বৃহস্পতিবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১ ফাল্গুন ১৪৩১
logo

কিসিং ডিজিজ থেকে রক্ষা করবে হোমিওপ্যাথি

কিসিং ডিজিজ থেকে রক্ষা করবে হোমিওপ্যাথি

ঢাকা, ২৯ মার্চ, এবিনিউজ : যীশু খ্রিস্টের জন্মের প্রায় দেড় হাজার বছর আগের কথা। পৃথিবীর ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সংযোজন করেছিলেন আমাদেরই এক পূর্ব পুরুষ ও পূর্ব নারী। গভীর আশ্লেষে তারা পরস্পরের মুখে চুম্বন করছিলেন। ভালবাসার মানুষকে আদর করে চুমু খাওয়ার সেই সূত্রপাত। ইতিহাস সে কথায় বলছে। সময় বয়ে চলেছে আপন গতিতে। বিগত সাড়ে তিন হাজার বছরে সূর্যের এই সবুজ গ্রহের অনেক কিছুই আমূল বদলে গেছে। চুম্বনের মাধ্যমে নরনারীর সম্পর্ক উত্তরণের যে ইতিহাসের সূত্রপাত হয়েছিল ভারতীয় উপমহাদেশে, তাকেই সাদরে গ্রহণ করে নিল পৃথিবীর সব দেশের মানুষ। তবে চুমু খাওয়ার ব্যাপারে প্রথমে উৎসাহী হয়েছিল রোমানরা। টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যানথ্রোপলজি বিভাগের প্রধান প্রফেসর ভন ব্রায়ান্ট জুনিয়রের এক সাম্প্রতিক গবেষণাপত্র থেকে জানা গেছে যে চুম্বনে উত্তরণের আগে মানুষ তার প্রিয় সঙ্গীকে সোহাগ জানাত নাকে নাক ঘঁষে। আর চুমু খাওয়ার নানা অর্থ স্থির করেছিল সেকালের রোমানরা। বন্ধু বা বয়োঃজ্যেষ্ঠ অথবা দেব দেবীকে সম্মান জানাতে এক ধরনের চুম্বন, শিশু সন্তান বা ছোটদের আদর করতে আর এক ধরনের চুম্বন, প্রেমাষ্পদকে ভালবাসা জানাতে একরকম চুম্বন, আবার শরীরী সম্পর্ক পৌঁছানোর আগে গভীর গাঢ় চুম্বন। দেশে দেশে এই রোম চুম্বনের নানারীতি আজও চলছে, জানিয়েছেন প্রফেসর ব্রায়ান্ট। তবে শুধু প্রফেসর ব্রায়ান্ট নন, বিভিন্ন দেশের বিজ্ঞানীরা গবেষণা করেছেন চুমু খাওয়ার ভালমন্দ দিক নিয়ে। ১৯৯৭ সালে প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা দেখেছেন যে চুম্বনের সময় আমাদের মস্তিষ্কে অক্সিটোসিন হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়। ফলে একটা ভাললাগার অনুভূতিতে ভরে ওঠে শরীর মনে। সারাদিনই মনটা থাকে ফুরফুরে। কিন্তু উপর্যুপুরি চমুর জন্য ঠোঁট ব্যাকুল থাকে। এর পেছনেও আছে নানা নিউরো হরমোনের খেলা। চুম্বনের সময় আমাদের মুখের ভিতরে এবং ঠোঁটের চারপাশে এমন কিছু রাসায়নিক নিঃসৃত হয় যে একটি চুমুতে মন ভরে না।

কিসিং ডিজিজ কিভাবে হয় :

ইনফেকশাস মনো-নিউক্লিওসিস বা কিসিং ডিজিজ রোগটা ছড়িয়ে পড়ার একমাত্র রাস্তা চুমু। আমাদের দেশে কম হলেও বিদেশে এই কিসিং ডিজিজের প্রকোপ অনেক বেশি। বিশেষত শীতের দেশের সদস্য তরুণ-তরুণীদের মধ্যে চুম্বনের অসুখ প্রায়শই দেখা যায়। ইবি ভাইরাস, যা আমাদের মুখের লালায় বাসা বাঁধে প্রগাঢ় চুম্বনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে অন্যজনের মুখ গহ্বরে। ইবি ভাইরাস এর প্রকোপে সৃষ্টি হয় ইনফেকশাস মনো নিউক্লিওসিস ডিজিজের। এই অসুখের উপসর্গের মধ্যে প্রধান গা ম্যাজ ম্যাজেভাব, জ্বর, গলা, ব্যথা, মাথা ব্যথা ইত্যাদি। কারও আবার গলার ভিতরে সাদাটে প্যাচ হতে পারে, বিশেষত টনসিল গ্ল্যান্ডের ওপর। অনেক সময় এই ডিজিজকে ডিপথেরিয়া বলে ভুল হতে পারে। তবে পরীক্ষা করে বোঝা যায় অসুখটা ডিপথেরিয়া নয়, চুমুর অসুখ। ছোঁয়াচে এই কিসিং ডিজিজের জীবাণুরা স্যালাইভাতে বাসা বেঁধে থাকে। তাই কপাল বা গালে চুমু খেলে সমস্যা হয় না। এ অসুখের একটা ভয়ানক দিক আছে, যা জেনে রাখা ভাল, তবে অযথা ভয় পাবেন না। কারওর কারওর ক্ষেত্রে লালাগ্রন্থি বা স্যালাইভারি গ্ল্যান্ডের মধ্যে কিসিং ডিজিজ সৃষ্টিকারী ইবি ভাইরাস থেকে যেতে পারে। এক্ষেত্রে সুদূর ভবিষ্যতে, ছেলেটি বা মেয়েটির ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার একটা ক্ষীণ সম্ভাবনা থাকে।

