শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • চিলমারীতে বাঁধ সংস্কারের নোটিশে দিশেহারা ১৮’শ পরিবার

চিলমারীতে বাঁধ সংস্কারের নোটিশে দিশেহারা ১৮’শ পরিবার

চিলমারীতে বাঁধ সংস্কারের নোটিশে দিশেহারা ১৮’শ পরিবার

চিলমারী (কুড়িগ্রাম), ১১ মার্চ, এবিনিউজ : কুড়িগ্রামের চিলমারীতে ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃক নির্মিত পাউবো বাধে বিভিন্ন সময়ে ভিটে-মাটি হারিয়ে আশ্রয় নেয়া প্রায় ১৮’শ পরিবারকে হঠাৎ করে বাড়ী সরিয়ে নেয়ার নোটিশ দেয়ায় ওই পরিবারগুলো দিশেহারা হয়ে পড়েছে। পাউবোর পক্ষ থেকে নোটিশ প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে বাড়ী-ঘর সরিয়ের নেয়ার নোটিশ দেয়া হয় তাদের। যে সকল পরিবারের সামান্যতম সামর্থ রয়েছে ইতোমধ্যে তারা বাড়ী-ঘর সরিয়ে নিলেও অধিকাংশ পরিবার কোথায় যাবে তা ভেবে পাচ্ছে না। হতাশা আর দুঃচিন্তায় দিন রাত কাটছে ওই সর্বহার মানুষগুলোর। ভূক্তভোগীরা সরকারের নিকট অন্যত্র পূণর্বাসন স্বাপেক্ষে পাউবো বাধ সংস্কারের দাবী জানায়।

১৯৭৪ সালের পর কড়ালগ্রাসি ব্রহ্মপুত্র নদের তীর ঘেষে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাধ নির্মিত হওয়ার পর থেকেই ব্রহ্মপুত্র নদে বাপ দাদার বাড়ি-ভিটে হারা মানুষগুলো ছোট ছোট ঘর তুলে ওই ওয়াপদা বাধে বসবাস শুরু করে। ভিটে মাটি হারা সর্বশান্ত মানুষ গুলো দিন মজুরীসহ নানা পেশার সাথে জড়িত। আবার অনেকে ভিক্ষাবৃত্তি বেছে নেয়। যাদের সামর্থ্য ছিলো তারা পরবর্তিতে সুযোগ বুঝে অন্যত্র চলে যায়। নিতান্ত গরীব মানুষগুলোর স্থায়ী ঠাঁই হয় এই ওয়াপদা বাঁধে।এরপর প্রতি বছর নদী ভাঙ্গে আর শতশত পরিবার ওয়াপদা বাঁধের দু পার্শ্বে স্লোপ কেটে নতুন নতুন বসতি গড়ে তোলে। বর্তমানে ওই বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের দু’পার্শ্বে মানুষদের গিজগিজে বসবাস। কেউ ইচ্ছে করেও এই পরিবেশে থাকতে চাইবে না, কিন্তু নিরুপায় হয়েই তারা সেখানে বসবাস করে।

হঠাৎ গত ৭ জানুয়ারী উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী উলিপুর পওর উপ- বিভাগ , পাউবো উলিপুর,কুড়িগ্রাম’র দপ্তর থেকে স্মারক নং- উলি/উবিপ্র/এল-১/১৭৬৬ এর মারফৎ চিলমারী উপজেলার নয়াবস এলাকা থেকে জোড়গাছ এলাকা পর্যন্ত মোট ১৮ ’শ পরিবারকে নোটিশ দিয়ে ১৫ দিনের মধ্যে তাদের বাড়ী-ঘর সরিয়ে নেয়ার নোটিশ দেয়া হয়। কে কোথায় যাবে? নোটিস পাওয়ার পর থেকে বাঁধে বসবাসকারীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। প্রায় সকলের একই প্রশ্ন কোথায় যাবো?

