শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ২ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
  • হোম
  • সারাদেশ
  • কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাখো মানুষের সেবায় ৩ জন ডাক্তার

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাখো মানুষের সেবায় ৩ জন ডাক্তার

কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে লাখো মানুষের সেবায় ৩ জন ডাক্তার

কালিগঞ্জ, ১৩ মার্চ, এবিনিউজ : সাতক্ষীরার কালিগঞ্জ উপজেলার তিন লাখ ছয় হাজার ১৭৯ জন মানুষের চিকিৎসা সেবার একমাত্র সরকারী প্রতিষ্ঠান উপজেলার ৫০শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক ও যন্ত্রপাতি সংকট ছাড়াও অনিয়ম ও দূর্ণীতির কারণে কোন রকমে চলছে প্রতিষ্ঠানটি। কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা গেছে, ৫০শয্যার এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২১জন চিকিৎসকের স্থলে কাগজ পত্রে কর্মরত আছেন টিএইচই ডাঃ আকছেদুর রহমান, আরএমও তৈয়বুর রহমান ও মেডিকেল অফিসার জিয়াউর রহমান।

প্রেষনে, প্রশিক্ষণে, ছুটি এবং বদলীতে আছেন ১৮ জন। ২৪ জন সেবিকার স্থলে রয়েছেন ছয়জন। ডাঃ আকছেদুর রহমান নাম মাত্র হাসপাতালে হাজিরা দিয়ে দিনের অধিকাংশ সময় উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে অপারেশনের জন্য ছুটে বেড়ান। দু’জন ডাক্তারকে শতাধিক রোগী দেখতে হিমশিম খেতে হয়। অনেক সময় জরুরী বিভাগে কর্তব্য পালনের মত কোন ডাক্তার থাকে না। শনিবার দুপুর ১২টায় জরুরী বিভাগে দু’জন রক্তাক্ত জখমের রোগী আসলেও কোন ডাক্তার কে খুজে পাওয়া যায়নি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে ফোন দেওয়ার পরে টনক নড়ে। উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্রের উপ সহকারী মেডিকেল অফিসারদের দিয়ে জরুরী বিভাগে দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চোখ, দাঁত নাক, কান, গলা, হৃদরোগ, মেডিসিন, শৈল্য, স্ত্রী রোগ, হাড়, অবেদনবিদ ও শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ নেই। একটি আধুনিক ওটি বা অপারেশন থিয়েটার ও ব্লাড ব্যাংক থাকলেও অবেদনবিদের অভাবে দীর্ঘ ৫/৬বছর ধরে অস্ত্রপ্রচার হচ্ছে না। মাঝে মধ্যে দু’একটি সিজার অপারেশন দায় এড়াতে হাসপাতালের স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আকছেদুর রহমান করে থাকেন। বাকি রোগীদের তিনি উপজেলার সার্জিক্যাল ক্লিনিক, যমুনা ক্লিনিক, ঝর্না ক্লিনিক, এআলী ক্লিনিক সহ বিভিন্ন জায়গায় পাঠিয়ে মোটা অংকের টাকায় অপারেশন বাণিজ্য করেন বলে ভুক্ত ভোগীরা জানান। যে কারণে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে অস্ত্রপ্রচার কক্ষের যন্ত্রপাতি।

এক্স-রে অপারেটর না থাকায় ২০/৩০ বছরের পুরানো এক্সরে যন্ত্রটি বছরের অধিকাংশ সময় বিকল থাকে এবং কক্ষে সার্বক্ষনিক তালা মারা থাকায় যন্ত্রাংশ নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। আল্ট্রাসনোগ্রাম যন্ত্রটি থেকেও নেই। নেই কোন দক্ষ টেকনিশিয়ান । ফলে সারা বছর দরিদ্র রোগীদের অধিক টাকায় প্রাইভেট ক্লিনিকে গিয়ে রোগ নির্ণয় করতে হচ্ছে। দীর্ঘ এক যুগ ধরে কোন এ্যাম্বুলেন্স ছিল না। বিগত স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী আলহাজ্ব অধ্যাপক ডাঃ আ ফ ম রুহুল হক এমপির বোদৌলতে একটি এ্যাম্বুলেন্স এবং হাসাপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নিত করলেও সেটা এখন খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলছে।

