![তিস্তার চরে ভূট্টার আবাদে কৃষকের সর্বনাশ](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/18/jaldhaka-bhutta_130978.jpg)
জলঢাকা (নীলফামারী) , ১৮ মার্চ, এবিনিউজ : প্রবীণদের মুখে একটা আওয়াজ ছিল, লোভে পাপ আর পাপে বিনাশ। এরই বাস্তবতা মিলেছে চরের কৃষকদের মাঝে। তারা গত মৌসুমে সুপার- ৪৫ জাতের হাইব্রিড ভূট্টা আবাদ করে ভাল ফলন পাওয়ায় এবারে বেশীর ভাগ জমিতে ওই জাতের ভূট্টা বীজ লাগায়। তাদের অনেকেই স্বপ্ন দেখতেন, এই ফসল ঘরে তোলার পর সংসারের অন্ন যোগানোর পাশাপাশি মেয়ের বিয়ে দিবেন, কিন্তু বিধিবাম ! সেই স্বপ্ন আর তাদের পুরন হলোনা। ভূট্টা রোপনের ২ মাস হলেও ফসল হওয়ার কোন লক্ষণ পাওয়া যায়নি। ভূট্টা গাছে ১/২ ফিটের মধ্যেই ফলনের বদলে ফুল ধরেছে। যা, ওই কৃষকদের কোন কাজে আসবে না।
শনিবার নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার গোলমুন্ডা ইউনিয়নের চর ভাবনচুরে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় এমন চিত্র। কথা হয় ক্ষতিগ্রস্ত কৃষক ওই এলাকার মৃত মোজাম্মেল হকের ছেলে ময়নুল ইসলামের সাথে। তিনি বলেন, সুপার- ৪৫ জাতের হাইব্রিড ভূট্টার বীজ এবার হামার সর্বনাশ করেছে। আমাদের এই তিস্তার চরে ধান ও পাটসহ অন্যান্য ফসলের চেয়ে ভূট্টার ফলন ভাল পাওয়া যায়, তাই প্রধান ফসল হিসাবে ভূট্টার আবাদ করি। এতে যা, পাওয়া যায়, তা দিয়েই সারা বছর আমরা ভাল চলি।
আর এক প্রতিবেশী কৃষক সিরাজুল ইসলাম জানান, তার ৪ মেয়েসহ ৭জনের সংসার। উপার্জনের একমাত্র অবলম্বন কৃষি। অনেক স্বপ্ন নিয়ে এবার ১০ বিঘা জমিতে সুপার-৪৫ হাইব্রীট জাতের ভুট্টা বীজ লাগিয়েছেন। সেই ভুট্টা বিক্রি করে মেয়ের বিয়ে দিবেন কিন্তু ফসলের বয়স ২ মাস অতিবাহিত হলেও গাছের উচ্চতা মাত্র এক থেকে দুই ফিট। সেই গাছে আবার ফুল ধরেছে। যা থেকে ফলন হওয়ার আর কোন সম্ভাবনায় নেই। তার স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়েছে সুপার-৪৫ জাতের ভুট্টা রোপন করে।
সিরাজুল বলেন, আবাদের পিছনে টাকা পয়সা সবেই শেষ, জমিতে ফসলও নেই, এখন মেয়ের বিয়ে দেওয়া তো দুরের কথা, বাকী বছরটা কিভাবে সংসার চলবে তা নিয়ে বড় দুশ্চিন্তায় পরেছি।
এদিকে রফিকুল ইসলামের ছেলে মোজাম্মেল হক জানায়, হালের বলদ বিক্রি করে ১২ বিঘা জমিতে একই জাঁতের ভুট্টা লাগিয়েছি সময়মতো পরিচর্যাও করছি কিন্তু, গাছ গুলো কেন জানি রুগ্ন হয়েছে। পরে খবর নিয়ে দেখি যারাই এবার এই বীজ আবাদ করেছে, সবারে একই অবস্থা। আবার পাশের জমিগুলোতে অন্যান্য জাতের বীজে বাম্পার ফলন হয়েছে।
এসময় ক্ষতিগ্রস্ত আরোও বেশ কিছু কৃষক অভিযোগ করে বলেছেন, কোম্পানীর ব্যাপক প্রচার প্রচারণায় ভালো ফলনের প্রলোভে সুপার-৪৫ জাতের বীজ কিনে আমরা চরমভাবে প্রতারিত হয়েছি।
শুধু এরাই নয়, কৃষক সাদেকুল, বাবুল, আকিনুজ্জামান বাচ্চু, শাহিনুর রহমান, ওসমান আলী, সাদ্দাম, আমীর হোসেন, সবুর আলী সহ এরকম শত-শত কৃষকের একই অভিযোগ সুপার-৪৫ জাতের ভুট্টা বীজের উপর।
বীজের বিশয়ে ওই কোম্পানীর স্থানীয় ডিলার শাহিনুর রহমান খোকন জানান, আমি এই মৌসুমে এ অঞ্চলটিতে ৩ মেঃ টন বীজ বিক্রি করেছি। যা ১২ শত হেক্টর জমিতে রোপন করা যায়। ফলন ভাল হলে এসব জমিতে ১৯২০ টন ভুট্টা উৎপাদন সম্ভব। যার আনুমানিক বাজার দর ৩ কোটি ৮০ লক্ষ টাকা।
তিনি আরো জানান, কৃষকরা বীজ রোপনের পরে ঠিকমত না গজানো, গাছ রুগ্ন, অপরিপক্ক গাছে ফুল ধরা সহ বিভিন্ন অভিযোগ আমার কাছে নিয়ে আসলে, আমি বিষয়টি কর্তৃপক্ষকে অবগত করেছি। ইউপি চেয়ারম্যান তোজাম্মেল হক বলেন, তিস্তার তীরবর্তী এলাকার কৃষকরা একমাত্র ভুট্টার ওপরে নির্ভরশীল এবং ভুট্টাই তাদের প্রধান ফসল যা চাষাবাদ করে সারাবছরেই পরিবার পরিজনকে নিয়ে চলতে হয় তাদের।
তিনি বলেন এ বিষয়টি আমি ইউএনও র সাথে কথ বলবো। পদ্মাসীড কোম্পানীর আঞ্চলিক ম্যানেজার নাজমুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি জানিয়েছেন, বীজের সমস্যা না জমির সমস্যা এটা আমরা ভালো বলতে পারবো না। এ বিষয়ে কৃষি বিভাগ ভালো বলতে পারবে। গেল বছর এ বীজের মান নিয়ে কেউ প্রশ্ন তুলেনি এবারে এ সমস্যা শুধু ওই এলাকায়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মুহাম্মদ মাহফুজুল হক জানান, বিষয়টি সরেজমিনে গিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এবিএন/মোঃ হাসানুজ্জামান সিদ্দিকী হাসান/জসিম/নির্ঝর