বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo
পথচারীদের ভোগান্তীর পাশাপাশি যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন

ভোলার বিভিন্ন সড়কে যেন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে

ভোলার বিভিন্ন সড়কে যেন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে

ভোলা, ২৩ মার্চ, এবিনিউজ : ভোলার অধিকাংশ সড়কের পাশেই চলছে জমজমাট বালুর ব্যবসা। এতে করে ওই সকল সড়কে স্বাভাবিক ভাবে যানবাহন চলাচল করতে পারছে না। প্রতিদিনই ঘটছে কোন না কোন দুর্ঘটনা। স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীদের ভোগান্তীর পাশাপাশি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে নানা রকম রোগ ব্যাধীতে। প্রায় দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে রাস্তার পাশে এভাবে বালুর ব্যবসা চালিয়ে আসলেও নির্ভিকার যেন প্রশাসন।

ভোলা সদর উপজেলার দক্ষিণ দিঘলদী ইউনিয়নের বাংলাবাজার। যা ভোলার উপশহর নামে পরিচিত। ছোট এই শহরটিতে রয়েছে স্থানীয় সংসদ সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের মায়ের নামে একটি কমপ্লেক্স। যা ফাতেমা খানম কমপ্লেক্স নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে স্বাধীনতা জাদুঘর, দৃষ্টি নন্দন একটি মসজিদ, বিদ্ধাশ্রম, ফাতেমা খানম ডিগ্রী কলেজ, সরকারী বালক শিশু পরিবার, ফাতেমা খানম মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্র, টিচার্স ট্রেনিং সেন্টার, যুব উন্নয়ন কেন্দ্র ছাড়াও আজহার-ফাতেমা নামে আরো একটি মেডিকেল স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে।

ভোলার বিভিন্ন সড়কে যেন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে

বিভিন্ন উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশ মূখ হিসেবে পরিচিত দৃষ্টি নন্দন এই ছোট্ট শহরটিকে অপরিছন্ন করে রেখেছে বালুর ব্যবসা। শহরের প্রতিটি সড়কের সাথে কিছু অস্বাধু ব্যবসায়ী পাহাড় সমান বালু রেখে দিনের পর দিন চালিয়ে যাচ্ছে তাদের ব্যবসা। এতে করে ওই সকল সড়ক দিয়ে একদিকে চলাচল করতে পারছে না স্বাভাবিক ভাবে যানবাহন চলাচল। অন্যদিকে স্কুল কলেজগামী শিক্ষার্থীসহ সাধারণ পথচারীদের ভোগান্তীর পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে তারা নানা রকমের রোগ ব্যাধীতে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, দীর্ঘ দুই যুগের বেশি সময় ধরে রাস্তার সাথেই এই অঞ্চলের প্রভাবশালী ব্যবসায়ী বজলু হাওলাদার, হারুন ব্যাপারী, সুমন ব্যাপারী, শাকাওয়াত সহ বেশ কয়েক বালু ব্যবসায়ী রাস্তার পাশে পাহাড় সমান বালুর স্তুপ তৈরি করে তাদের বালু ব্যবসা চালিয়ে আসলেও আদৌ পর্যন্ত এদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে তেমন কোন পদক্ষেপ গ্রহন করতে দেখা যায়নি। এতে করে দিনের পর দিন রাস্তার পাশে এক এক করে তৈরি হওয়া বালুর ব্যবসা সাধারণ মানুষের ভোগান্তীর মাত্র বাড়িয়ে তুলেছে।

ভোলার বিভিন্ন সড়কে যেন বালু ব্যবসায়ীদের দখলে

স্থানীয় রট সিমেন্ট ব্যবসায়ী সাহাবুদ্দিন বলেন, আমার রাস্তার পাশে দোকান দিয়ে রট সিমেন্টের ব্যবসা করি তাতেই মানুষের সমস্যা হচ্ছে। আর বালুর ব্যবসার কথা কি বলবো।

এখানে ব্যবসা করাই দায় হয়ে পড়েছে। বাতাসের সাথে বালু উড়ে দোকানে বসে থাকতে পারছি না। অপর ব্যবসায়ী নুর উদ্দিন বলেন, সকালে দেকান খুললে জারু দিয়ে বসলে এক ঘন্টার মধ্যে দোকানে প্রায় এক থেকে দেড় কেজির মতো বালু জমে যায়। বাতাসের সাথে বালু উড়ে চোখে মুখে চলে আসে। শ্বাস প্রশ্বাসে মারাক্তক সমস্যার সৃষ্টি হয়।

এছাড়া পাশেই রয়েছে ফাতেমা খানম কলেজ, হালিমা খাতুন কলেজ, জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গালর্স স্কুলসহ আরো বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কয়েক হাজার শিক্ষার্থী প্রতিদিন এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করছেন। এ বালুর ব্যবসার কারনে বহু পথচারী সহ শিক্ষার্থীর চোখের সমস্যা শ্বাস কষ্টসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে বলে জানান স্ব স্ব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।

জয়নগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জান্নাত, রাবেয়া, রাসেল, হারুনসহ আরো অনেক শিক্ষার্থী বলেন, শীত মৌসুমে বালু গুলো না উড়লেও গরম আসার সাথে সাথে একটু বাতাস হতেই বালু গুলো উড়তে থাকে। রাস্তা দিয়ে হাটার সময় হটাৎ করে বাতাস এসে চোখে মুখে বালু চলে আসে। নবম শ্রেনীর ছাত্রী আকলিমা বলেন, গত বছর বাতাসের সাথে বালু চোখে এসে আমার চোখের সমস্যা হয়েছে। এখন আমাকে প্রতিনিয়ত গ্লাস চোখে দিয়ে চলতে হয়।

অন্যদিকে ফাতেমা খানম কলেজের প্রভাশক জহিরুল ইসলাম বলেন, বাংলাবাজার একটি সুন্দর ও পরিছন্ন ছোটখাটো শহর। যা ভোলার উপশহর নামে পরিচিত। বর্তমানে শহরের যে সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা তৈরি হয়েছে বিশেষ করে স্বাধীনতা জাদুঘর, দৃষ্টি নন্দন মসজিদসহ বিভিন্ন স্থাপনা দেখতে প্রতিদিন কোন কোন পর্যটক এখানে আসে। ছোট্ট এই সুন্দর শহরটি দিনের পর দিন নোংরা ও অপরিছন্ন হচ্ছে একমাত্র বালুর ব্যবসার কারনে। শহরটিকে সুন্দর ও পরিছন্ন রাখতে শহরের ভিতর থেকে এ সকল বালুর ব্যবসা অন্যত্র সরিয়ে নেয়া উচিত বলে আমি মনে করি।

অন্যদিকে জেলার অন্য সব উপজেলা থেকে জেলা সদর হয়ে ঢাকা-বরিশাল-চট্রগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় বাস ট্রাক সহ প্রতিদিন শত শত যানবাহন এই উপ-শহর বাংলাবাজার হয়ে চলাচল করে। অথচ রাস্তার সাথেই থাকা বালুর কারনে যানবাহন চলাচলে মারাক্তক বিঘেœর সৃষ্টি হচ্ছে। ভোল-চট্টগ্রাম রুটের সিমান্ত পরিবহনের চালক আফসার উদ্দিন বলেন, গরমের দিনে গাড়ীর জানালা খোলা থাকে। এতে করে বাসাতের সাথে বালু উড়ে এসে চালক এবং যাত্রীদের নাকে মুখে চোখে পড়ছে। তাছাড়া বালুর কারনে হোন্ডা, রিক্সা, ইজিবাইকসহ ছোট ছোট বিভিন্ন ধরনের যানবাহ গুলোকে প্রতিদিনই কোন না কোন দুর্ঘটনায় পড়তে হচ্ছে বলে জানান যানবহন চালকরা।

বিষয়টি নিয়ে বালু ব্যবসায়ী বজলু হাওলাদারের সাথে কথা হলে তিনি জানান, আমার জায়গায় আমি ব্যবসা করি। আমিতো সরকারের জায়গায় ব্যবসা করি না। আর কোন অবৈধ ব্যবসা করি না। তারপরও জনগনের কথা ভেবে রাস্তার পাশ থেকে কিছু ব্যবসা সড়িয়ে নিয়েছি। বাকি ব্যবসাও কিছুদিনের মধ্যে সরিয়ে নেয়ারও চিন্তা ভাবনা চলছে।

এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন দৌলতখান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোঃ কামাল উদ্দিন বলেন, রাস্তার পাশে বালুর ব্যবসা সম্পুর্ণ অবৈধ। এই বালুর ব্যবসায় উৎখাতের ব্যপারে গত বছরও আমার কয়েকবার উদ্যোগ নিয়েছি। কিন্তু বালু ব্যবসায়ীরা প্রভাবশালী হওয়ায় উৎখাতের পরক্ষনেই আবার তাদের ব্যবসা আগের মতো শুরু হয়ে যায়।

শুধু বাংলাবাজারই নয়, ভোলার প্রবেশ মুখ খেয়াঘাট সড়কের দুপাশের রয়েছে প্রায় অর্ধশত রয়েছে বালুর ব্যবসা। তাছাড়া জেলার প্রতিটি উপজেলায়ই বিভিন্ন সড়কের পাশে ছোট বড় প্রায় তিন শতাধিক বালুর ব্যবসা রয়েছে।

এ ব্যাপারে ভোলা জেল প্রশাসক মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিক বলেন, মাত্র কয়েকদিন হলো আমি এই জেলাতে যোগদান করেছি। বিষয়টি সম্পর্কে আমি ততটা অবগত নই। তবে পুরো বিষয় পর্যালোচনা করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহন করার কথা কথা জানান তিনি।

এবিএন/আদিল হোসেন তপু/জসিম/নির্ঝর

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত