![উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট চাই: প্রধানমন্ত্রী](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/01/pm_133158.jpg)
চাঁদপুর, ০১ এপ্রিল, এবিনিউজ : উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষায় নৌকায় ভোট দেয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘নৌকা আপনাদের মার্কা। উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকা মার্কায় ভোট চাই। ভোট দিবেন কিনা দু’হাত তুলে ওয়াদা করুন।
চাঁদপুর স্টেডিয়ামে স্থানীয় আওয়ামী লীগ আয়োজিত এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। আজ রবিবার বিকেল তিনটা ১০ মিনিটে তিনি জনসভা মঞ্চে আসেন।
এ সময় চাঁদপুরের বিখ্যাত ইলিশ মাছ দিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করে নেন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নাছির উদ্দিন আহমেদ ও সাধারণ সম্পাদক আবু নঈম পাটোয়ারি দুলাল।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ উন্নয়নের রাজনীতি করে অন্যরা না। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দিলে গ্রাম পর্যায় থেকে উন্নয়ন হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ধিক্কার জানাই বিএনপি ও খালেদা জিয়াকে, যারা ওই স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধীদের হাতে তুলে দিয়েছিল এদেশের পতাকা। অবশ্য তাদের লজ্জা-শরম কম, তারা নিজেরাইতো বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলেই দেশের উন্নয়ন হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সেবা করার সুযোগ পেয়েছি, জনগণের সেবা করছি। নৌকায় ভোট দিলে কেউ খালি হাতে ফেরে না। বাঙালি মাতৃভাষার অধিকার পেয়েছে, স্বাধীনতা পেয়েছে। আওয়ামী লীগ দেশ গড়ে তোলে, উন্নয়ন করে। কিন্তু তারা ধ্বংস করে, লুটে খায়। সন্ত্রাস, বোমা হামলা, গ্রেনেড হামলায় তারা পারদর্শী। তারা মানুষকে আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে।’
‘পঁচাত্তরের পর যারাই ক্ষমতায় এসেছিল, কেউ-ই উন্নয়ন করেনি। নিজেরা লুটপাট করেছে, চুরি করেছে, দুর্নীতি করেছে। এবার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের মামলায় কারাগারে (বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া) সাজা খাটছেন।’
সার্বিকভাবে দেশের উন্নয়নে সরকারের কর্মসূচি তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য স্বাধীনতার সুফল বাংলার ঘরে ঘরে পৌঁছানো। সে লক্ষ্যে আমরা কাজ করছি। আমরা শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দিচ্ছি, নিজের পায়ে দাঁড়ানোর জন্য শিক্ষার্থীদের বৃত্তি, এমনকি উচ্চশিক্ষায়ও বৃত্তি দিচ্ছি। মায়েদের মোবাইল ফোনে বৃত্তির টাকা পৌঁছে যাচ্ছে।’
সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আজ মোবাইল ফোন সবার হাতে হাতে। আওয়ামী লীগই সবার হাতে হাতে মোবাইল ফোন তুলে দিয়েছে। এখন প্রবাসে আত্মীয়-স্বজন ছাড়াও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলতে পারেন সবাই। কম্পিউটার শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছি। এখন আমরা স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করবো, জেলায় জেলায় আইটি পার্ক হবে। সেখানে কর্মসংস্থানও হবে।’
দারিদ্র্য বিমোচন সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দারিদ্র্য বিমোচনের লক্ষ্যে বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতার ব্যবস্থা করেছি। মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা বাড়িয়েছি। গ্রামের মানুষের উন্নয়নে কর্মসংস্থান ব্যাংক করে দিয়েছি, যেন বিনা জামানতে ঋণ নেওয়া যায়। স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন করেছি। কমিউনিটি ক্লিনিক করেছি, সেখান থেকে মানুষ ৩০ প্রকারের ওষুধ পাচ্ছে। নদীভাঙনে যারা ঘর হারিয়েছেন, তাদের ঘর করে দিয়েছি। কেউ গৃহহারা থাকবে না। জাতির পিতা গুচ্ছগ্রাম করেছিলেন, আমরা তা করে দিচ্ছি তার পথ অনুসরণ করে। আমি চাই না ভিক্ষুক থাকুক। কারও কাছে হাত পেতে নয়, বাঙালি বিজয়ী জাতি হিসেবে চলবে মাথা উঁচু করে।’
২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিতে দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্র ছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তখন আমি আমার দেশের সম্পদ গ্যাস বেচতে রাজি হইনি বলে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। আর খালেদা জিয়া দেশের সম্পদ বিক্রির মুচলেকা দিয়ে ক্ষমতায় আসে।
