![অর্শ রোগের চিকিৎসা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/27/piles_132408.jpg)
ডা. একেএম ফজলুল হক সিদ্দিকী, ২৭ মার্চ, এবিনিউজ : পাইলস বা অর্শ মলদ্বারের একটি জটিল রোগ। এ রোগে মলদ্বারের বাইরে বা ভেতরে একপাশে বা চারপাশে একটি বা একাধিক গোলাকৃতি বা সুচাল গুটিকা দেখা দেয়। এ গুটিকাগুলোকে আমরা আঞ্চলিক ভাষায় ‘বলি’ বা ‘গেজ’ বলে থাকি। পায়খানা করার সময় এ বলিগুলো থেকে অভ্যন্তরীণ সমস্যার অনুপাতে কারো অধিক পরিমাণে কারো স্বল্প পরিমাণে রক্ত যায়। আবার অনেকের রক্ত যায়ই না, অনেকের ব্যথা থাকে আবার অনেকের থাকে না।
অর্শের কারণ :
ক. দীর্ঘমেয়াদী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়া।
খ. শরীরের অতিরিক্ত ওজন।
গ. মহিলাদের গর্ভাবস্থায় জরায়ুর ওপর চাপ পড়লে।
ঘ. লিভার সিরোসিস।
ঙ. মল ত্যাগে বেশি চাপ দেয়া।
চ. শাকসব্জি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার এবং পানি কম খাওয়া।
ছ. পরিবারে কারও পাইলস থাকা মানে বংশগত।
জ. ভার উত্তোলন, দীর্ঘ সময় বসে থাকা ইত্যাদি কারণে হয়ে থাকে। এছাড়া যাদের প্রায় চিকেন ফ্রাই, ড্রাই, ফাস্টফুড, সব ধরনের কাবাব যেমন- বাটি কাবাব, টিক্কা কাবাব, গ্রিল কাবাব, বিবিধ খাবারের অভ্যাস আছে।
লক্ষণসমূহ :
পায়খানা করার সময় অত্যধিক বা অল্প পরিমাণে রক্ত যেতে পারে। গুহ্য দ্বারে জ্বালাপোড়া এবং ফুলে যায়। টাটানি ও যন্ত্রণা। কাঁটাবিদ্ধ অনুভূতি। মাথা ধরা ও মাথা ভার বোধ। উরুদেশ, বক্ষ, নাভির চারপাশে ব্যথা ও মলদ্বারে ভার বোধ। কোমর ধরা ও কোষ্ঠবদ্ধতা।
আক্রান্তদের করণীয়:
১. কোষ্ঠকাঠিন্য যেন না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকা এবং নিয়মিত মলত্যাগ করা।
২. বেশি পরিমাণে শাকসব্জি ও অন্যান্য আঁশযুক্ত খাবার খাওয়া এবং পানি (প্রতিদিন ১২-১৮ গ্লাস) পান করা।
৩. সহনীয় মাত্রার অধিক পরিশ্রম না করা।
৪. প্রতিদিন ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমানো।
৫. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা।
৬. টয়লেটে অধিক সময় ব্যয় না করা।
৭. সহজে হজম হয় এমন খাবার গ্রহণ করা।
৮. ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোন চিকিৎসা গ্রহণ না করা।
৯. মল ত্যাগে বেশি চাপ না দেয়া।
১০. দীর্ঘমেয়াদী ডায়রিয়া ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে তার চিকিৎসা নেয়া।
১১. চিকিৎসকের পরামর্শমতো বিশ্রাম নেয়া।
১২. পেটে হজম হতে চায় না এমন খাদ্য বর্জন করা।
১৩. হাতুরে ডাক্তার বা কবিরাজ দিয়ে চিকিৎসা না করা।
১৪. অধিক মশলা জাতীয় খাদ্য পরিহার করা।
কী খাবেন :
শাকসব্জি, ফলমূল, সব ধরনের ডাল, সালাদ, দধি, পনির, গাজর, মিষ্টি কুমড়া, লেবু ও এ জাতীয় টক ফল, পাকা পেপে, বেল, আপেল, কমলা, খেজুর, ডিম, মাছ, মুরগীর মাংস, ভূসিযুক্ত (ঢেঁকি ছাঁটা) চাল ও আটা ইত্যাদি খাবারের কিছুটা অভ্যাস গড়ে তুলতে পারেন তাহলে কিছুটা প্রতিকার পাওয়া যাবে। আর যাদের অর্শ হয়ে গেছে তারা এই খাবারগুলির অভ্যাস অবশ্যই গড়ে তুলতে হবে।
কী খাবেন না :
গরু, খাসি ও অন্যান্য চর্বিযুক্ত খাবার, বিশেষ করে শুটকির ভুনা, চা, কফি, চিজ, মাখন, চকোলেট, আইসক্রিম, কোমল পানীয়, সব ধরনের ভাজা খাবার যেমনণ্ড পরোটা, লুচি, পুরি, পিঁয়াজু, সিঙ্গারা, চিপস ইত্যাদি খাবারগুলো বর্জন করতে হবে। চিকেন ফ্রাই, ড্রাই, ফাস্টফুড, সব ধরনের কাবাব যেমন- বাটি কাবাব, টিক্কা কাবাব, গ্রিল কাবাব, অতিরিক্ত ঝাল, ভুনা খাবার, কাঁচা লবণ, দেশি-বিদেশি হরেক রকমের বাহারি নামের অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করতে হবে।
অর্শ বা পাইলস রোগের চিকিৎসা :
অর্শ রোগীদের নিয়ে আছে অনেক চিকিৎসার নামে অনেক অপচিকিৎসা। এই বিষয়ে একটু সচেতন হয়ে আমাদের চলতে হবে। বিজ্ঞান ও বাস্তবসম্মত চিকিৎসা বিধান হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসায় রয়েছে এর সুন্দর ও স্বাস্থ্যসম্মত চিকিৎসা। যা কোন অপারেশনের প্রয়োজন হয় না। আমার চিকিৎসা জীবনে দেখেছি অনেকেই অপারেশন করেছে কিন্তু কিছুদিন পর আবার দেখা দিয়েছে। আবার অনেকের দেখেছি জটিল আকার ধারণ করতে। তাই বলব একটু চোখ-কান খোলা রেখে একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসকের পরামর্শ নিলে সুস্থ থাকবেন। মনে রাখবেন, অর্শ এমন একটি রোগ যা বারবার অপারেশন করা যায় না। কিছু অভ্যাস চেঞ্জ ও কিছু নিয়ম পালন করলে অবশ্যই এ রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।
(সংগৃহীত)
এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি