![ওসি জালাল আর বাড়িতে আসবে না](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/20/abnews-24.bbbbbbbb_131329.jpg)
ঝিনাইদহ, ২০ মার্চ, এবিনিউজ : আমার ছেলে জালাল উদ্দীন তিন মাস আগে বাড়িতে এসেছিল। আবার আসবে বলেছিল কিন্তু সে আর কখনো বাড়িতে আসবে না। সন্ত্রাসীরা তাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। কথাগুলি কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলছিলেন ঢাকার মিরপুরে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) জালাল উদ্দিন ওরফে জাহাঙ্গীরের মা আয়েশা বেগম (৮০)। পুলিশ ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দীন ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার ভোলপাড়া গ্রামের মৃত বিশারত ম-লের ছেলে।
জালাল উদ্দীন মেজো ভাই আলাউদ্দীন জানান, তারা ৫ ভাই ও ২ বোন। তাদের মধ্যে জালাল উদ্দীন সেজো। কালীগঞ্জ উপজেলার গোপালপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে সে এসএসসি পরীক্ষা করে দিয়ে পাস করে পুলিশে চাকুরী নিয়ে ঢাকা চলে যায়। চাকুরীরত অবস্থায় সে এইচএসসি ও বিএ পাস করে এবং পুলিশ বিভাগে পরীক্ষা দিয়ে পর্যায়ক্রমে এএসআই, এসআই ও সর্বশেষ ওসি পদে পদোন্নতি পান। চাকুরীকালে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পুরস্কারও গ্রহণ করেছেন। সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত না হলে জালাল আরো ১২ বছর চাকুরী করতে পারতেন।
তিনি আরো জানান, তার ৫ ভাইদের মধ্যে শুধুমাত্র জালাল উদ্দীন পুলিশের চাকুরী করতেন। বাকি সব ভাইরা কৃষি কাজের করেন। জালাল উদ্দীন কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার রসুলপুর গ্রামের রফি উদ্দীন মাস্টারের মেয়ে ও সাবেক ওসি সিরাজের চাচাতো বোন রীনা পারভিনকে বিয়ে করেন। তাদের তৃপ্তি ও তুর্জ নামের দুই মেয়ে আছে। বড় মেয়ে তৃপ্তি ও ছোট মেয়ে তুর্জ দু’জনই ঢাকার ভিকারুন্নেছা নুন স্কুল এন্ড কলেজে পড়াশুনা করেন।
এদিকে মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যদের মধ্যে শোকের মাতম নেমে আসে। সকালে খবর পাওয়ার পর পুলিশ ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দীনের বড় ভাই জামাল উদ্দীন মাইক্রোবাস নিয়ে লাশ আনার জন্য ঢাকায় গেছেন। দুপুর আড়াই টার দিকে ঢাকা থেকে লাশ রওনা হয়েছেন বলে জানান নিহত জালাল উদ্দীনের মেজ ভাই আলাউদ্দীন। তবে লাশ কালীগঞ্জে পৌছাতে রাত হয়ে যেতে পারে বলে তিনি জানান।
নিহত পুলিশ ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দীনকে পৈত্রিক বাড়ির পাশের বাঁশ বাগানে দাফন করা হবে। দুপুরে সরেজমিনে সেখানে যেয়ে দেখা গেছে বাঁশ কাটা ও কবর খোঁড়ার প্রস্তুতি চলছে। লাশ আসার পর জানাযা শেষে সেখানে তাকে দাফন করা হবে।
নিহত ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দীনের বৃদ্ধ মা আয়েশা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, ৩/৪ মাস আগে আমার ছেলে ওসি হয়েছে। তিন মাস আগে ডিসেম্বর মাসে সে বাড়িতে আসে। যাবার সময় বলে যায় আবার ছুটি পেলে বাড়িতে আসবো। কিন্তু তার আর আসা হবে না। সন্ত্রাসীর তাকে গুলি করে মেরে ফেলেছে। তিনি আরো বলেন, সেখানে তো অনেক পুলিশ কিন্তু শুধুমাত্র আমার ছেলে জালাল গুলিতে মারা গেল। সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত ডিবির ইন্সপেক্টর জালাল উদ্দীন ১৯৮৯ সালে কনস্টেবল পদে পুলিশে যোগদান করেন বলে স্থানীয় থানা পুলিশ সূত্রে জানাগেছে।
কালীগঞ্জ থানার অফিসার-ইন-চার্জ (ওসি) মিজানুর রহমান খান জানান, ঢাকার রাজারবাগ পুলিশ লাইনে ইন্সপেক্টর জালালের প্রথম জানাযা হয়েছে। সেখানে থেকে লাশ নিয়ে পরিবারের সদস্যরা রওনা হয়েছেন। লাশ আসার পর ভোল পাাড়র নিজ গ্রামে দ্বিতীয় জানাযা শেষে তাকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
প্রসঙ্গত ঢাকার মিরপুরের মধ্য পীরেরবাগ এলাকায় একটি বাসায় অস্ত্র উদ্ধারে গিয়ে সন্ত্রাসীদের হামলার মুখে পড়েছে ডিবি পুলিশের একটি দল। অভিযানের সময় সেখানে সন্ত্রাসীদের গুলিতে ডিবির পুলিশ পরিদর্শন জালাল উদ্দিন মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন। আশঙ্কাজনক অব্স্থায় তাকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হলে সেখানে রাত ২টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
এবিএন/নয়ন খন্দকার/জসিম/তোহা