সন্তানেরা যেন বিপথে না যায়, সেজন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যেন জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসে জড়িয়ে না পড়ে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠাই সরকারের লক্ষ্য উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাঁদপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করে দেবো, নদীবন্দর করে দেওয়া হবে। ২০২০ সালে আমরা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন করবো, ২০২১ সালে এ দেশকে আমরা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আর ২০৪১ সালের মধ্যে গড়ে তুলবো উন্নত-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলা। এজন্য সরকারের ধারাবাহিকতা জরুরি। যারা যুদ্ধাপরাধীদের হাতে জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল এবং সংসদে বসিয়েছিল তাদের হাতে দেশ নিরাপদ নয়। তাই নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। শিক্ষক, অভিভাবক মা-বাবাদের বলবো, আপনারা সচেতন থাকবেন। কেউ যেন মাদক, সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের পথে না যায়।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে উন্নীত হয়েছে। বিশ্ব দরবারে আমাদের মাথা উঁচু হয়েছে। আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে তখন উন্নয়নের ধারাবাহিকতা থাকে।
তিনি বলেন, ২০১৪ সালে আমরা পুনর্নির্বাচিত হয়েছিলাম বলেই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে পেরেছি। তা যদি হয় তাহলে সরকারের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে।
একমাত্র আওয়ামী লীগই উন্নয়নের রাজনীতি করে, অন্যরা নয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নৌকামার্কায় ভোট দিলে গ্রাম পর্যায়ে উন্নয়ন হবে।
পদ্মা ও মেঘনা নদী তীরবর্তী জেলা চাঁদপুরের মৎস্যজীবী ও জেলেদের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সব মানুষের উন্নয়নের জন্য কাজ করে যাচ্ছি। যখন ইলিশ শিকার বন্ধ থাকে তখন আমরা জেলেদের মাসে ৪০ কেজি করে চাল দেই।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা চাই দেশের মানুষের উন্নয়ন। আমরা যা যা ওয়াদা করেছি সব কিছু ঠিকমতো পালন করে যাচ্ছি। ১৬ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছি।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী ২০২১ সালের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী, ২০২০ সালে বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী পালন ও ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে পরিণত করার অঙ্গীকার করেন।
জনসভায় বিএনপির উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এতিমদের জন্য টাকা এনে তারা সে টাকা মেরে দিয়েছে। তারেক রহমানের বিরুদ্ধে টাকা পাচারের অভিযোগে বিদেশে মামলা হয়েছে। আমরা সে টাকা সেখান থেকে ফেরত এনেছি।
তিনি অভিভাবকদের উদ্দেশে বলেন, আপনাদের সন্তান কোথায় যায়, কেন যায় সে বিষয়ে আপনারা লক্ষ্য রাখবেন। তরুণ প্রজন্মকে মাদক ও জঙ্গিবাদ থেকে দূরে রাখতে হবে। এজন্য অভিভাবকদের ভূমিকা রাখতে হবে।
তিনি সরকারের ধারাবাহিকতা রক্ষার জন্য নৌকা মার্কায় ভোট চান। এজন্য উপস্থিত জনতাকে দুই হাত তুলে অঙ্গীকার করতে বললে জনতাও দুই হাত তুলে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেন।
চাঁদপুরবাসীর জন্য ৪টি বড় আশ্বাস প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরের উন্নয়নে আপনাদের কোনও দাবি করা লাগবে না। নৌকা মার্কায় ভোট দেন, আমরা নিজেরাই চাঁদপুরের সব উন্নয়ন করে দেবো। এখানে পর্যটনের প্রচুর সুযোগ আছে। বিশেষ করে পদ্মা ও মেঘনা যেখানে মিলেছে নৌভ্রমণের জন্য এ জায়গা সব থেকে সুন্দর। সেই জায়গাটা দেখতে দেশবাসীকে সুযোগ করে দেব চাঁদপুরে পর্যটন কেন্দ্র হবে।
এ সময় প্রধানমন্ত্রীর পাশে দাঁড়ানো ডা. দীপুমনিকে দেখিয়ে বলেন, আপনাদের এই জন প্রতিনিধি একজন ডাক্তার। সে আমার কাছে আগেই চাঁদপুরে একটা মেডিকেল কলেজ করে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। কথা দিয়েছি, চাঁদপুরে মেডিক্যাল কলেজ করে দেবো।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, চাঁদপুরে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল করে দেব। সেই সাথে পর্যটনের ব্যবস্থা করে দেব। নৌবন্দরও করে দেব।
জনসভা ঘিরে সকাল থেকে আসা নেতাকর্মীরা স্লোগানে স্লোগানে গোটা স্টেডিয়াম মুখরিত করে তোলেন। প্রধানমন্ত্রী হাত নেড়ে তাদের শুভেচ্ছার জবাব দেন।
পরে প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরে ৪৮টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন।
এর আগে ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে বেলা পৌনে ১১টার দিকে প্রধানমন্ত্রী চাঁদপুরের হাইমচরে পৌঁছান। সেখানে তিনি বাংলাদেশ স্কাউটসের ষষ্ঠ জাতীয় কমডেকার সম্মেলন উদ্বোধন করে বক্তব্য দেন।
এরপর সার্কিট হাউসে বিশ্রাম নিয়ে বিকেলে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দেন।
দীর্ঘ আট বছর পর প্রধানমন্ত্রীর এই সফর উপলক্ষে চাঁদপুরে সাজসাজ রব বিরাজ করছে। তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে আগামী সংসদ নির্বাচনে মনোনয়ন প্রত্যাশীসহ নেতাকর্মীরা ব্যানার, ফেস্টুন, তোরণ ও বিলবোর্ড দিয়ে সড়ক সাজিয়েছেন। জেলায় তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
এবিএন/জনি/জসিম/জেডি