মুখে মুখ লাগিয়ে চুমু খেলে সত্যিই কি কি অসুখ বিসুখের সম্ভাবনা থাকে : সারাদিনই হ্যাঁচ্চো হ্যাঁচ্চো, গা-টাও একটু গরম গরম, এই অবস্থাতেই চুম্বন-ব্যস রাইনো ভাইরাস চলে গেল প্রেমাস্পদের শরীরে। পর দিন থেকে তার হ্যাঁ-হ্যাঁচ্ছো, হ্যাঁচ্ছো আর জ্বর জ্বর। হ্যাঁ সাধারণ সর্দিজ্বর সৃষ্টিকারী রাইনো ভাইরাস এবং ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস এ রকমই ছোঁয়াছে। এ ছাড়া পেটের অসুখ সৃষ্টিকারী রোটা ভাইরাস এবং নরওয়াক ভাইরাসও স্যালাইভাতে থাকে। সুতরাং কোনও পেটরোগা মানুষ যদি তার ভালবাসার মানুষকে গাঢ় চুম্বন করেন, মনে রাখবেন তিনিও দু’দিন পর থেকেই পেটের সমস্যায় ভুগবেন। এছাড়া মাড়ির অসুখ জিঞ্জিভাইটিস (মাড়িফোলা), জিভের আলসার গ্লসাইটিস, টনসিলাইটিস এসব অসুখের সময় জীবাণুরা আমাদের মুখের স্যালাইভাতে এসে গিজ গিজ করে। এই অবস্থায় মুখ চুম্বন করলে ভাইরাস ব্যাক্টেরিয়াদের পোয়াবারো। ছড়িয়ে পড়ে এক শরীর থেকে অন্য শরীরে। আমাদের লালায় কমেনসাল ফ্লোরা নামে এক ধরনের জীবাণু থাকে। স্বাভাবিক অবস্থায় এরা কোনও সমস্যা সৃষ্টি করে না। তবে যদি মুখে বা জিভে কোনওভাবে আঘাত লেগে কেটে কুটে যায়, তাহলে এই সমস্যা ডেকে আনতে পারে। কখনও কখনও মুখের এই ক্ষত বেশ কিছু দিনই ভোগায়, ব্যথা করে। এ ব্যাপারে আরও একটা কথা মনে রাখা ভাল যে স্বাভাবিক অবস্থায় মুখ চুম্বনের কোনও বিধি নিষেধ না থাকলেও জিভে কামড় লেগে বা ব্রাশের খোঁচা লেগে মুখের ভিতরে কেটে কুটে গেলে চুম্বনের সময় ভালবাসার মানুষটির শরীর থেকে যে কোনও ইনফেকশনই চট করে আক্রমণ করতে পারে। প্রগাঢ় চুম্বনের আগে এই ব্যাপার স্যাপারগুলো সম্পর্কে একটু খেয়াল রাখলে ভাল হয়। এছাড়া হাম, চিকেন পক্স, ডিপথেরিয়া, মাম্পস ইত্যাদি জীবাণূঘটিত অসুখ বিসুখগুলো চুম্বনের সময় চট করে ছড়িয়ে পড়ে। বিশেষত শিশুদের ক্ষেত্রে। তাই বাচ্চাকে আদর করার সময় এই ব্যাপারগুলো মাথায় রাখলে ভাল হয়। ওরাল হাইজিন ভাল না থাকলে নানা রকম সমস্যার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই সুন্দর চুমুর জন্য ব্রাশ করুন দিনে দু-তিনবার এবং মুখের সামগ্রিক স্বাস্থ্য ভাল রাখার চেষ্টা করুন।

হোমিওপ্যাথিক প্রতিবিধান :

এই সমস্ত রোগে হোমিওপ্যাথিক ওষুধ অত্যন্ত কার্যকরী। লক্ষণ ভেদে নিম্নলিখিত ওষুধ ব্যবহৃত হয়। যথা ১) একোনাইট ন্যাপ ২) আর্সেনিক এলবাম ৩) ব্রায়োনিয়া ৪) রাসটক্স ৫) ইউপেটোরিয়াম পার্ফো ৬) জেলসিমিয়াম ৭) পালসেটিলা ৮) ইপিকাক ৯) মার্কুরিয়াস সল ১০) নাইট্রিক এসিড ১১) ফাইটোল্লাক্কা ১২) সালফার ১৩) হেক্সা লাভা, (১৪) হিপার সালফার, (১৫) এন্টিম ক্রুড, (১৪) নাক্সভমিকা উল্লেখযোগ্য। তারপরেও চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ সেবন করা উচিত নয়।

এবিএন/ফরিদুজ্জামান/জসিম/এফডি

ad

প্রধান শিরোনাম

  • সর্বশেষ খবর
  • সর্বাধিক পঠিত