বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ায় অবাদে চলছে মৎস্য শিকার

ভোলার মেঘনা-তেতুলিয়ায় অবাদে চলছে মৎস্য শিকার

ভোলা, ১৫ মার্চ, এবিনিউজ : নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীতে মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছে জেলেরা। কোস্টগার্ড কিংবা প্রশাসন সকলের সামনেই প্রকাশ্যে দিবালকে জেলেরা জাল সাভার নিয়ে নদীতে শিকার করছে মৎস্য।

এতে করে জাটকা সংরক্ষণ ও বিভিন্ন প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে টানা দু-মাসের অভিযান ভেস্তে যেতে বসেছে। জেলেদের দাবি নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো তারা পায়নি পুনর্বাসনের চাল। তাই পেটের দায়ে জীবিকার সন্ধানে বাধ্য হয়েই কোন কোন জেলে নদীতে নামলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার গুলোরই জীবন জীবিকা কাটছে অর্ধাহারে অনাহারে।

জাটকা সংরক্ষণ ও অন্য প্রজাতির মাছের প্রজনন বৃদ্ধিতে ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত টানা দু-মাস ভোলার মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর ১৯০ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে অভয়াশ্রম ঘোষনা করা হয়েছে। এর মধ্যে তেতুলিয়া নদীর ভোলার ভেদুরিয়া থেকে পটুয়াখালীর চররুস্তম পর্যন্ত ১০০ কিলোমিটার ও মেঘনা নদীর ভোলার ইলিশা থেকে মনপুরার চরপিয়াল পর্যন্ত ৯০ কিলোমিটার এলাকায় জুড়ে সকল ধরনের জাল ফেলা মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে সরকার।

এ সময় জাটকা ইলিশের পাশাপাশি পোয়া, বাটা, তপসিমাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ জোয়ারের সময় ডিম ছাড়ার জন্য অভয়াশ্রমে চলে আসে। তাছাড়া ইলিশের পোনা গুলো বড় হওয়া পর্যন্ত এ অভয়াশ্রম গুলোতে ছুটা-ছুটি করে।

সংগত কারণেই এ দু’মাস নদীতে মাছ ধরাসহ সকল ধরনের জাল ফেলার উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য কারীর বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে জেলা জরিমানাসহ বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তির ব্যবস্থা রয়েছে।

এ দিকে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে মেঘনা ও তেতুলিয়া নদীর অভয়াশ্রম গুলোতে অবাধে শিকার করছে মৎস্য। গেলো মা ইলিশ রক্ষায় মৎস্য বিভাগের পাশাপাশি কোস্টগার্ড ও প্রশাসনের নির্লশ পরিশ্রমে ব্যপক সফলতা পেলেও টানা দুই মাসের চলমান অভিযানে অনেকটা ব্যর্থতায় রূপ নেয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সকাল কিংবা বিকেল যে কোন সময়ই নদীর তীরে গেলে চোখে পড়বে মাছ ধরার এমনই চিত্র।

স্থানীয়রা বলছেন, অন্য সময়ের তুলনায় চলমান অভিযানে চোখে পড়ার মতো তেমন কোন কঠোরতা দেখা যায়নি। এক কথায় বলতে গেলে এবারের অভিযান চলছে একেবারেই ঢিমেতালে।

নদীর তীরবর্তী কাচিয়া ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি আশিক মেম্বার বলেন, গত বছর দুই মাসের অভিযানে মাছ ধরার অপরাধে যে পরিমাণ জেলেদের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে, এবার সেই কারাদন্ডতো দুরের কথা নদীতে সেই পরিমাণ অভিযানও করা হয় না।

ইলিশা ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. সিরাজ উদ্দিন বলেন, নদীতে যে দ্ইু মাসের অভিযান চলছে তা দেখে বোঝার কোন উপায় নেই। কোন জেলেই মাছ ধরা থেকে বিরত নেই। জাল ট্রলার নিয়ে অধিকাংশ জেলেকেই মাছ ধরার কাজে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়।

এ ব্যপারে সদর উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামন বলেন, গত বছর সদর উপজেলায় অভিযান পরিচালনা করে প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ৮৪ জন জেলেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে।

অথচ এ বছর অভিযান পরিচালনা করে এ যাবত ১১৯ জন জেলেকে আটক করলেও এদের মধ্যে কোন জেলেকে কারাদন্ড না দেয়ায় তারা সামান্য টাকা জরিমানা দিয়ে আবার নদীতে মাছ ধরতে নেমে যায়। কারাদন্ড না হওয়াতেই জেলেরা মাছ ধরতে উৎসাহী হয় বলে তিনি মনে করেন।

এ দিকে জেলার প্রতিটি উপজেলাতেই খোজঁ নিয়ে জানা গেছে, নিষেধাজ্ঞার ১৫ দিন পেড়িয়ে গেলেও এখনো জেলেরা পায়নি তাদের পুনর্বাসনের চাল। তাই পেটের দায়ে জীবিকার সন্ধানে জীবনের ঝুকি নিয়ে বাধ্য হয়েই কোন কোন জেলে নদীতে নামলেও অধিকাংশ জেলে পরিবার গুলোই চলছে অর্ধাহারে অনাহারে।

ধনিয়া ইউনিয়নের তুলাতুলি এলাকার মোছলেউদ্দিন মাঝি বলেন, আমাদের মতো জেলেরা নদী থেকে মাছ ধরে নিজেদের জীবন জীবিকা নির্বাহ ছাড়াও দেশের মানুষকেও বাচিঁয়ে রাখি। কিন্তু আমাদের দিকে দেখার যেন কেউই নেই।

হারুন মাঝি বলেন, সরকার অভিযান দিয়েছে ঠিকই, কিন্তু আমাদের মতো গরীব অসহায় জেলেরা কিভাবে চলবো সেই দিকে কারোই খেয়াল নেই। অভিযানের ১৫ দিন কেটে গেলেও সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আমাদেরকে কোন সাহায্য সহযোগীতা করা হয়নি।

তবে ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই জেলার সাত উপজেলায় জেলেদের পুনর্বাসনের চাল পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান, জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আকরাম হোসেন।

তিনি বলেন, আমাদের কাছে চাল আসা মাত্রই তালিকা অনুযায়ী জেলেদের চার মাস হিসেবে ৮ হাজার ৩শ’ ৪৪ মেট্রিক চাল জেলার সাত উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তাদের বরাবর চাল পাঠিয়ে দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত জেলেরা কেন চাল পায়নি সে সম্পর্কে আমার জানা নেই।

এ ব্যাপারে সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মৃধা মো. মোজাহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহ আগেই প্রতিটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বরাবর চালের ডিউ পাঠিয়ে দিয়েছি। কিন্তু এখন পর্যন্ত তারা কেন চাল বিতরন করেনি তা আমি সঠিক বলতে পারছি না।

তবে জেলার নিবন্ধনকৃত ১ লাখ ৩২ হাজার জেলের মধ্যে ৫২ জেলের নামে চাল বরাদ্ধ আসায় অনেকটা হতাশা প্রকাশ করে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম বলেন, আমরা তালিকা অনুযায়ী চাহিদা পাঠিয়েছি। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে পুরাতন তালিকা অনুযায়ীই ৫২ হাজার জেলের জন্য চাল পাঠিয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে কয়েকবার মন্ত্রণালয় চিঠিও দেয়া হলেও এখন পর্যন্ত তা অপরিবর্তিত রয়েছে বলে তিনি জানান।

এবিএন/আদিল হোসেন তপু/জসিম/এমসি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত