদগন ধারণা করেন, নিচে বিশাল ধ্বংসাবশেষ লুকিয়ে আছে।
জগদ্দল বিহারের দক্ষিণে সাতটি এবং পশ্চিমে চারটি মোট ১১ টি কক্ষ উন্মোচিত হয়েছিল। প্রতিটি কক্ষের পরিমান ৩ দশমিক ৫০ মি. ও ৩ দশমিক ৩০ মিটার। প্রবেশ পথে অলংকৃত পাথরের চৌকাঠ (ডোর শিলা) ব্যবহার করা হয়েছে। কোন কোন কক্ষ ও বারান্দায় অলংকৃত দেবী কক্ষ দেখা যায়। এ সব দেবী কক্ষে সম্ভবত বৃহদাকারে মুর্তি ছিল।
আন্তর্জাতিকভাবে পাল শাসন আমলে (১০৭৭ থেকে ১১২০ খ্রি. পর্যন্ত) জগদল মহাবিহার বৌদ্ধ সভ্যতার গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র ছিল। এখানে বহুবৌদ্ধ পন্ডিত ছাত্র শিক্ষক একত্রে ধর্ম চর্চার কাজে নিয়োজিত ছিলেন। রাজা রামপাল একাদশ শতাব্দীতে এই বিহার নির্মাণ করেন এবং এখান থেকেই পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার সহ অন্যান্য স্থান দেখাশুনা করতেন বলে অনেকে ধারণা করেন।
এখনও বিহারটি খনন করলে হয়তো মহা মূল্যবান কিছু পাওয়া যাবে, এ ধারণা স্থানীয়দের। জগদল গ্রামের কৃষি শিক্ষক আলাল হোসেন জানান, বিহারটির সম্পদগুলো সংরক্ষনের উদ্যোগ নেওয়া দরকার। আগ্রাদ্বীগুণের বিহারটি স্থানীয়রা দখল করে নিচ্ছে। প্রায় তিন দিকে দোকান পাট ও ঘর-বাড়ি গড়ে তুলেছে।
ধামইরহাট পৌরসভার কমিশনার রেজুয়ান হোসেন বলেন, বিহারগুলো খনন করলে হয়ত মূল্যবান অনেক কিছু পাওয়া যাবে এগুলো রক্ষণাবেক্ষণ দরকার।
এবিএন/আব্দুল্লাহ হেল বাকী/জসিম/এমসি