
ঢাকা, ২৬ মার্চ, এবিনিউজ : নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট ও এ্যাসেম্বলী হাউসে আগামী ২৭ মার্চ মঙ্গলবার ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপন করা হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ডে উদযাপনের চূড়ান্ত প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। সপ্তমবারের মতো নিউইয়র্ক স্টেটের রাজধানী আলবেনীতে বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা দিবস উদযাপিত হবে "বাংলাদেশ ডে" হিসেবে। আলবেনীর ক্যাপিটাল হিলে এদিন আবারো উড়বে বাংলাদেশের পতাকা। এদিন নিউইয়র্ক অ্যাসেম্বলি ও স্টেট সিনেটে বাংলাদেশের ৪৭ তম স্বাধীনতা দিবসের ওপর পৃথকভাবে রেজুলেশন গ্রহণ করা হবে।
অ্যাসেম্বলিম্যান লুইস সেপুলভেদা ও স্টেট সিনেটর জামাল বেইলী স্টেট অ্যাসেম্বলি ও সিনেট হাউজে তা উত্থাপন করবেন। স্টেট সিনেট ও এসেম্বলী অধিবেশনের রেজুলেশন দু’টিতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরা হবে। পবিত্র কোরআন তেলাওয়াত, গীতা ও বাইবেল পাঠের মধ্য দিয়ে সিনেট এবং এসেম্বলিতে অনুষ্ঠান শুরু হবে। এসময় বাংলাদেশ ও আমেরিকার জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশন করা হবে। সিনেট এবং এসেম্বলি গ্যালারি এদিন পুরোটাই সংরক্ষিত থাকবে শুধু বাংলাদেশীদের জন্য।
এদিকে, দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে গত ১৭ মার্চ শনিবার নিউইয়র্কে জ্যাকসন হাইটসের মামুন’স টিউটোরিয়ালে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপন কমিউনিটি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বাদশার সভাপতিত্বে এবং কমিটির মুখপাত্র আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদারের পরিচালনায় অ্যাসেম্বলিম্যান লুইস সেপুলভেদাসহ কমিটির নের্তৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন মামুন’স টিউটরিয়ালের প্রিন্সিপাল মূলধারার ম্যাথ টিচার শেখ আল মামুন, ব্যান্ডস’র প্রেসিডেন্ট সোলায়মান আলী, কমিটির মেম্বার সেক্রেটারী শাহেদ আহমদ, কোষাধ্যক্ষ মনজুর চৌধুরী জগলুল, সদস্য আবদুস শহীদ, মাহবুবুল আলম, এ ইসলাম মামুন।
সংবাদ সম্মেলনে ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি তুলে ধরা হয়। এসময় সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নেরর উত্তর দেন নের্তৃবৃন্দ। সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, অন্যান্যবারের মতো এবারও নিউইয়র্ক স্টেট সিনেট এবং এসেম্বলিতে বাংলাদেশ ডে উদযাপনের জন্য ব্যাপক কর্মসূচী গ্রহণ করা হয়েছে। পূর্ণ মর্যাদায় স্টেটের পক্ষ থেকে দু’পর্যায়ে অনুষ্ঠানমালা থাকবে। সিনেট ও এসেম্বলীতে দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় থাকবে রেজুলেশন, লাঞ্চ ও বিকালে চা চক্র। আয়োজন থাকবে শতাধিক অতিথির।
সংবাদ সম্মেলনে জানান হয়, বাংলাদেশ ডে কোন ব্যক্তি বা দলের অনুষ্ঠান নয়। এটি সমগ্র বাংলাদেশী-আমেরিকানদের সম্মানার্থে স্টেটের পক্ষ থেকে এক বিশেষ অনুষ্ঠান। দলমত নির্বিশেষে প্রবাসীরা বাংলাদেশ ডে’র নানা কর্মসূচিতে অংশ গ্রহণ করবেন। এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের কোন সিনেট বা এসেম্বলিতে বাংলাদেশ ডে উদযাপনের নজীর নেই বলে জানান হয় সংবাদ সম্মেলনে। তারা জানান, স্টেট এ্যাসেম্বলী হাউজ ও সিনেট হাউজের আনুষ্ঠানিকতা শেষে আলবেনী হলে প্রবাসী বাংলাদেশীদের সম্মানে এক অর্ভ্যথনা পার্টির আয়োজন করা হবে। এসময় বিভিন্ন জনকে সম্মাননা জানান হবে। আলবেনীতে ‘বাংলাদেশ ডে’ উৎসবে শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী যোগ দেবেন। ২৭ মার্চ মঙ্গলবার সকাল ৭টায় ব্রঙ্কসের ইউনিয়ন পোর্ট রোডের ফ্যামিলি ফার্মেসির সামনে থেকে আলবেনীর উদ্দেশ্যে বাস ছেড়ে যাবে।
এদিকে, নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত অনলাইন পত্রিকা ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম ফেইসবুক লাইভ টকশো ‘ইউএসএনিউজঅনলাইন জার্নাল’ এ গত ২৪ মার্চ শনিবার বাংলাদেশ ডে উদযাপনের বিস্তারিত কর্মসূচি প্রচারিত হয়। ইউএসএনিউজঅনলাইন.কম এবং সাপ্তাহিক জনতার কন্ঠ’র সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন সেলিমের উপস্থাপনায় ইউএসএনিউজঅনলাইন জার্নাল’ এ ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপন কমিউনিটি চেয়ারম্যান আবদুর রহিম বাদশা এবং কমিটির মুখপাত্র আইনজীবী মোহাম্মদ এন মজুমদার ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপনের বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেন।
উল্লেখ্য, এর আগে দিবসটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য গত ১২ মার্চ ব্রঙ্কসে বাংলা গার্ডেন পার্টি হলে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। সভায় অ্যাসেম্বলিম্যান লুইস সেপুলভেদার চীফ অব স্টাফসহ কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন। ব্যাপক আয়োজনে দিবসটি উদযাপনের জন্য কমিউনিটি নের্তৃবৃন্দকে নিয়ে গঠন করা হয়েছে একটি আহ্বায়ক কমিটি।
বিশিষ্ট রাজনীতিক আবদুর রহিম বাদশাকে চেয়ারম্যান এবং শাহেদ আহমদকে মেম্বার সেক্রেটারী করে ১৫ সদস্যের এ কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন : কোষাধ্যক্ষ মনজুর চৌধুরী জগলুল, সহ কোষাধ্যক্ষ শামীম আহমেদ, সদস্য মোহাম্মদ এন মজুমদার, আবদুস শহীদ, মাহবুবুল আলম, শামীম মিয়া, আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, আহবাব চৌধুরী, তৌফিকুর রহমান ফারুক, এ ইসলাম মামুন, ফরিদা ইয়াসমিন, রেক্সোনা মজুমদার এবং বুরহান উদ্দিন।
অন্যতম সদস্য বিশিষ্ট আইনজীবী মূলধারার রাজনীতিক মোহাম্মদ এন মজুমদার এ কমিটির মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন।
উল্লেখ্য, ঐতিহাসিক বাংলাদেশ ডে বিলটি পাশ হয় ২০১২ সালের ২৪ মার্চ। এই ঐতিহাসিক উদ্যোগটির প্রধান রূপকার ছিলেন ব্রঙ্কস থেকে নির্বাচিত সাবেক সিনেটর বর্তমান কাউন্সিলম্যান রুবিন ডিয়াজ। তাকে রেজুলেশন তৈরি করে সহযোগীতা করেন প্রবাসী বাংলাদেশীদের কাছে ‘লুইস ভাই’ হিসেবে পরিচিত এটর্নী লুইস সিপুলভেদা (বর্তমান এসেম্বলিম্যান)। তাদের সহযোগীতা করেন ব্রঙ্কস প্রবাসী বাংলাদেশী কমিউনিটির নের্তৃবৃন্দ।
ওই সময় বিলটি সিনেটে উত্থাপিত হলে সিনেটর রুবিন ডিয়াজ সিনেটে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিবরণ তুলে ধরেন। তিনি ১৯৭১ সালের মার্চে অপারেশন সার্চ লাইটের নামে গণহত্যা, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাসে বাংলাদেশীদের আত্মত্যাগ এবং পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশী মা-বোনদের সম্ভ্রমহানির কথা সবিস্তারে তুলে ধরেন। সেদিন মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে এই ঐতিহাসিক বিলটি সর্বসম্মতভাবে সিনেটে পাশ হয়।
বাংলাদেশ ডে রেজ্যুলেশন প্রস্তুতকারী এটর্নী লুইস সিপুলভেদা পরবর্তীতে এসেম্বলিম্যান নির্বাচিত হলে আলবেনীতে বাংলাদেশ ডে উদযাপনে আরো ব্যাপকতা পায়। ‘বাংলাদেশ ডে’ উদযাপনের প্রথম আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন মোহাম্মদ এন মজুমদার এবং মেম্বার সেক্রেটারী ছিলেন মরহুম জাকির খান।
এবিএন/ সাখাওয়াত হোসেন সেলিম/জসিম/নির্ঝর