কাগজ কলমে কালিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০ শয্যা হলেও বাস্তবে ৩৬টি শয্যা আছে, বাকি রোগীদের হাসপাতালের মেঝে, বারান্দায় থাকতে হয়। নেই বিদ্যুতের বিকল্প ব্যবস্থা। ক্লিনিক মালিক কাম দালালদের দৌরত্বে সার্বক্ষনিক হাসপাতাল চত্ত্বরে লেগেই আছে এরই মাঝে সকাল থেকে বিভিন্ন ঔষধ কোম্পানী রিপ্রেজেনটিভদের উপঢৌকন এবং ডাক্তারদের চেম্বারে থাকায় রোগীদের চিকিৎসা সেবা নিতে নানান ভোগান্তীর স্বীকার হলেও দেখার কেউ নেই।

এসমস্ত দালালরা মোটা অংকের কমিশন পাওয়ার আশায় রোগীদের ভুলিয়ে ভালিয়ে ভালো চিকিৎসার প্রলোভনের ফাঁদে ফেলে হাসপাতাল থেকে ক্লিনিকে ভর্তি করাতে ব্যস্ত থাকে। হাসপাতালে নেই কোন নিরাপত্তা প্রহরী। সার্বক্ষনিক নিরাপত্তাহীনতায় হাসপাতাল চত্ত্বর বিরাজ করলেও কর্তৃপক্ষের কোন দৃষ্টি নাই। হাসপাতালে মালি, আয়া না থাকলেও একজন মাত্র বাবুর্চী দিয়ে রোগীদের রান্না খাওয়ার ব্যবস্থা করতে হিমসিম খেতে হয়। হাসপাতালের খাদ্য সবেরাহের ঠিকাদার এবং ডাক্তারদের যোগসাজসে নি¤œ মানের খাবার পরিবেশন করা হয়। বর্তমান গরমের সময় অধিকাংশ ওয়ার্ডের পাখা গুলো বিকল থাকায় চরম ভোগান্তীতে পড়েছে রোগীরা।

প্যাথলজি বিভাগে সরকারী নির্দেশনা উপেক্ষা করে প্রতিদিন না মাত্র ২/৪টা রোগীর পরীক্ষা নিরিক্ষার টাকা সরকারী কোষাগারে জমা হলেও বাকি অংকাংশ রোগীদের রক্ত পরীক্ষা, সুগার পরীক্ষা সহ নানা যাবতীয় পরীক্ষার টাকা নিজেরা ভাগ বাটোয়ারা করে নিয়ে ফয়দা লুটছে বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে হাসপাতালের কয়েক জন নার্স, কর্মচারী, কর্মকর্তারা জানান। হাসপাতালের আবাসিক ভবন গুলো অধিকাংশ খালী পড়ে থাকায় বাসার আশে পাশে দিন রাতে বখাটেরা মাদক সেবন করে পরিবেশ দুষিত করে আসছে। একজন নার্স নাম প্রকাশ না খরার শর্তে বলেন বখাটে দের ভয়ে কেউ কিছু বলে না।

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে শনিবার দুপুরে উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার ও পরিবার কল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ আকছেদুর রহমান জানান, বিষয়টি নিয়ে উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের বার বার জানিয়েও কোন লাভ হয়নি। বরং ঢাকা থেকে ডাক্তাররা এসে বিভিন্ন তদবীরের মাধ্যমে আবার ফেরত চলে যাওয়ায় এবং কিছু ডাক্তার প্রশিক্ষণে থাকায় হাসপাতাল এখন প্রায় ডাক্তার শূন্য হয়ে পড়েছে বলে তিনি জানান।

এবিএন/মোঃ রফিকুল ইসলাম/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত