ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ), ২৬ মার্চ, এবিনিউজ: সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খানকে মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসের অনুষ্ঠান থেকে ডেকে নিয়ে লাঞ্চিত করলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। আজ সোমবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকে উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে স্থানীয় জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের খেলার মাঠে আয়োজিত অনুষ্টানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবর্ধনা দেওয়ার পরপরই প্রকাশ্যে নেক্কার জনক এ ঘটনাটি ঘটান এমপি রতন।
এ ঘটনার পরপরই ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকসহ এলাকার সর্ব-স্তরের লোকজনের মধ্যে এ নিয়ে নিন্দার ঝড় বইতে থাকে। এরই প্রতিবাদে ওইদিন দুপুরে জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কের দুই পাশে প্রায় ঘন্টা ব্যাপী দাঁড়িয়ে থেকে ‘প্রতীকী প্রতিবাদ’ জানান ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। জানা গেছে, মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোমবার সকাল থেকেই ধর্মপাশা জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয় খেলার মাঠে বিভিন্ন কর্মসূচির আয়োজন করে উপজেলা প্রশাসন। উক্ত অনুষ্টানের প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সুনামগঞ্জ-১ আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন। অনুষ্টান চলাকালে সকাল সাড়ে নয়টার দিকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়।
সংবর্ধনা পর্ব শেষ করেই এমপি মোয়াজ্জেম হোসেন রতন মঞ্চ থেকে নেমে জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনের সড়কে গিয়ে দাঁড়িয়ে মঞ্চ থেকে ডেকে আনেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খানকে। সেখানে তিনি তাঁকে ডেকে এনে বিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিষয়াদি নিয়ে অকথ্য ভাষায় গাল মন্দ করতে থাকেন। এক পর্যায়ে এমপি রতন ওই শিক্ষককে পিটিয়ে হাড়-গুড় ভেঙে দিবেন বলেও হুমকি দেন। এ সময় উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশান, স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাগণ, উপজেলার বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টানে শিক্ষক-শিক্ষাথীসহ এলাকার শত-শত লোক উপস্থিত ছিলেন।
এ ব্যাপারে জনতা মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের নির্যাতিত প্রধান শিক্ষক আব্দুল মালেক খান বলেন, আমাদের এ বিদ্যালয়টি উপজেলা সদরে অবস্থিত এবং এটি ফলাফলের দিক দিয়েও উপজেলায় শীর্ষে অবস্থান করায় সরকার ওই বিদ্যালয়টিকে গত ২০১৪ সালে সরকারী করণের ঘোষণা দেয়া হয়। কিন্তু মাননীয় সাংসদ আমাদের ওই বিদ্যালয়টিকে সরকারী করণ না করার পক্ষে অবস্থান নেন এবং তিনি উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৬ কিলোমিটার দূরে তাঁর নিজ এলাকায় অবস্থিত বাদশাগঞ্জ পাবলিক উচ্চ বিদ্যালয়কে সরকারী করণ করার জন্য একটি ডিও লেটার দেন।
কিন্তু এমপি মহোদয়ের দেওয়া ওই ডিও লেটারটিকে চেলেঞ্জ করে আব্দুল মন্নাফ নামে আমাদের বিদ্যালয়ের এক ছাত্র অভিভাবক হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন দায়ের করেন। এর পর থেকেই এমপি মহোদয় আমিসহ আমার বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের প্রতি বৈরী আচরন করে আসছেন। ওই শিক্ষক আরো বলেন, আমার বিদ্যালয়ের প্রায় ৩ হাজার শিক্ষার্থীর দাবির প্রেক্ষিতে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিদ্যালয় সংলগ্ন স্থানে একটি ক্যান্টিন নির্মাণের উদ্যোগ নেন এবং ওই কেন্টিনটি এখানে নির্মান না করার জন্য এমপি মহোদয় আজ আমাকে একটি জাতীয় অনুষ্টান থেকে ডেকে এনে শত-শত মানুষের সামনে এভাবে অপমান অপদস্ত না করলেও পারতেন।
বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি আলমগীর কবীর বলেন, আমাদের এমপি সাহেব আজ এমন একটি অনুষ্টান থেকে ডেকে এনে উপজেলার সুনামধন্য এ শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধানকে এভাবে লাঞ্জিত করাটা অত্যন্ত দুঃখ জনক এবং এরই প্রতিবাদে বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা তাৎক্ষণিকভাবে এ নেক্কার জনক ঘটনার প্রতীকী প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং অনতিবিলম্বে এটি সুরাহা করা না হলে পরবর্তীতে এ নিয়ে আমরা বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি গ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি। তিনি আরও বলেন,আমাদের মাননীয় এমপি সাহেবেরে বিরুদ্ধে আরও একাধিক শিক্ষকে লাঞ্চিত করার অভিযোগ রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ফখরুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, উপজেলার সুনামধন্য একটি শিক্ষা প্রতিষ্টানের প্রধান শিক্ষককে একজন সাংসদ এভাবে প্রকাশ্যে লাঞ্চিত করার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এমপি সাহেবের এ ধরনের আচরনে আমাদেরকে দলীয় ভাবে এলাকাবাসীর কাছে অনেকটা হেয় প্রতিপন্ন হতে হচ্ছে। এটি দ্রুতই মীমাংসা করা প্রয়োজন বলে আমি মনে করি।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন তাঁর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগটি অস্বীকার করে বলেন, আমি ওই প্রধান শিক্ষককে ডেকে এন শুধু বিদ্যালয়ের মাঠটি নষ্ট করে কেন্টিনটি নির্মাণ না করার জন্য তাকে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে বলেছি। আমি তাকে কোনো ধরনের লাঞ্চিত করিনি।
এবিএন/ইমাম হোসেন/জসিম/তোহা