![প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে খুন করা হয় সজীবকে, আদালতে দুই জনের স্বীকারোক্তি](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/03/28/abnews-24.bbbbbbbbbbbbbbbbb_132590.jpg)
শরীয়তপুর, ২৮ মার্চ, এবিনিউজ: প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতেই রিক্সা চালক সজীব সরদার (১৯)কে খুন করা হয়েছে বলে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে আটককৃত ২ আসামী। আজ বুধবার বিকেলে পালং মডেল থানায় এক প্রেস ব্রিফিং এর মাধ্যমে এ কথা জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। গতকাল মঙ্গলবার শরীয়তপুর চীফজুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সজিবকে হত্যার কারণ ও হত্যার বিবরণ তুলে ধরে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি দিয়েছে গ্রেফতার হওয়া দুই আসামী শরীয়তপুর সদর উপজেলার তুলাসার ইউনিয়নের উপরগাঁও গ্রামের মৃত সামসুদ্দিন বেপারীর ছেলে রেজাউল হক পেবারী রেজাই (৪২) ও আব্দুল খালেক দেওয়ানের ছেলে জাহাঙ্গীর দেওয়ান (৩০)। গ্রেফতারকৃত আসামীদেরকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
থানা সূত্রে জানা যায়, গত ২১ মার্চ বুধবার রাত সারে ১১টার সময় গ্রেফতারকৃত আসামীদের সাথে আরো কয়েকজন মিলে পূর্ব পরিকল্পিতভাবে উপরগাঁও এলাকার মোতালেব খার ফসলি জমিতে গলা কেঁটে ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে জখম করে সজিব সরদারকে হত্যা করা হয়। ২২ মার্চ সকালে সজীবের মৃতদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। এ বিষয়ে নিহত সজীবের পিতা আব্দুল কুদ্দুস সরদার ২৩ মার্চ ১০ জনকে আসামী করে পালং থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলার এজাহারে কুদ্দুস সরদারের প্রতিবেশী স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তি আলহাজ মুন্সি মতিউর রহমানকে প্রধান আসামী করা হয়।
সজীব খুন হওয়ার পর থেকেই স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয় যে, মতিউর রহমান ওরফে মতি মুন্সিকে ফাঁসাতেই তার প্রতিপক্ষ এ হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। মামলায় এজাহারভূক্ত আসামীদের বাইরেও হত্যান্ডের মূল রহস্য উদঘাটনের জন্য পুলিশ ভিন্নভাবে মামলার তদন্ত শুরু করেন। এক পর্যায়ে সন্দেহভাজন রেজাউল বেপারী ও জাঙ্গীর দেওয়ানকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলে তারা হত্যাকান্ডের সাথে জরিত থাকার কথা স্বীকার করে আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, আধুনিক প্রযুক্তি, মোবাইল নেটওয়ার্ক ট্রাকিং ও সোর্সের সহায়তায় আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হন তারা। আসামীদের শরীয়তপুর চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মুক্তা রাণী ও কানিজ তানিয়া রূপার আদালতে হাজির করা হয়। আসামীরা আদালতে তাদের অপরাধ স্বীকার করে ফৌজদারী কার্যবিধি ১৬৪ ধারা অনুযায়ী হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করে।
উল্লেখ্য, দীর্ঘদিন যাবৎ শরীয়তপুর পৌরসভার ৯ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মুন্সি মতিউর রহমান ও একই এলাকার আনোয়ার হোসেন সরদারের সাথে এলাকার আধিপত্যসহ বিভিন্ন বিষয়ে দ্বন্দ চলে আসছিল। এ নিয়ে একাধিকবার রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ এবং মামলা মোকদ্দমা হয়। মতি মুন্সি-আনোয়ার সরদারের দ্বন্দের সাথে নতুন করে যোগ হয় একই এলাকার হাফেজ হাফিজুর রহমান মল্লিক ওরফে পাংখা হুজুর ও কুদ্দুস সরদার। তাদের সাথেও জমিজমা নিয়ে দ্বন্দ শুরু হয় মতি মুন্সির। এই দ্বন্দে পাংখা হুজুর ও কুদ্দুস সরদারের পক্ষ অবলম্বন করেন আনোয়ার সরদার। মতি মুন্সিকে ঘায়েল করতে আনোয়ার সরদারের সাথে হাত মিলায় শীর্ষস্থানীয় দুইজন রাজনৈতিক নেতা। ইতিমধ্যে, মতিমুন্সিকে সমাজে হেয় প্রতিপন্ন করতে নানাভাবে অপমান অপদস্ত করা হয়।
সর্বশেষ, গত ২১ মার্চ সূক্ষè পরিকল্পনার মাধ্যমে মতি মুন্সিকে ফাঁসাতে মধ্যযুগীয় নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়ে হতদরিদ্র কুদ্দুস সরদারের নিষ্পাপ কিশোর সন্তান সজীবকে কুপিয়ে ও জবাই করে হত্যা করা হয়। পুলিশ জানিয়েছে, এই নির্মম হত্যাকান্ডের সাথে ৫ সদস্যের একটি কিলিং মিশন কাজ করেছে। তবে তাদরে সহায়তা ও পরিকল্পনায় ছিল আরো অনেকে। তাদের ধরতে কাজ করছে শরীয়তপুর পুলিশের কয়েকটি বিচক্ষন টিম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পালং মডেল থানার এস আই রূপু কর বলেন, ২২ মার্চ সকালে একটি হত্যাকান্ডের খবর পেয়ে পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল ঘটনাস্থল পরিদর্শণ করি। এরপর মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য প্রেরণ করা হয়। ২৩ মার্চ ১০ জনকে আসামী করে থানায় মামলা দায়ের করে নিহতের পিতা। আমাকে মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হলে আমি তদন্ত শুরু করি।
আমার সোর্সের সহায়তায় এজাহারভূক্ত আসামীদের বাইরে সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করলে তারা হত্যাকান্ডে জরিত থাকার কথা স্বীকার করে। আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের পর তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা জানিয়েছে, হত্যাকান্ডে ৫ সদস্যের একটি গ্রুপ সরাসরি কাজ করেছে। তবে পরিকল্পনায় জরিত রয়েছে আরো অনেকে। এস আই রূপু কর আরো বলেন, আটককৃতরা মতি মুন্সিকে সায়েস্তা করতেই সজীবকে তারা হত্যা করেছে বলে জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে।
পালং মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, হত্যাকান্ডের মোটিভ খুঁজতে গিয়ে আমরা এজাহারভূক্ত আসামীদের বাইরেও তদন্ত চালাই। তাতে সন্দেহভাজন দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হই এবং তারা হত্যাকান্ডের সাথে জরিত থাকার কথা স্বীকার করে। তাদের সাথে এ হত্যাকান্ডে অপরাপর আরো তিনজন সহ পরিকল্পনাকারিদের নামও স্বীকার করে। আমরা প্রত্যেক অপরাধীকে আটকের চেষ্টা অব্যাহত রেখেছি।
এবিএন/কাজী নজরুল ইসলাম/জসিম/তোহা