![লালমনিরহাটে ইরি-বোরো চাষাবাদে ব্যস্ত কৃষকরা](https://archive.abnews24.com/assets/images/news_images/2018/04/02/lalmonirhat-krishok_133311.jpg)
লালমনিরহাট, ০২ এপ্রিল, এবিনিউজ : লালমনিরহাটে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকটা আগে-ভাগেই ইরি বোরো চাষাবাদে নেমে পড়েছে জেলার কৃষকরা। চারা রোপনের কাজ শেষ হলেও কৃষকরা এখন ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। কৃষি বিভাগ মনে করছেন, এবারের আবহওয়া এখনো ইরি-বোরো চাষাদের জন্য অনুকুল অবস্থায় রয়েছে। ফসল ঘরে উঠা পর্যন্ত যদি কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দেয় আর আবহওয়া যদি অনুকুলে থাকে তাহলে কৃষকরা তাদের বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারবে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, গত বছরের বন্যায় জেলায় আমন ধানের ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। সব চেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে কৃষি ও মৎস্য বিভাগের। হাজার হাজার হেক্টর জমি বন্যার পানিতে ডুবে থাকায় ওই জমি গুলোর ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ফলে জেলার হাজারো কৃষক প্রত্যক্ষ ও প্ররোক্ষ ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার অনেকটা আগে ভাগেই কৃষকরা ইরি-বোরো চাষাবাদে নেমে পড়েছে।
কৃষি বিভাগ থেকে চলতি ইরি-বোরো চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ৪৯ হাজার ৫ শত ৫৫ হেক্টর জমি নির্ধারন করা হলেও বাস্তবে চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে গেছে। প্রতি বছর জেলার অনেক জমি পতিত অবস্থায় পড়ে থাকলেও এবার কোন জমি পতিত অবস্থায় নেই। ফলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে অনেক বেশি ধান জেলায় উৎপাদন হওয়ার সম্ভবনা হয়েছে।
জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বিলুপ্ত ছিটমহল আঙ্গোরপোতা-দহগ্রাম এলাকার কৃষক আসাদুল ইসলাম জানান, গত বছর তিনি স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ১৮ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে ৭ বিঘা জমিতে চুক্তি ভিত্তিক আমন চাষাবাদ করে ছিলো কিন্তু ভয়াবহ বন্যায় ১ মন ধানও তার উৎপাদন হয়নি। উল্টো জমির মালিককে ১৭ হাজার চুক্তির টাকা দিতে হয়েছে। সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে এবার দুইটি গরু বিক্রি করে ৯ বিঘা জমিতে ইরি-বোরো চাষাবাদ করেছে। এখন পর্যন্ত ক্ষেতের অবস্থা ভালো রয়েছে। এখন অগাছা পরিস্কার করেছে। কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পাবেন বলে জানান কৃষক আসাদুল ইসলাম।
একই রকম কথা বলেন জেলার হাতীবান্ধা উপজেলার চর গড্ডিমারী গ্রামের সফিয়ার রহমান, অমিত হাসান ও ফখরুল ইসলাম। তারা জানান, ইরি-বোরো চাষাবাদের চারা রোপন শেষে তারা এখন পানি সেচ, সার দেয়া ও ক্ষেতের অগাছা পরিস্কার করছেন। প্রকৃতি যদি বৈরী অচারণ না করে আর পোকার আক্রমন যদি কম থাকে তাহলে তারা ইরি-বোরো চাষে সফলতা অর্জন করবেন।
হাতীবান্ধা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন জানান, গত বন্যায় জেলার মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে হাতীবান্ধা উপজেলা। এ উপজেলার ১২ টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০ ইউনিয়নেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাই কৃষকরা বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নিতে অনেকটা আগে ভাগে ইরি-বোরো চাষাবাদ শুরু করে দিয়েছে।
লালমনিরহাট কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক বিধু ভূষণ রায় জানান, ইতোমধ্যে ইরি-বোরোর চারা রোপনের কাজ শেষ করে ফেলেছে কৃষকরা। এখন ক্ষেতের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কৃষি বিভাগের মাঠ কর্মীরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। কোন দুর্যোগ দেখা না দিলে আমরা ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছড়িয়ে যাবো।
এবিএন/ আসাদুজ্জামান সাজু/জসিম/নির্ঝর