![তালপাতার পাখা তৈরী করে জীবিকা নির্বাহ করছে ২০০ পরিবার](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/14/talpakha_130298.jpg)
ফুলবাড়ীয়া (ময়মনসিংহ) , ১৪ মার্চ, এবিনিউজ : গরমের শুরুতেই ময়মনসিংহের ফুলবাড়ীয়ায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে হাত পাখা তৈরির কারিগরা। গরমে মানুষকে একটু শান্তির পরশ দিতে দিন রাত পরিশ্রম করে তৈরি করছেন তাল পাতার হাত পাখা। পূর্ব পুরুষদের এ ব্যবসা এখনো ধরে রেখে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে ফুলবাড়ীয়া উপজেলার ১০নং কালাদহ ইউনিয়নের বিদ্যানন্দ গ্রামের প্রায় ২ শতাধিক পরিবার।
গরম শুরুর সাথে সাথেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ফুলবাড়ীয়ার হাতপাখা তৈরীর কারিগরেরা । তাল পাতার হাত পাখা তৈরি তাদের একমাত্র পেশা।এটি তারা বানিজ্যিক ভিত্তিতে করে থাকে। এদের অনেকেই বসত ভিটা ছাড়া কোন ফসলি জমি নেই।এদের প্রধান ও একমাত্র পেশা হাতপাখা তৈরি। বিদ্যানন্দ ও তার আশ পাশের এলাকার হাত পাখা তৈরি কারিগররা বলেন, গরম পড়লেই হাতপাখা পল্লীর কারিগরদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। যেন কথা বলার সময় নেই তাদের। শরীর দিয়ে নোনতা পানি বের হলেও নিজেরা হাতপাখা দিয়ে বাতাস খাওয়ার সময় নেই তাদের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বিদ্যানন্দ গ্রামের পুরুষ মহিলা সকলেই তালপাতার পাখা তৈরীতে ব্যস্ত, কেউ বা তালপাতা কেটে সাইজ করছে, কেউ সেলাই করছে, কেউ আবার প্রস্তুত হওয়া হাত পাখাগুলো বিক্রির জন্য বোঝা বাঁধছে। হাতপাখা তৈরীর কারিগর সাইফুল বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষরা এই তাল পাখা তৈরি করে জীবন জীবিকা চালাতো। ফলে আমরাও পূর্ব পুরুষের পেশাটি ধরে রেখেছি। তিনি আরো জানান, বিদ্যানন্দ ছাড়াও এর আশ পাশ এলাকার প্রায় ২০০টি পরিবার পাখা তৈরির কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছে ।
প্রতিটি বাড়িতে পাখা তৈরির কাজে এত ব্যস্ত যে কারও কথা বলার সময় নেই। কাজের চাপের কারনে তারা ঠিকমত খাবার পর্যন্ত সময় পায় না। পাখা তৈরীর কারিগর ও পাইকারী বিক্রেতা ছাইফুল ইসলাম জানান, হাতপাখা তৈরির প্রধান উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ করা হয় শীতকালে। জেলা বিভিন্ন এলাকার থেকে তারা তাল পাতা সংগ্রহ করে থাকে । এখন তালপাতা বিক্রির করার জন্য পাইকাররা ভ্যানগাড়ী করে বাড়ী বাড়ী নিয়ে আসে। এই তালপাতা এনে পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হয়।
তারপর পাতা ভিজে নরম হয়ে গেলে পানি থেকে উঠিয়ে তা কেটে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। একটা পাতায় দুটো পাখা হয়। এই পাতা পুনরায় বেঁধে রাখা হয়। এভাবে রাখার পর গরমের মৌসুম আসার সাথে সাথেই সে গুলো আবার পানিতে ভিজতে দেয়া হয়। পানিতে দেবার পর পাতা নরম হয়ে গেলে শুরু হয় মূল পাখা তৈরীর কাজ। সাধারণত পরিবারের বড়রা পানিতে ভিজে নরম হয়ে যাওয়া পাতা ছাড়িয়ে পাখা আকৃতির করে চারিদিক কেটে সমান করে থাকে।
আর বাড়ির মেয়েরা সে গুলো বাঁশের সলা দিয়ে বেঁধে ফেলে। পরিবারের ছোট সদস্যরা এ গুলো সুচ আর সুতা দিয়ে সেলাই করে থাকে। এভাবে ব্যবহারের উপযোগী হয়ে উঠে তালপাতার হাতপাখা। বাড়ির ছেলে, মেয়ে, শিশুরা ও গৃহবধুরা সবাই মিলে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ১/২টা পর্যন্ত পাখা তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন। বিদ্যানন্দ গ্রামের গৃহবধু রোকেয়া জানান, তারা প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে সারা দিনের খাবার একবারে রান্না করে রাখে। দুপুরে কেউ রান্না করে না। তারা শুধু মাত্র সকাল ও রাতে রান্না করে।
কারিগর আমিনুল ইসলাম জানান, আমাদের তৈরিকৃত পাখা পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করা হয়। এখান থেকে পাইকাররা প্রতিপিস পাখা ১২/১৩ টাকা দরে ক্রয় করে নিয়ে খুচরা ২০/৩০ টাকায় বিক্রি করেন। মুলত পাখা ব্যবসা থাকে গরমের ৩/৪ মাস ।এ সময় দেশের বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়িরা এসে পাইকারি দরে আমাদের গ্রাম থেকে পাখা কিনে নিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের হাট বাজারে বিক্রি করে থাকে । বৃদ্ধা রোকেয়া বেগম বলেন ,আমি বউ হয়েই এসে পাখা তৈরী করছি ,আমার স্বামীও ছেলেরাও এ পেশা জড়িত । সরকার যদি আমাদেরকে সহজ শর্তে ঋনের ব্যবস্থা করতো তাহলে আমরা মৌসুমের তালপাতা কিনতে পারলে আরো বেশী লাভবান হতে পারতাম ।
এবিএন/হাফিজুল ইসরাম স্বপন/জসিম/নির্ঝর