এদের অনেককে বাড়ি কোথায় নিয়ে যাবে জিজ্ঞেস করলে কাঁদে আর ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। খুশি(৪০) পেশায় চাতাল (রাইসমিলের শ্রমিক) শ্রমিক। তিন সন্তানের জননি। বাবার ভিটে বাড়ি নেই। কোথায় যাবে? লাল মিয়া পেশায় চেংটা ফেরি করে বিক্রি করে, শবেদা বেওয়া পেশায় ভিক্ষাবৃত্তি, কোথায় যাবে? নবাই কুশাই পেশায়, ভিক্ষাবৃত্তি, মোজাম ফেরি করে প্লাষ্টিক বিক্রি করে, ছক্কু দিন মজুর, রঞ্জু হাত পা অবস, হাসেম কাশেম অন্যের দোকানে দিন হাজিরায় কাজ করে, অনেক নিঃসন্তান মহিলা অন্যের বাড়িতে কাজ করে পেটের ভাতের নির্বাহ করে, কাশেম দিন মজুর, ঠেলা চালক, রিক্সা চালক -এরা সকলে এখন কোথায় যাবে জানেনা। এভাবে প্রতিটি বাড়ি বাড়ি খোঁজ নিলে দেখা যাবে কার কি অবস্থা, তারা কোথায় যাবে? উত্তর রমনা বাঁধে বসবাসরত খমির উদ্দিন(৯০),মাহিরন(৯২).আব্দুল জব্বার(৮০),বছিরন(৮২),ফাতেমা(৭০)দের সাথে কথা হলে তারা এ প্রতিনিধিকে বলেন, কোথায় যাব জানি না,তবে সরকারের হুকুম মানতে হবে।তাদের দাবী সরকারের পক্ষ থেকে তাদেরকে অন্যত্র পূর্ণবাসিত করা হউক।

এ ব্যাপারে পাউবো কুড়িগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ শফিকুল ইসলাম বলেন, ওয়াপদা বাধটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে গেছে।বন্যার সময় ভেঙ্গে যাবার সম্ভাবনা আছে। বাধটিকে সংস্কার করার প্রয়োজনে বাঁধে বসবাসকারীদেরকে বাড়ী ঘর অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার জন্য নোটিশ প্রদান করা হয়েছে। এই সকল পরিবার গুলোকে পূর্ণবাসিত না করে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে কেন?- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওয়াপদা বাধের স্লোপের নীচের দিকে প্রায় ১০০ ফিট করে আমাদের বড়পীট আছে। অসহায় পরিবার গুলো সেখানে তাদের বাড়ী ঘর সরিয়ে নিলে আমাদের কোন আপত্তি নেই।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বাধের নিচের ১০০ ফিট এলাকা জুরে দু’পার্শ্বের জমি পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া মালিকানা যাদের আছে তারা সে জমি গুলি দখল করে দীর্ঘ দিন যাবৎ সেখানে চাষাবাদ করছে।সরকারী জমি হওয়া সত্বেও কেউ কেউ আবার অন্যের নিকট নিজ অংশের জমি গুলি বিক্রিও করে দিয়েছে। সরকারী সহযোগিতা ছাড়া বাধের দু’পার্শ্বের বড়পীটের দখল নেওয়া সম্ভব নয় বলে বাধে বসবাসরত লোকজন মনে করে।

এ ব্যাপারে চিলমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মির্জা মুরাদ হাসান বেগ জানান,মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে চিলমারীতে বেশ কয়েকটি আশ্রয়ন কেন্দ্র ও গুচ্ছ গ্রাম তৈরীর প্রকল্প খুব তাড়াতাড়ি বাস্তবায়িত হবে। সেটা হলে প্রকৃত অসহায় পরিবার গুলিকে সেখানে পূর্ণবাসিত করা সম্ভব হবে।

এবিএন/গোলাম মাহবুব/জসিম/তোহা

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত