![ফরিদপুরে কে হচ্ছেন নৌকার মাঝি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/11/candidate_abnews_129813.jpg)
ফরিদপুর, ১১ মার্চ, এবিনিউজ : আব্দুর রহমান নাকি আরিফুর রহমান দোলন? ফরিদপুর-১ (আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালী) আসনে কে হচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী? আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে এ আলোচনাই চলছে সাধারণ মানুষের মধ্যে।
সরেজমিনে এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণসংযোগ, জনপ্রিয়তা বিবেচনায় এগিয়ে আছেন কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ও ফরিদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য আরিফুর রহমান দোলন। নিয়মিত তিন উপজেলাতেই যাচ্ছেন তিনি। উঠান বৈঠক, গণসংযোগ করছেন। এছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানেও অতিথি হিসেবে উপস্থিত হচ্ছেন তরুণ এই নেতা।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীতে সমান জনপ্রিয় আরিফুর রহমান দোলন। বয়সে তরুণ, স্বচ্ছ ভাবমূর্তির মানুষ হওয়ায় সবার সঙ্গে তার সুসম্পর্ক রয়েছে। আলফাডাঙ্গা উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি এস এম আকরাম হোসেন বলেন, ‘আরিফুর রহমান দোলন এই অঞ্চলের মানুষের মনে আগামিদিনের সুনেতৃত্বের বীজ বুনেছেন। তিনি মানুষের সঙ্গে সহজে মিশতে পারেন। সবার সঙ্গে কথা বলেন। সুখে-দুঃখে মানুষের পাশে থাকেন। মানুষ আগামী সংসদ নির্বাচনে এমন ব্যক্তিকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দেখতে চায়। আমি বিশ্বাস করি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাধারণ মানুষের এই চাওয়াকে মূল্যায়ন করবেন।’
বোয়ালমারী ও মধুখালী উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, আরিফুর রহমান দোলন উন্নয়নমুখী। কাজেকর্মে তার অদম্য স্প্রিহা। সদালাপি। ফরিদপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের দুর্গ বলে পরিচিত আলফাডাঙ্গায় তার জনপ্রিয়তার ধারে কাছে কেউ নেই।
স্থানীয় পর্যায়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আলফাডাঙ্গার সম্ভ্রান্ত পরিবারের সন্তান আরিফুর রহমান দোলন পারিবারিক ঐতিহ্যগতভাবেই বহু আগে থেকে সামাজিক উন্নয়ন কর্মকা-ে জড়িত। তিনি বিভিন্ন ধরনের সামাজিক কর্মসূচির মাধ্যমে নিজ উপজেলা ছাড়াও বোয়ালমারী ও মধুখালীবাসীর মধ্যে এরই মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। এছাড়া এই তিন থানার রাস্তাঘাট, ব্রিজ, কালভার্ট ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। তার চেষ্টা-তদবিরে আলফাডাঙ্গার কামারগ্রামে একটি টেকনিক্যাল ট্রেনিং সেন্টার (টিসিসি) নির্মিত হচ্ছে।
এছাড়া আরিফুর রহমান দোলন তার প্রতিষ্ঠিত কাঞ্চন মুন্সী ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে চক্ষু ক্যাম্প, কম্পিউটার প্রশিক্ষণ ও পাঠাগারে বই বিতরণসহ সামাজিক সেবা দিয়ে আসছেন। তিন উপজেলার অসংখ্য গরিব মেধাবী শিক্ষার্থীদের ভর্তি, বইপত্র কেনাসহ বিভিন্ন খাতে আর্থিক সহায়তা দিয়ে আসছে ফাউন্ডেশনটি। সরকারি ও বেসরকারি খাতে বেকার জনগোষ্ঠীর কর্মসংস্থান সৃষ্টিতেও তিনি সাধ্যমতো ভূমিকা রাখছেন। এসব কারণে সাধারণ মানুষের কাছে দোলন অতি প্রিয় একটি নাম। আগামি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আরিফুর রহমান দোলনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে আওয়ামী লীগের নিরষ্কুশ জয় হবে মনে করেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা।
বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান আবারও মনোনয়ন চান। বিগত নয় বছর তাকে এলাকাতে কম দেখা গেলেও এখন প্রায়ই যাচ্ছেন। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন। তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত নয় বছর জনবিচ্ছিন্ন থাকায় মাঠে তার অবস্থান নড়বড়ে হয়ে গেছে। কেন্দ্রীয় নেতা হিসেবে দলে তিনি এগিয়ে থাকলেও নির্বাচনী এলাকায় জনপ্রিয়তায় পিছিয়ে পড়েছেন।
বোয়ালমারী উপজেলা আওয়ামী লীগে একজন গুরুত্বপূর্ণ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বর্তমান এমপির জনপ্রিয়তা তলানিতে। গত নয় বছরে টিআর-কাবিখাসহ সরকারি বরাদ্দ বণ্টনে বড় ধরনের অস্বচ্ছতা ছিল। এমপি তার ঘনিষ্ঠদের বাইরে অন্য কারো সঙ্গে দেখা করা তো দূরে থাক, দেখা হলে দুর্ব্যবহার করে তাড়িয়ে দেওয়ার বিস্তর অভিযোগ আছে। ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকেও স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা তার দেখা পায়নি, এমন ঘটনাও ঘটেছে। এর বাইরে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, সরকারি দপ্তরে নিয়োগের মাধ্যমে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগও আছে।
তিন উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেও তৃণমূলে তার রাজনৈতিক অবস্থান তথৈবচ। সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনে আলফাডাঙ্গা, বোয়ালমারী ও মধুখালীতে তার সমর্থিত সদস্য প্রার্থী হেরে গেছেন।
স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা মনে করেন, সর্বশেষ বোয়ালমারী পৌরসভা নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী শাহজাহান মীরদাহ পিকুলের তৃতীয় হওয়ার পেছনে কারণ সাংসদ আব্দুর রহমান। স্থানীয় রাজনীতিতে পিকুল তার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত। স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তার ঘনিষ্ঠরা বলে বেড়ান যে, আব্দুর রহমানের দম্ভ তিনি দলের বড় নেতা। শেখ হাসিনার সাহস নাই তাকে মনোনয়ন না দেওয়ার। সাধারণ মানুষ এ ধরনের প্রচারণাকে অপছন্দ করছে। তাই আগামী নির্বাচনে তাকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী করা হলে নৌকার ভরাডুবি হবে বলে মনে করেন দলের নেতাকর্মীরাই।
এই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদ সদস্য কাজী সিরাজুল ইসলাম এবারও মনোনয়ন দৌড়ে আছেন। তার ঘনিষ্ঠরা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন দৌড়ে তিনি ভালো অবস্থানে আছেন। তবে আওয়ামী লীগের দুর্দিনে দল ছেড়ে বিএনপি যোগদান করার কারণে তিনি স্থানীয় রাজনীতিতে যে সংকটে পড়েছিলেন, এখন দলে ফিরলেও তার খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।
তিন উপজেলার আওয়ামী লীগ নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ ছেড়ে বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বক্তৃতা করেছেন। কয়েক হাজার স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। কেন্দ্রীয় তাকে দলে আবারও ফিরিয়ে নিলেও তৃণমূল নেতারা সেইসব স্মৃতি ভুলতে পারেননি। এছাড়া তার বয়স হয়েছে। স্মৃতিশক্তি কমেছে। নেতা-কর্মীদের নাম মনে রাখতে পারেন না। তাই আগামি নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নে তৃণমূলের মতামতে তিনি পিছিয়ে থাকবেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এবিএন/কে. এম. রুবেল/জসিম/এমসি