![বাংলাদেশের উন্নয়নে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান প্রধানমন্ত্রীর](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/13/pm_130112.jpg)
ঢাকা, ১৩ মার্চ, এবিনিউজ : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় শরিক হতে সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীদের আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, নিজস্ব শিল্প পার্ক গড়ে তোলার জন্য সরকার ৫শ’ একর বা তারও বেশি জমি বরাদ্দে প্রস্তুত রয়েছে।
আজ মঙ্গলবার হোটেল সাংগ্রিলাতে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর ব্যবসায়ী ফোরামের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
সারাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার উদ্যোগের উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ব্যবসায়ীদের জন্য অনেক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করছে এই সুবিধা গ্রহণ করে সেখানে শিল্প স্থাপনের জন্য সিঙ্গাপুরের ব্যবসায়ীরা এগিয়ে আসতে পারে।
শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠায় কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছে।
বাংলাদেশকে বিদেশী ব্যবসায়ীদের জন্য দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগের স্থান উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী তার সরকারের ব্যবসায়ীদের জন্য আইন দ্বারা বিদেশী বিনিয়োগের সুরক্ষা প্রদান, কর অবকাশ, যন্ত্রাংশ আমদানী করে শিল্প স্থাপনে স্বল্প শুল্ক ধার্য, যে কোনো সময় লভ্যাংশসহ শতভাগ মূলধন প্রত্যাহারের সুবিধা, রেমিট্যান্স রয়্যালিটি প্রদান, তরুণ ও কর্মদক্ষ জনশক্তি এবং প্রতিযোগিতামূলক বেতন-ভাতার সুবিধার প্রসঙ্গ উল্লেখ করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা, ভারত, জাপান এবং নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশী পণ্যের কোটামুক্ত এবং শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরা জাতিকে আমাদের ডিজিটাইজেশনের অংশ হিসেবে রূপকল্প ২০২১ এবং ২০৪১-এর মাধ্যমে জ্ঞানভিত্তিক সমাজে রূপান্তরের পথে এগিয়ে চলেছি। যেখানে ২০২১ নাগাদ দেশকে আমরা মধ্যম আয়ের দেশে এবং ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত সমৃদ্ধশালী হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
শেখ হাসিনা বলেন, ভর্তুকি দেয়া কৃষি খাত থেকে বাংলাদেশকে আমরা একটি আধুনিক, সহনীয় এবং বহুমুখী অর্থনীতির পথে নিয়ে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, আমাদের জিডিপির চার-পঞ্চমাংশ আসে উৎপাদনশীল খাত থেকে , ২০১৭ সালে প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস এক তথ্যানুয়ায়ী, আগামী তিন দশকের মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি বিশ্বের তৃতীয় ক্রমবর্ধমান অর্থনীতি হিসেবে উঠে আসবে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক শীর্ষ দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের ২০১৭ সালের ৮ আগস্ট প্রকাশিত এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশ বিগত ২০ বছরে বিস্ময়কর অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০৩০ সাল নাগাদ দেশের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই শহরের ভোক্তা শ্রেণি হবে, যা একটি বিশাল বাজারের সৃষ্টি করবে।
বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গেল অর্থবছরে আমাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ দশমিক ২৮ শতাংশ, রিজার্ভের পরিমান বর্তমানে ৩৩ বিলিয়ন ডলার। যেখানে ২০০৫ সালে এই রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলার।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আমাদের রপ্তানীর পরিমান ছিল ৩৪ দশমিক ৬৭ বিলিয়ন ডলার, দারিদ্র্যের হার যেখানে ২০০৫ সালে ৪১ দশমিক ৫ শতাংশ, তা বর্তমানে ২২ শতাংশে নেমে এসেছে। মানুষের গড় আয়ু বেড়ে ৭২ বছর ৬ মাস হয়েছে।
তিনি বলেন, দেশে বর্তমানে জনগণের মাথাপিছু আয় ১৬শ ১০ মার্কিন ডলার। ক্রয় সক্ষমতার দিক থেকে বাংলাদেশ এখন বিশ্বের ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতির দেশ।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির স্বীকৃতি হিসেবে শিগগিরই বাংলাদেশ স্বল্প আয়ের দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে গ্র্যাজুয়েশন লাভ করতে যাচ্ছে।
বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের খ্যাতি বিশ্বজোড়া উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৭ সালে তৈরী পোষাক খাতে আমাদের রপ্তানীর পরিমান ছিল ৩০ বিলিয়ন ডলার। সেক্ষেত্রে পোষাক রপ্তানীর শীর্ষ দেশ চীনের পরের অবস্থানটিই বাংলাদেশের।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০২১ সাল নাগাদ তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানীর পরিমান ৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করার লক্ষ্য নিয়ে তার সরকার কাজ করে যাচ্ছে।
একই সঙ্গে ওষুধ শিল্পের সমৃদ্ধির চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্থানীয় চাহিদার ৯৭ শতাংশ মিটিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ আমাদের তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১২০টি দেশে রপ্তানী হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় দেশের তথ্য প্রযুক্তি খাত এবং জাহাজ নির্মাণ শিল্পে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশে এখন বিশ্বমানের হালকা ও মাঝারি ধরনের সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরী হচ্ছে। একইসঙ্গে বিদেশী বিনিয়োগে দেশের বিভিন্ন অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে গড়ে উঠছে অত্যাধুনিক আইটি পার্ক। ২০২১ সাল নাগাদ ৫ বিলিয়ন ডলার রফতানির লক্ষ্যমাত্রা অর্জনেই এগিয়ে যাচ্ছে দেশের আইটি খাত।
ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুর, সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশন, বাংলাদেশ বিজনেস চেম্বার অব সিঙ্গাপুর যৌথভাবে ‘নতুন অধ্যায়ের পথে বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর অর্থনৈতিক অংশীদারিত্ব’ শীর্ষক প্রতিপাদ্য নিয়ে এ অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে।
সিঙ্গাপুরের বাণিজ্য শিল্পমন্ত্রী লিম হং কিয়াং অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশগ্রহণ করেন এবং ইন্টারন্যাশনাল এন্টারপ্রাইজ সিঙ্গাপুরের ভারপ্রাপ্ত সিইও ক্যাথি লাই এবং সিঙ্গাপুর বিজনেস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান এসএস তেও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ এবং সিঙ্গাপুর ও বাংলাদেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
এবিএন/সাদিক/জসিম/এসএ